জিয়াউল হক, চুঁচুড়া, আপনজন: ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল বিচারকের কাছে বাবার বিরুদ্ধে গোপন জবানবন্দি দেয় সেই নাবালক ছেলে। এর আগে ৬ বছর বয়সেও সে গোপন জবানবন্দি দিয়েছিল বিচারকের সামনে। আর পরে ১৩ বছর বয়সে ফের সাক্ষী দেয়। ঘটনায় মোট ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছিল স্বামী। আর সেই খুনের প্রত্যক্ষদর্শী ছিল তাদের দুই সন্তান। সেই খুনের মামলায় নাবালক ছেলের সাক্ষীর ভিত্তিতে বাবাকে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত। বুধবার চুঁচুড়া আদালত ধনিয়াখালি থানার অন্তর্গত জামাইবাটি কাপগাছি গ্রামের বাসিন্দা সেখ নজিবুলকে দোষী সাব্যস্ত করে। বৃহস্পতিবার এই মামলায় সাজা ঘোষণা করলেন বিচারক।
মামলার বয়ান অনুযায়ী, নজিবুল তার স্ত্রী সাবিনা বেগমকে খুন করেছিল ২০১৫ সালের ২৫ অগস্ট । ধনিয়াখালিরই চক-সুলতান গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন সাবিনা। তাঁর সঙ্গে নজিবুলের বিয়ে হয়েছিল ২০০৬ সালে। পরে তাদের দুই সন্তান হয়। এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে তাদের। তবে বিয়ের কয়েক বছর পরে গ্রামের এক মহিলার সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে নজিবুল। এই নিয়ে নজিবুলের সঙ্গে তার স্ত্রীর অশান্তি নিত্যদিন লেগেই থাকত। তবে ২০১৫ সালের ২৫ অগস্টে তাদের সেই অশান্তি চরম আকার নেয়। ওই রাতে বালিশ চাপা দিয়ে স্ত্রীকে শ্বাস রোধ করে খুন করে নজিবুল। আর ঘটনার সময় তার দুই সন্তান সেখানে উপস্থিত ছিল। শুধু তাই নয়, যে নাবালক ছেলের সাক্ষীর ভিত্তিতে আদালত নজিবুলকে দোষী সাব্যস্ত করেছে সেই সময় তার বয়স ছিল মাত্র ৬ বছর। মাকে খুন করতে দেখে তখন বাবাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল সে। কিন্তু, বয়সে তখন ছোট হওয়ায় মাকে বাঁচাতে পারেনি। পরে সাবিনার বাবা মতিয়ার রহমানের অভিযোগের ভিত্তিতে নজিবুলকে গ্রেফতার করে ধনিয়াখালি থানার পুলিশ। ২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর সেই মামলায় চার্জশিট পেশ করে পুলিশ। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুন সহ একাধিক ধারা দেওয়া হয়। মামলা চলে নিম্ন আদালতে।
২০২২ সালের ১২ এপ্রিল বিচারকের কাছে বাবার বিরুদ্ধে গোপন জবানবন্দি দেয় সেই নাবালক ছেলে। এর আগে ৬ বছর বয়সেও সে গোপন জবানবন্দি দিয়েছিল বিচারকের সামনে। আর পরে ১৩ বছর বয়সে ফের সাক্ষী দেয়। ঘটনায় মোট ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। অবশেষে বুধবার হুগলি জেলা আদালতের তৃতীয় অতিরিক্ত দায়রা বিচারক কৌস্তব মুখোপাধ্যায় সেখ নজিবুলকে দোষী সাব্যস্ত করেন। চুঁচুড়া আদালতের সরকারি আইনজীবী শঙ্কর গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন তিনি কোর্টের কাছে আবেদন করেছিলেন খুনের মামলায় দোষী ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড দেয়া হোক , কিন্তু বৃহস্পতিবার সমস্ত দিক বিচার বিবেচনা করে হুগলি জেলা আদালতের তৃতীয় অতিরিক্ত দায়রা বিচারক কৌস্তব মুখোপাধ্যায় নজরুলের ৩০২ ধারায় যাবজ্জীবন শাস্ত্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করেন , এবং ৪৯৮এ ধারায় তিন বছর কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct