আপনজন ডেস্ক: বঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বুধবার বিজেপিকে তাদের সংখ্যালঘু মোর্চা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
বিজেপির রাজ্য কর্মসমিতির বর্ধিত অধিবেশনে এদিন শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, আমি অতীতে জাতীয়তাবাদী মুসলিমদের কথা বলেছি। সেটা আর বলব না। আপনারা (অন্য বিজেপি নেতারা) সব কা বিকাশের কথা বলেছেন। বন্ধ করো সব কা সাথ সব কা বিকাশ। সংখ্যালঘু মোর্চার দরকার নেই।
প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার আগে নরেন্দ্র মোদী নিজে ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ স্লোগান তুলেছিলেন, যদিও বিজেপি কোনও মুসলিম প্রার্থী দেয়নি এবং ভারতের বৃহত্তম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোনও মন্ত্রীও ছিল না।
যদিও বঙ্গ বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার নেতৃত্বে রয়েছেন প্রাক্তন সাংবাদিক চার্লস নন্দী।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজিত করা সত্ত্বেও, নির্বাচনে বঙ্গ বিজেপির মুখ হিসাবে শুভেন্দু অধিকারীর ব্যক্তিগত ট্র্যাক রেকর্ড হতাশাজনক। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির আসন সংখ্যা ছিল ১৮। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘুরা, যারা প্রায় ৩০ শতাংশ ভোটার, লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণবঙ্গে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত পকেট দখলে তৃণমূলকে ভোট উজাড় করে দিয়েছিল। কিন্তু উত্তরবঙ্গে বাম-কংগ্রেস জোট এবং তৃণমূলের মধ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোট বিভাজন বিজেপিকে এই অঞ্চলে বেশ কয়েকটি আসনে জিততে সহায়তা করেছিল। লোকসভা ভোটের সেই ১৮ আসন থেকে কমে এবারের লোকসভা নির্বাচনে ১২-এ নেমে আসে। আরও খারাপ ফল হয় রায়গঞ্জ, বাগদা এবং রানাঘাট দক্ষিণের বিধানসভা উপনির্বাচনে যেখানে বিজেপি বিপুল ভোটে পরাজিত হয়। বিশেষ করে যে আসনগুলি বিজেপির দখলে ছিল এবং লোকসভাতেও বিজেপি ভাল ব্যবধানে এগিয়ে ছিল সেখানেই তাদের ভরাডুবি হয়েছে।
বিজেপির রাজ্য কমিটির সভায় শুভেন্দু সেই পরাজয় মেনে নিতে নাপারায় বলেন, বিজেপির সাংগঠনিক ও নেতৃত্বের ব্যর্থতা নিয়ে পরে আলোচনা হতে পারে। এখন সময় এসেছে হিন্দু ও সংবিধানকে বাঁচানোর।
‘হিন্দুরা এক হও’ স্লোগান দিয়ে ১৫ মিনিটের বক্তব্য শুরু করে শুভেন্দু অধিকারী এক পর্যায়ে দর্শকদের দিকে আঙুল তোলেন। তিনি বলেন, আপনি এখানে কালির চিহ্ন দেখতে পাচ্ছেন। ২০২৬ সালে (যখন বাংলার বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে) আমি ভোট দিতে পারব না। কারণ আমি হিন্দু। আমার বাড়ির বাইরে শত শত জিহাদি বসে থাকবে আর পুলিশ নজরদারিতে থাকবে।
শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, ২০০১ সালের বিধানসভা ভোটের পর তৃণমূলের জেহাদি, সন্ত্রাসবাদী ও গুন্ডারা বিজেপির বুথ স্তরের সংগঠনকে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং রাজ্য থেকে লক্ষ লক্ষ যুবককে তাড়িয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, প্রচণ্ড বাধা সত্ত্বেও আমরা এই লোকসভায় ২.৩৩ কোটি ভোট পেয়েছি। আমরা ২১টি আসন জিততে পারলে খুশি হতাম। কেউ ভাবতে পারেনি যে আমরা কোচবিহার, আরামবাগ, মেদিনীপুরকে হারাব।
শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, লোকসভা ভোটে যাদবপুর ও ডায়মন্ড হারবার আসন-সহ রাজ্যের আরও বেশ কয়েকটি আসনে হিন্দু ভোটারদের ভোট দিতে দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, ভাঙড়ে চারটি হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি এলাকার ভোটারদের ভোটের দিন বাড়ির বাইরে বেরোতে দেওয়া হয়নি। বাসন্তী এক্সপ্রেসওয়ের কথা ভুলে যান, ওই অংশটা ইসলামাবাদ হয়ে গিয়েছে। মানিকতলায় ১১টি হাউজিং কমপ্লেক্সের ভোটারদের ভিতরে আটকে রাখা হয়েছিল। যেখানে ভোট হয়েছে, সেখানে অন্য এলাকা থেকে গুন্ডাদের পাঠানো হয়েছে, ভোট লুঠ হয়েছে। শুভেন্দু জানান, তিনি ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপির বঙ্গ প্রভারী সুনীল বনশলের সঙ্গে সাংগঠনিক ঘাটতি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রপতির কাছে সময় চেয়েছি তার হস্তক্ষেপ কামনা করার জন্য। আমরা রাজ্যে ৩৫৬ ধারা (রাষ্ট্রপতি শাসন) চাই না। তিনি বলেন, বিজেপি পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায় না। বাংলাকে অশান্ত এলাকা ঘোষণা করে সেই অনুযায়ী নির্বাচন করতে হবে। তা না হলে আমরা গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রকে বাঁচাতে পারব না।
শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, লোকসভা ভরাডুবির পর বিজেপি নিজেদের কর্মীদের শান্ত করার অজুহাত খুঁজছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct