মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইউনেস্কোর ঐতিহ্য পুরস্কার প্রাপ্ত শারদীয়া দুর্গা পুজা উপলক্ষে রাজ্যের ৪৫ হাজার পুজো কমিটিকে অনুদান বাড়িয়ে ৮৫ হাজার টাকা করার ঘোষণা দিয়েছেন। সম্প্রীতির বাংলায় পুজো কমিটিগুলির জন্য এই সরকারি অনুদানকে স্বাগত জানিয়েছে রাজ্যের সংখ্যালঘু সমাজ। পাশাপাশি দাবি তুলেছে, রাজ্যের মসজিদগুলিতে নিয়োিজত কয়েক হাজার ইমাম-মুয়াজ্জিনেরও ভাতা বৃদ্ধি করা হোক। ভাতা বৃদ্ধি হোক পুরোহিতদেরও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য তা নিয়ে এখনও কোনও বার্তা না দেওয়ায় অাশায় দিন গুনছে রাজ্যের সংখ্যালঘু সমাজ। এ নিয়ে রাজ্যের সংখ্যালঘু সমাজের বিশিষ্টজনদের মতামত তুলে ধরেছেন ‘আপনজন’ সাংবাদিক এম মেহেদী সানি।
‘পুজোর অনুদান বৃদ্ধিতে আপত্তি নেই, ইমাম-মুয়াজ্জিন-পুরোহিতদেরও সম্মানজনক ভাতা দেওয়া হোক’'
পুজোর অনুদান দিচ্ছে দিক, আপত্তি নেই, বিরোধিতাও করছি না। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমাদের দাবি ইমাম-মুয়াজ্জিন-পুরোহিতদের সম্মানজনক ভাতা প্রদান করা হোক। বিষয়টি আমরা লিখিতভাবে পুনরায় জানাব। এর আগেও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ইমা মুয়াজ্জিনদের ভাতা বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছিল। দীর্ঘ ১২ বছর পর হলেও ২০২৩ সালে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম ইমাম মুয়াজ্জিন সমাবেশ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইমাম মুয়াজ্জিনদের জন্য ৫০০ টাকা মাসিক ভাতা বৃদ্ধির ঘোষণা করেছিলেন । পাশাপাশি রজ্যের পুরোহিতদের ভাতা ৫০০ টাকা বৃদ্ধির ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ।
নিজামুদ্দিন বিশ্বাস
রাজ্য সম্পাদক, অল বেঙ্গল ইমাম-মুয়াজ্জিন অ্যাসোসিয়েশন
‘দুর্গাপুজো কোনও একটি সম্প্রদায়ের নয় এটা সার্বজনীন, তাই পুজো কমিটির অনুদান আরও বৃদ্ধি করা উচিত’
ইমাম মোয়াজ্জিনদের দাবি দাওয়া থাকতে পারে সেটা ন্যায় সঙ্গত, যুক্তিসঙ্গত। তাদের দাবি-দাওয়া গুলো বামফ্রন্ট আমলে প্রকাশ করলে আরও ভালো হতো। তাদের জানা উচিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক অভিনব উন্নয়ন করেছেন। ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ভাতার তুলনায় পূজোর অনুদান অতি নগণ্য, আর দুর্গাপুজো কোনো একটি সম্প্রদায়ের নয় এটা সার্বজনীন। ইউনেস্কো থেকে হেরিটেজ স্বীকৃতি পেয়েছে অতএব মুখ্যমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা অতি উত্তম। সাম্প্রদায়িকভাবে বিভাজন করছে আমি জানি না। তবে আমি মনে করছি দুর্গা পুজোর জন্য এই অনুদান কম হয়ে গেছে, আরেকটু বেশি হলে ভালো হতো।
মোশারফ হোসেন
বিধায়ক ও তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের রাজ্য সভাপতি
‘দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ইমামদের মাসিক ভাতা ১৮ হাজার ও মুয়াজ্জিনদের ১৬ হাজার করেছেন, এ রাজ্যও তা করুক’
সরকারিভাবে দুর্গাপুজোর অনুদান বৃদ্ধির বিষয়টি হল ভোটের রাজনীতি। তার ফলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। রাজ্যে ২৮ হাজার ৩১০ জন আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পূজারী এবং পুরোহিতরা প্রতিমাসে দেড় হাজার টাকা করে ভাতা পান, যে অর্থ আসে রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে, অন্যদিকে ইমাম-মুয়াজ্জিনদেরকে যে ভাতা দেওয়া হয় তা ওয়াকফ ফান্ড থেকে প্রদান করা হয়। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ২০১৯ সালে ইমামদের মাসিক ভাতা ১৮ হাজার টাকা ও মুয়াজ্জিনদের ১৬ হাজার টাকা করেছিলেন। হরিয়ানায় ইমামদের মাসিক ভাতা ১৪ হাজার টাকা। এ রাজ্যে সে তুলনায় নামমাত্র। তাই ভাতা বৃদ্ধি করা উচিত মুখ্যমন্ত্রীর।
নওশাদ সিদ্দিকী
বিধায়ক ও ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের রাজ্য সভাপতি
‘সম্প্রীতির বাংলায় মমতার মতো জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে সম্মান দিয়ে চলার মুখ্যমন্ত্রী আর পাওয়া যাবে না’
সম্প্রীতির এই বাংলায় মানবিক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সকল জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে সম্মান দিয়ে চলেন। অন্যান্য রাজ্যের দিকে তাকালে দেখা যাবে পশ্চিমবঙ্গ অন্যান্য রাজ্যের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। আসামে তো মাদ্রাসা মসজিদ বন্ধই করে দিচ্ছে। সেখানে দাঁড়িয়ে বাংলার মানবিক মুখ্যমন্ত্রীর উদারতা মানবিকতা সহিষ্ণুতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কোন অবকাশ নেই। কিছুদিন আগেই ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ৫০০ টাকা করে ভাতা বৃদ্ধি করেছেন। আমাদের বোঝা উচিত ইমাম মুয়াজ্জিনদের ভাতা প্রতি মাসে মাসে দেওয়া হয় আর পুজোর অনুদান এককালীন। বাংলায় বৈষম্যের কোন স্থান নেই রাজ্যের মানবিক মুখ্যমন্ত্রীর সৌজন্যে।
এ কে এম ফারহাদ
সভাপতি, পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল কংগ্রেস মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি
‘ইমাম-মুয়াজ্জিন শুধু নয়, সংখ্যালঘুদের জন্য রাজ্য সরকারের উন্নয়নের শ্বেতপত্র প্রকাশ করা দরকার মুখ্যমন্ত্রীর’
পুজো কমিটির অনুদান বৃদ্ধি হলে কারও আপত্তি থাকা উচিত নয়। তবে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ভাতা বৃদ্ধি কিংবা সম্মানজনক না হওয়ায় আমি মর্মাহত। মুখ্যমন্ত্রী দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় পর নামমাত্র ভাতা বাড়িয়েছেন, যা আমাদের প্রতি এক প্রকার বঞ্চনা। আমরা উজাড় করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থাকা সত্ত্বেও মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর এই বৈমাতৃসুলভ সিদ্ধান্তকে কোনো ইমাম-মুয়াজ্জিন ভালোভাবে নিচ্ছেন না। মুখ্যমন্ত্রী ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ভাতা বৃদ্ধি তো দূরের কথা, নতুন ইমাম-মুয়াজ্জিন ভাতা অনুমোদন, রিপ্লেসমেন্টের ক্ষেত্রেও একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উন্নয়নের শ্বেতপত্র প্রকাশ করা দরকার মুখ্যমন্ত্রীর।
মাওলানা হাসানুজ্জামান
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা ইমাম-মুয়াজ্জিন কো-অর্ডিনেটর
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct