আপনজন ডেস্ক: সুপ্রিম কোর্ট উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড সরকারকে কানওয়ার যাত্রার পথে দোকান মালিক এবং তাদের কর্মীদের সদস্যদের নাম প্রদর্শনে বাধ্য করার নির্দেশ কার্যকর করার উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিল সোমবার। সেই সঙ্গে বলেছিল তারা যে ধরনের খাবার পরিবেশন করে তা কেবল উল্লেখ করা উচিত।
ওই মামলায় আবেদনকারীদের যুক্তি ছিল, এই নির্দেশের ফলে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে অস্বীকার করার পাশাপাশি বৈষম্যমূলক ফলাফল হবে।
আদালত এই বিষয়ে জরুরি বিচারিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে। মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনও দোকানদারদের বিরুদ্ধে একই নির্দেশ দিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠায় বিচারপতি হৃষিকেশ রায় এবং বিচারপতি এস ভি এন ভাট্টির বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কানওয়ার যাত্রার রুটে পড়া উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, দিল্লি এবং মধ্যপ্রদেশ সরকারকে নোটিশ জারি করেছে। জরুরি ভিত্তিতে শুক্রবার ফের শুনানি। তাতে দোকানদারদের নাম প্রদর্শনের ফরমান জারি নিয়ে জবাব দিতে হবে ওই চার রাজ্যকে।
সুপ্রিম কোর্ট দোকানদারদের নাম প্রদর্শনের উপর স্থগিতাদেশ জারি কবরে বলেছিল, আমরা মনে করছি উল্লেখিত নির্দেশনা প্রয়োগ নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ জারি করা সমীচীন। অর্থাৎ, খাদ্য বিক্রেতাদের (ধাবার মালিক, রেস্তোরাঁ, খাবার ও সবজি বিক্রেতা, হকার ইত্যাদি সহ) কানওয়ার যাত্রীদের যে ধরনের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে তা প্রদর্শন করতে হতে পারে। তবে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত মালিক ও কর্মচারীদের নাম-পরিচয় প্রদর্শনে তাদের বাধ্য করা যাবে না।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর শ্রাবণ মাসে এই কানওয়ার যাত্রা অনুষ্ঠিত হয় যেখানে যাত্রীরা শিবের উপাসনা করেন। তারা মূলত কানওয়ারিয়াস বা ভোলে নামে পরিচিত। কয়েকশো কিলোমিটার হেঁটে কাঁধে বাঁকে ঝুলিয়ে গঙ্গাজলের পাত্র নিয়ে যান। এই যাত্রা জনপ্রিয় বিশেষত হিন্দি বলয়ের দলিত এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির মধ্যে। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগরের পুলিশ গত সপ্তাহে প্রথম এই বিতর্কিত নির্দেশিকা জারি করেছিল, তারা বলেছিল যে ‘কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে’ এটি করা হয়েছিল। এই পদক্ষেপের বৈষম্যমূলক প্রকৃতি শীঘ্রই স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং বিরোধী জোট ইন্ডিয়া দ্বারা সমালোচিত হয়। সমালোচনার মধ্যেই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ রাজ্যে তীর্থযাত্রার পুরো রুট জুড়ে এই নির্দেশিকা বর্ধিত করেন। প্রতিবেশী উত্তরাখণ্ডে বিজেপি সরকারও একই পথে হেঁটেছে। সেই নির্দেশেরে উপরই সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ জারি করেছে।
অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশে কানওয়ার যাত্রাকে কেন্দ্র করে প্রধান রুটে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মিরাট জেলায় স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মীরাটের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপক মীনা ২ আগস্ট পর্যন্ত সমস্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সব প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ, সরকারি ও বেসরকারি স্কুল বন্ধ থাকবে। যদি কোনো স্কুল-কলেজ খোলে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct