আপনজন ডেস্ক: দিল্লির এক মহিলা দাবি করেছেন, বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে অযোধ্যায় মসজিদ নির্মাণের জন্য যে বিকল্প জমি দেওয়া হয়েছে তা তার পরিবারের এবং তিনি এর দখল পেতে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হবেন। তবে রানি পাঞ্জাবি নামে ওই দাবি অস্বীকার করে অযোধ্যার ধন্যিপুরে মসজিদ নির্মাণের জন্য গঠিত ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের প্রধান জুফার ফারুকি বলেছেন, ২০২১ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট তার দাবি খারিজ করে দিয়েছে।
সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারপার্সন ফারুকি জানিয়েছেন, চলতি বছরের অক্টোবর থেকে মসজিদ নির্মাণ-সহ গোটা প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
দিল্লির বাসিন্দা রানি পাঞ্জাবির দাবি, ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর অযোধ্যার ধন্যিপুর গ্রামে সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডকে প্রশাসন যে পাঁচ একর জমি দিয়েছে, তা ২৮ একর জমির অংশ। ৩৫ একর জমি তাঁর পরিবারের মালিকানাধীন।
রানি পাঞ্জাবি সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, যে তাদের কাছে মালিকানার সমস্ত নথি রয়েছে এবং তিনি এটি পেতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন।
রানির মতে, তার বাবা জ্ঞানচাঁদ পাঞ্জাবিকে দেশভাগের পরে পাঞ্জাব ছেড়ে যেতে হয়েছিল এবং তিনি ফৈজাবাদে (বর্তমানে অযোধ্যা জেলা) চলে যান যেখানে তাকে ২৮ জন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। যে জমি তাকে ফেলে যেতে হয়েছিল তার পরিবর্তে ৩৫ একর নেন।
তিনি জানান, ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তাঁর পরিবার ওই জমি চাষের জন্য ব্যবহার করেছিল, তারপর তাঁর বাবার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে এবং তাঁর চিকিৎসার জন্য দিল্লিতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু হয়।
এরপর থেকে ক্রমান্বয়ে ওই জমি বেদখল হয়ে যায়। রানি আরও বলেন, মসজিদ নির্মাণে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। তবে তিনি চান প্রশাসন তাঁর প্রতি ন্যায়বিচার করুক।
উল্লেখ্য, ইসলামে কোন বিতর্কিত জমিতে মসজিদ নির্মাণ জায়েয নয়। তবে ফারুকী বলেন, প্রকল্পে কোনো বাধা নেই। জমির উপর মহিলার দাবি সম্পর্কে যতদূর জানা যায়, এলাহাবাদ হাইকোর্ট ইতিমধ্যে ২০২১ সালে এটি খারিজ করে দিয়েছে। কিছু ছোটখাটো সমস্যা রয়েছে যা সমাধান করা হচ্ছে এবং আশা করা হচ্ছে যে অক্টোবরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
চলতি বছরের মে মাস থেকে মসজিদ ও অন্যান্য ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে বোর্ডের আগের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ফারুকী বলেন, হ্যাঁ, পুরো প্রকল্পের নকশা নতুন করে প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।
এছাড়াও তহবিল সংগ্রহের জন্য ফরেন কন্ট্রিবিউশন রেগুলেশন অ্যাক্ট (এফসিআরএ) সার্টিফিকেটও এখনও পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি। প্রকল্প নির্মাণ কমিটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি রানি পাঞ্জাবির দাবির বিষয়ে বেশ কয়েকবার তার সাথে দেখা করেছেন এবং তাকে বলেছেন যে ইসলামে বিতর্কিত জমিতে মসজিদ নির্মাণ করা অনুমোদিত নয়। যদি তার দাবির সমর্থনে শক্ত প্রমাণ থাকে তবে তার এটি উপস্থাপন করা উচিত, তবে তিনি তা করতে পারেননি।
২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর দেওয়া এক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট ওই স্থানে রাম মন্দির নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিল, যেখানে ১৬ শতকের পুরনো বাবরি মসজিদ ছিল। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর উগ্র হিন্দুত্বাদীরা বাবরি মসজিদ বেঙে ফেলে। তবে তা নিয়ে চলমান মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট আদালত মন্দির নির্মাণের জন্য বাবরি মসজিদ চত্বর ছেড়ে দেওয়ার পাশাপাশি মুসলিমদের মসজিদ নির্মাণের জন্য অযোধ্যার অন্যত্র পাঁচ একর জমিও বরাদ্দ করেছে। সরকারের নির্দেশে সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডকে অযোধ্যা জেলার রৌনাহির ধন্যিপুর গ্রামে ওই জমি দেওয়া হয়।তাতে নির্মাণ কাজ শুরুর আগে ফের বাবরি মসজিদের মতো হিন্দুদের সম্পত্তি বলে দাবি উঠল।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct