আপনজন ডেস্ক: দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঢোলাহাটের আবু সিদ্দিকের পুলিশি অত্যাচারে মৃত্যুর অভিযোগ মামলার শুনানিতে শুক্রবার বিচারপতি অমৃতা সিনহা দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত নির্দেশ দেয় আজ শনিবার মৃতের দেহ কবর থেকে উত্তোলন করে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করতে হবে। এদিন আদালতে ডা. সৌরভ চট্টোপাধ্যায় ৯ জুলাই মৃত আবু সিদ্দিকের প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেশ করা হয়। পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু না হলেও আদালতে পেশ, করা ময়নতদন্তের রিপোর্টে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানা গেছে। যদি মৃতের বাবা তার আর্জিতে অভিযোগ করেছিলেন পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন তাঁর ছেলেকে নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছিল। আঘাতের ফলে তার মৃত্যু হয়।
যদিও রাজ্য সরকারের তরফে আদালতের কাছে আর্জি জানানো হয়, প্রথম ময়নাতদন্তের ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়েছে। তাই আর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রয়োজন নেই। কিন্তু বিচারপতি অমৃতা সিনহা প্রথম ময়নাতদন্ত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশ উল্লংঘন করা হয়েছে বলে সেই দাবি খারিজ করে দেন।
প্রথমবার ময়নতদন্তের সময় নিহতের পরিবারের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত করা হয়নি। ফলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ মানা হয়নি। ময়নাতদন্তের সময় যদিও ময়নাতদন্তের ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তাই
অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার প্রার্থনা করেন আবেদনকারী।
অবশ্য রাজ্য সরকার জানায়, দেহ মৃতের বাবাকে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিচারপতি বলেন, যদি নিয়ম মেনে ময়নাতদন্ত না হয়, তাহলে যথাযথ তদন্তের পথে রাজ্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে না। প্রশ্নের মুখে বেসরকারি হাসপাতালের ভূমিকাও। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জন্ডিসের কথা বলা নেই। ৪ জুলাই যখন প্রথম যখন নিহত যুবককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তখন তিনি শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন।
বিচারপতি দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ময়নাতদন্তের সময় কমপক্ষে তিনজন ডাক্তারের বোর্ড দ্বারা করা উচিত। বিশেষত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আসা ডাক্তাররা কিছু ক্ষেত্রে বোর্ডের সিনিয়র সদস্যদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যা অন্যান্য সদস্যদের স্বাধীনতায় বাধা দেয়; এবং পোস্টমর্টেম করা সমস্ত ডাক্তারকে অবশ্যই ফরেনসিক মেডিসিনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। পোস্টমর্টেম পরীক্ষার বিশেষত্বে কমপক্ষে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ময়নাতদন্তের সময় একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থাকবেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশিকা অনুসরণ করে ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষণ করতে হবে। মৃতের ভিসেরা অবিলম্বে হায়দরাবাদের সিএফএসএল-এ পাঠানো হবে।
দ্বিতীয় পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ২২ জুলাই আদালতে পেশ করতে হবে। আদালতে রাজ্য সরকারের তরফে জানোনো হয়, যে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাকে অন্য জায়গায় বদলি করা হয়েছে। তদন্ত চালাচ্ছেন ডিএসপি, যিনি থানার অফিসার-ইন-চার্জের চেয়ে অনেক সিনিয়র স্তরের অফিসার।
আবেদনকারী মৃতের বাবা নিজের, তার পরিবারের সদস্যদের এবং এই মামলার সাক্ষীদের জন্য সুরক্ষা দাবি করে অভিযোগ জানান, মামলার সাক্ষীদের মারাত্মক পরিণতির হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এরপর আদালত সুন্দরবন পুলিশ জেলার পুলিশ সুপারকে আবেদনকারী, তাঁর পরিবারের সদস্য এবং তাৎক্ষণিক মামলার সাক্ষী নাসিরুল গাজী, শাহজামাল পাইক এবং মহসিন হালদারের সুরক্ষা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয় যারা সকলেই ঘাটবোকুলতলা, পোস্ট অফিস শরৎনগর, থানা ঢোলাহাট, জেলা দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা।
যে ডেপুটি পুলিশ সুপার এই ঘটনার তদন্ত করছেন, তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে থানার ইনস্পেক্টর মানস চট্টোপাধ্যায়কে তার বয়ান রেকর্ড করা ছাড়া তাৎক্ষণিক মামলার তদন্তের বাইরে রাখার জন্য। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ২২ জুলাই।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct