আপনজন ডেস্ক: ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৫ নম্বর ধারায় একজন মুসলিম মহিলা তাঁর স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ চাইতে পারেন বলে বুধবার রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ বিধান সমস্ত বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
বিচারপতি বি ভি নাগরত্না এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহের বেঞ্চ জানিয়েছে, ১৯৮৬ সালের মুসলিম মহিলা (বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত অধিকার সুরক্ষা) আইন ধর্মনিরপেক্ষ আইনের উপর প্রাধান্য পাবে না। রায় ঘোষণার সময় বিচারপতি নাগরত্না বলেন, ‘আমরা ফৌজদারি আবেদন খারিজ করে দিচ্ছি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যে, ১২৫ ধারা সব নারীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। দুই বিচারপতি পৃথক কিন্তু একমত হয়ে রায় দিয়েছেন।
বেঞ্চ জানিয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৫ নম্বর ধারা, যেখানে স্ত্রীর ভরণপোষণের আইনি অধিকার রয়েছে, তা মুসলিম মহিলাদের এর আওতায় পড়ে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৫ ধারার ধর্মনিরপেক্ষ ও ধর্মনিরপেক্ষ বিধানের উপর মুসলিম মহিলা (বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত অধিকার সুরক্ষা) আইন, ১৯৮৬ প্রাধান্য পাবে না। মহম্মদ আবদুস সামাদের আবেদন খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে তালাকপ্রাপ্ত মুসলিম মহিলা সিআরপিসির ১২৫ ধারার অধীনে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী নন এবং ১৯৮৬ সালের আইনের বিধানগুলি প্রয়োগ করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৩ ডিসেম্বর হাইকোর্ট সামাদ কর্তৃক তার বিচ্ছিন্ন স্ত্রীকে অন্তর্বর্তীকালীন ভরণপোষণ প্রদানের জন্য পারিবারিক আদালতের নির্দেশ বাতিল করেনি। তবে আবেদনের তারিখ থেকে প্রতি মাসে ২০,০০০ টাকা থেকে কমিয়ে ১০,০০০ টাকা করেছে।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের ঐকমত্যপূর্ণ রায় থেকে যে সিদ্ধান্তগুলি উঠে আসে তা নিম্নরূপ: ক) ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৫ ধারা মুসলিম বিবাহিত মহিলা সহ সমস্ত বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
খ) ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৫ ধারা সকল অমুসলিম তালাকপ্রাপ্ত নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
গ) তালাকপ্রাপ্তা মুসলিম মহিলাদের ক্ষেত্রে-১) ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৫ ধারা বিশেষ বিবাহ আইনের অধীনে বিবাহিত ও তালাকপ্রাপ্ত এই জাতীয় সমস্ত মুসলিম মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, বিশেষ বিবাহ আইনের অধীনে উপলব্ধ প্রতিকারের পাশাপাশি।
২) মুসলিম আইনে মুসলিম মহিলাদের বিবাহ ও তালাক হলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৫ ধারা এবং ১৯৮৬ সালের আইনের বিধানাবলী প্রযোজ্য।
বিকল্পটি মুসলিম তালাকপ্রাপ্ত মহিলাদের উপর রয়েছে যে তারা দুটি আইনের যে কোনও একটি বা উভয় আইনের অধীনে প্রতিকার চাইতে পারে। কারণ ১৯৮৬ সালের আইনটি সিআরপিসির ১২৫ ধারার অবমাননা করে না বরং উল্লিখিত বিধানের অতিরিক্ত।
৩) যদি ১৯৮৬ সালের আইনের সংজ্ঞা অনুসারে কোনও তালাকপ্রাপ্ত মুসলিম মহিলাও ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৫ ধারা অবলম্বন করেন, তবে ১৯৮৬ সালের আইনের বিধানের অধীনে প্রদত্ত যে কোনও আদেশ ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৭(৩)(বি) ধারা অনুসারে বিবেচনা করা হবে। [এর অর্থ এই যে, যদি ব্যক্তিগত আইনে মুসলিম স্ত্রীকে কোন ভরণপোষণ দেওয়া হয়, অতঃপর ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ধারা ১২৭(৩)(খ) এর অধীন ভরণপোষণ আদেশ পরিবর্তন করতে হইবে]
ঙ) ২০১৯ আইনের বিধান অনুসারে অবৈধ বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে, ১) ভরণপোষণ ভাতা পাওয়ার জন্য উক্ত আইনের ধারা ৫ এর অধীনে ত্রাণ গ্রহণ করা যেতে পারে বা, এই জাতীয় মুসলিম মহিলার বিকল্পে, ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১২৫ এর অধীনে প্রতিকারও গ্রহণ করা যেতে পারে।
ii) ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৫ ধারার অধীনে দায়ের করা আবেদনের বিচারাধীন থাকাকালীন যদি কোনও মুসলিম মহিলা ‘তালাকপ্রাপ্ত’ হন, তবে তিনি ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১২৫ ধারার অধীনে আশ্রয় নিতে পারেন বা ২০১৯ সালের আইনের অধীনে পিটিশন দায়ের করতে পারেন।
iii) ২০১৯ আইনের বিধানগুলি ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১২৫ এর অবমাননা ছাড়াও প্রতিকারের ব্যবস্থা করে।মুসলিম মহিলা (বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত অধিকার সুরক্ষা) আইন ১৯৮৬ এর অধীনে প্রতিকার ছাড়াও ফৌজদারি কার্যবিধি ধারা ১২৫ এর অধীনে প্রতিকার।ড্যানিয়েল লতিফির রায়সহ বিভিন্ন নজির উল্লেখ করে বিচারপতি মাসিহ তার রায়ে বলেন, একজন তালাকপ্রাপ্ত মুসলিম নারী ফৌজদারি কার্যবিধি ১৯৭৩ এর ১২৫ ধারার ধর্মনিরপেক্ষ বিধানের অধীনে তার ভরণপোষণের স্বাধীন অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা পান না, যদি তিনি উক্ত সংবিধির প্রয়োজনীয়তা প্রমাণ করতে সক্ষম হন। আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে চাই যে, ফৌজদারি কার্যবিধি ১৯৭৩ এর ১২৫ ধারার ধর্মনিরপেক্ষ বিধান এবং ১৯৮৬ সালের আইনের ৩ ধারার ব্যক্তিগত আইনের বিধান উভয়ের অধীনে নির্ধারিত ভরণপোষণের সমতুল্য অধিকার সমান্তরালভাবে আইনশাস্ত্রে বিদ্যমান। এর ফলে, ১৯৭৩ এর বিধানে তালাকপ্রাপ্ত মুসলিম মহিলার ভরণপোষণ চাওয়ার অধিকার অব্যাহত রয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct