নুরুল ইসলাম, আগরতলা, আপনজন: বিজেপি শাসিত ত্রিপুরায় মুসলিমদের ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা কৌমি বা খারিজি মাদ্রাসাগুলির ব্যাপারে সংবিধান স্বীকৃত অধিকার বহাল রাখার আবেদন জানিয়ে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহাকে চিঠি লিখল রাবেতায়ে মাদারিসে ইসলামিয়া আরবিয়া ত্রিপুরা তথা নিখিল ত্রিপুরা কৌমী মাদ্রাসা বোর্ড। রাবেতায়ে মাদারিসে ইসলামিয়া আরবিয়া দারুল উলুম দেওবন্দের অনুমাদনপ্রাপ্ত রাবেতায়ে মাদারিসে ইসলামিয়া আরবিয়া ত্রিপুরা সে রাজ্যে খারিজি মাদ্রাসাগুলির পঠনপাঠন, সিলেবাস প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করে। মঙ্গলবার রাবেতায়ে মাদারিসে ইসলামিয়া আরবিয়া ত্রিপুরার সভাপতি মুফতি তৈয়্যেবুর রহমান এক চিঠিতে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহাকে বলেছেন, নিশ্চয়ই আপনি অবগত আছেন যে, ভারতবর্ষকে ইংরেজদের কবল থেকে মুক্ত করার জন্য ১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিখ্যাত ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় দারুলউলুম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতাগণ হিন্দু- মুসলমান তথা সকল সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলেছেন, কারাবরণ করেছেন, হাজার হাজার মানুষ আহত ও নিহত হয়েছেন, এই কঠোর আন্দোলনের ফলস্বরূপ ভারতবর্ষকে ইংরেজদের হাত থেকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছিল। ১৫৮ বৎসর থেকে এই প্রাচীন কেন্দ্রীয় মাদ্রাসাটিকে পরিচালনা করা হচ্ছে এবং ঐ মাদ্রাসার সার্কুলার, নিয়ম-নীতি পদ্ধতিকে অবলম্বন করে সংবিধানে দেওয়া অধিকারের ভিত্তিতে সারা ভারতবর্ষে হাজার হাজার খারিজি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। খারিজি মাদ্রাসাগুলিকে নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে গঠিত হয়েছে দেওবন্দের দারুল উলুমের সংগঠন রাবেতায়ে মাদারিসে ইসলামিয়া আরাবিয়া। তৈয়্যেবুর রহমান জানান, সংবিধান মেনেই রাবেতায়ে মাদারিসে ইসলামিয়া আরবিয়া ত্রিপুরা এই রাজ্যের খারিজি মাদ্রাসাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। শিক্ষার্থীদেরকে প্রাথমিক স্তরে ত্রিপুরা বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন দ্বারা নির্ধারিত পাঠ্যক্রম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান করা হয়। তিনি জানান, সম্প্রতি তারা জানতে পেরেছেন ত্রিপুরার কিছুদিন পূর্বে শিক্ষা অধিদপ্তর দ্বারা জারি করা একটি চিঠি সম্পর্কে যেখানে সমস্ত জেলা শিক্ষা অফিসারদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বে-সরকারিভাবে পরিচালিত মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত সমস্ত ছাত্রদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে আরটিই অ্যাক্ট ২০০৯ আইনের দ্বারা ৬ এর আওতায় আনার জন্য। এটা খুবই দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক। কেননা ২০১০ সালে যখন এই আইনটি কার্যকর হয় তখন আরটিই অ্যাক্ট ২০০৯ আইন থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে দাবি জানানো হয়। যার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকার ২০১২ সালে এই আইনটিকে সংশোধন করে। তাতে মাদ্রাসা, বৈদিক পাঠশালা এবং ধর্মী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলিকে অব্যাহতি দেয়। যা আরটিই অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট নামে বিদ্যমান আছে এবং এর ৫ নং ধারায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।(“Section 2(5) nothing contained in this Act shall apply to Madrasa, Vedic pathshala and educational institutions primarily imparting religion instruction.”) মাদ্রাসা, বৈদিক পাঠশালায় এই আইনে থাকা কিছুই প্রযোজ্য হবে না। এতদসত্ত্বেও ত্রিপুরা শিক্ষা অধিদফতরের নির্দেশ সংবিধানের উল্লংঘন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
রাবেতার তরফে দাবি জানানো হয়, বিশ্ব বিখ্যাত দারুলউলুম দেওবন্দ তথা সর্বভারতীয় কৌমী মাদ্রাসা বোর্ডের রীতি-নীতি ও সংবিধান অনুযায়ী প্রায় ১৫৮ বৎসর থেকে চলে আসা কৌমী মাদ্রাসাগুলির পঠন-পাঠন তথা যাবতীয় ব্যাপারে সাংবিধানিক অধিকার বহাল রাখা।
শিক্ষার্থীদের জন্য UDISE /PEN কোড পাওয়ার জন্য সহজ প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা করা।
মাদ্রসায় পড়ানোর জন্য সময় মত সহজে জেনারেল বই পুস্তক পাওয়ার ব্যবস্থা করা।
মাদ্রাসাগুলির রেজিস্ট্রেশন ব্যাপারে অবজেক্ট থেকে এই ‘To collect subscripation and donations from members and Other to attain the objects of society.’ থেকে ‘Other’ শব্দ বাদ না দিয়ে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া।
রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার আধিকারিক বলেন ক্রাইম বন্ধ করার জন্য ‘Other’ শব্দ বাদ দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তাই রেজিস্ট্রেশন আধিকারিককে লিখিতভাবে জাননানো হয়েছে এই মর্মে যে, (ক) ভারতের সংবিধানে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীদের নিজ নিজ ধর্মের, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠা করা ও পরিচালনা করার অধিকার দিয়েছে (খ) মুসলমানরা তাদের যাকাত, ফিতরা, দান, খয়রাত দ্বারা ওই সমস্ত মাদ্রাসাগুলিকে সাহায্য করেন (গ) বিদেশি কোন সাহায্য আমাদের মাদ্রাসাগুলিতে নেই (ঘ) কোন কৌমী মাদ্রাসায় দেশবিরোধী কার্যকলাপ করা হয় না (ঙ) সর্বভারতীয় পর্যায়ে রাবেতা বোর্ড তথা বেসরকারি যে মাদ্রাসা বোর্ড রয়েছে, যার নাম রাবেতায়ে মাদারিসে ইসলামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম দেওবন্দ, সেই বোর্ডের কেন্দ্রীয় দপ্তর হল উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর জেলার দেওবন্দ মাদ্রাসায় অবস্থিত। সেটিও দেশের জনসাধারণের চাঁদায় চলে, এভাবে ভারতবর্ষের হাজার হাজার কৌমি মাদ্রাসাগুলি চলছে (চ) প্রতি বৎসর সিএ-এর মাধ্যমে অডিট করানোর ব্যবস্থা করা হয়।
মুফতি তৈয়্যেবুর রহমান মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহাকে লেখা চিঠিতে আরও জানান, ত্রিপুরায় কৌমি বা খারিজি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদেরকে প্রাথমিক স্তরে ত্রিপুরা বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন দ্বারা নির্ধারিত পাঠ্যক্রম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান করা হয়। সাচার কমিটির রিপোর্টে প্রমাণিত হয়েছে, সংখ্যালঘু মুসলিমদের মাত্র ৪ শতাংশ ছেলে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে ৯৬ শতাংশ মাদ্রাসায় আসে না বা অনেকে স্কুলেও পড়াশোনা করে না। যারা পড়াশোনা করেছে তাদের মধ্যে অনেকের জীবন জীবিকার ব্যাপারে অনেক সমস্যা রয়েছে। কিন্তু মাদ্রাসায় পড়াশোনা করা ৪ শতাংশের জীবন জীবিকার ব্যাপারে অসুবিধা নেই। রাবেতায়ে মাদারিসে ইসলামিয়া আরাবিয়া ত্রিপুরার দাবি, মুসলমানদের এই ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেগুলি ভারতের প্রগতি, সমৃদ্ধি, সংহতির পক্ষে কাজ করে আসছে। সেগুলির ব্যাপারে কোন সংশয় অথবা বাধ্যবাধকতা না করে তাদের পূর্বাবস্থায় বহাল রাখার প্রতি ত্রিপুরা সরকারের সদিচ্ছা কামনাও করা হয় মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহাকে লেখা রাবেতায়ে মাদারিসে ইসলামিয়া আরবিয়া ত্রিপুরার চিঠিতে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct