আপনজন ডেস্ক: বাংলাদেশে সরকারি চাকিরতে সংরক্ষণ নিয়ে আন্দোলনকে গিরে সংঘর্ষে বহু লোক নিহত ও শতাধিক আহত হওয়ার পর শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন অংশে সামরিক বাহিনীর টহল দেওয়ার পর পুলিশ ‘গুলি অন সাইট’ নির্দেশ দিয়ে দেশজুড়ে কঠোর কারফিউ জারি করেছে।
এই সপ্তাহের সহিংসতায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১১৫ জন নিহত হয়েছে এবং ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।মধ্যরাত থেকে কারফিউ শুরু হয় এবং লোকজনের প্রয়োজনীয় কাজকর্ম চালানোর জন্য দুপুর থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শিথিল করা হয় এবং সকাল ১০টা পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেছেন, চরম পরিস্থিতিতে কর্মকর্তাদের জনতার ওপর গুলি চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার রাস্তাঘাট দিনের বেলায় প্রায় জনশূন্য ছিল, সৈন্যরা পায়ে হেঁটে এবং সাঁজোয়া কর্মী বাহক ২ কোটি জনসংখ্যার বিশাল মেগাসিটিতে টহল দিচ্ছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া প্রবীণদের আত্মীয়দের জন্য সরকারি চাকরির ৩০ শতাংশ পর্যন্ত সংরক্ষণ করে এমন একটি কোটা ব্যবস্থার প্রতিবাদে কয়েক সপ্তাহ আগে এই বিক্ষোভ শুরু হয়। মঙ্গলবার দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় অন্তত ১০৩ জনের মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হলেও এ সংখ্যা আরও বেড়েছে।শুক্রবার সম্ভবত এখন পর্যন্ত সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিন হতে পারে; সময় টিভি ৪৩ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের একজন প্রতিবেদক ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ২৩টি মৃতদেহ দেখেছেন, তবে তারা সবাই শুক্রবার মারা গেছেন কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার হয়নি। বৃহস্পতিবার বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা দেশ ‘পুরোপুরি অচল’ করে দেওয়ার চেষ্টা করলে আরও ২২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
শুক্রবার ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশে ‘শত থেকে সম্ভবত হাজার’ মানুষ আহত হয়েছেন বলে খবরে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত অস্থিতিশীল’ বলে জানিয়েছে তারা। নিহত ও আহতদের সরকারি সংখ্যা জানায়নি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকা ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য শহরে রাস্তায় ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের পর আরও সহিংসতা দমন করতে এই কারফিউ জারি করা হয়। কর্তৃপক্ষ মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা নিষিদ্ধ করে অনলাইন যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। বেশ কয়েকটি টেলিভিশন নিউজ চ্যানেলও সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায় এবং বেশিরভাগ স্থানীয় সংবাদপত্রের ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে যায়। এরই মধ্যে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সরকারের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট হ্যাক ও বিকৃত করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। শুক্রবার নরসিংদীর একটি কারাগারে বিক্ষোভকারীরা হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিলে প্রায় ৮০০ বন্দি রাজধানীর উত্তরে নরসিংদীর একটি কারাগার থেকে পালিয়ে যায়। এই বিশৃঙ্খলা বাংলাদেশের শাসন ও অর্থনীতিতে ফাটল এবং স্নাতক হওয়ার পরে ভাল চাকরির অভাব থাকা তরুণদের হতাশার বিষয়টি তুলে ধরেছে। গত জানুয়ারির নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলগুলোর বর্জনের মুখে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct