তানজিমা পারভিন, হরিশ্চন্দ্রপুর, আপনজন: একজন শিক্ষক দিয়ে চলছে স্কুল। তিনি আবার স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ছাত্র ছাত্রীদের পড়ানোর পাশাপাশি মিড ডে মিলের বাজার ও অফিসের সমস্ত কাজ সামলাতে হয় প্রধান শিক্ষককে। হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লকের মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গাংনদীয়া বাংরুয়া এম এস কে স্কুলের চিত্র। পঞ্চম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ৪টি ক্লাসের শিক্ষার্থীকে পাঠদান করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে ওই শিক্ষককে। একটি ক্লাস নিতে গেলে অন্য ক্লাস ফাঁকা থাকছে। ফলে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীরা কাঙ্খিত মানের পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে; অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন অভিভাবকরাও। তাই উঁচু ক্লাসের ছাত্ররা ছোটদের ক্লাস নিয়ে থাকেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাহানুল হক বলেন, ২০০১ সাল থেকে ছয়জন শিক্ষক মিলে স্কুলটি অর্গানাইজ করে আসছিলাম। হাইকোর্টে মামলা করার পর ২০০৩ সালে অনুমোদন পায়। তখন দুইজন শিক্ষকের বেতন চালু হয়। এরপর ধাপে ধাপে ছয়জন শিক্ষকের বেতন চালু হয়। পরে এক শিক্ষক মারা যায় ও বাকি চারজন শিক্ষক ধীরে ধীরে অবসর হয়। তার পর থেকে আর কোনও শিক্ষক নিয়োগ হয়নি স্কুলে। ২০২২ সাল থেকে স্কুলে মাত্র একজন শিক্ষক রয়েছে। কোনো গ্রুপ ডি কর্মী নেই। আমাকে শিক্ষার্থীদের পড়ানোর পাশাপাশি স্কুলের সমস্ত কাজ করতে হয়। চারটি ক্লাস মিলিয়ে মোট ৮১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
চারটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। নিয়মিত ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী পড়তে আসছে। শিক্ষকের অভাবে উঁচু শ্রেণির ছাত্ররাই শিক্ষকের ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই শিক্ষক চেয়ে ব্লক, জেলা ও রাজ্যে আবেদন করেছি। স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র জিতেন সিং বলেন, নিচু ক্লাসের ভাই বোনেদের যাতে ক্লাস অফ না যায়, তাই আমরাই পালা করে ক্লাস নিয়ে থাকি। কিন্তু এই ভাবে কতদিন চলবে ? পড়ুয়াদের বক্তব্য, আমরা চাই অবিলম্বে শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়োগ করা হোক।
অভিভাবক রাহানুল হক ও হাসিনা বিবিরা বলেন, গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপন হওয়ায় খুব আনন্দ হয়েছিল। কিন্তু এ রকম চলতে থাকলে হয়ত শিক্ষক শূন্য হয়ে পড়বে স্কুলটি। তখন ছাত্রদের কী হবে?তবে শিক্ষকের অভাবে ক্লাস বন্ধ না করে পড়ুয়াদের দিয়ে ক্লাস করানোর প্রশংসা করলেন তাঁরা। হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লকের সমিতি এডুকেশন অফিসার হুমায়ূন কবির কে এই ব্যাপারে ফোন করা হলে তিনি কিছুই উত্তর দিতে চাননি। উল্টে বলেন, খবর করে কিছুই হবে না। এতে স্কুলের ক্ষতি হয়ে যাবে। স্কুলে কেন শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না তা প্রধান শিক্ষক ভালো করে জানেন। স্কুলে শিক্ষক চেয়ে বিডিও ও জেলায় আবেদন করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নেই বলে সাফ জানিয়ে দেন।
হরিশ্চন্দ্রপুর ১ এর বিডিও সৌমেন মন্ডল বলেন, লিখিত আবেদনপত্র পেয়েছি। জেলায় বিষয়টি জানাবো।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct