আপনজন ডেস্ক: টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থেকেও ব্রিটেনের জাতীয় নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে দেশটির কনজারভেটিভ পার্টির। জয় পেয়েছে বিরোধী দল হিসেবে থাকা লেবার পার্টি। কিন্তু কী কারণে কনজারভেটিভ পার্টির এমন ভরাডুবি হল? বেশ কিছু ঘটনা আছে যেগুলো কনজারভেটিভ পার্টির পরাজয়ের কারণ হিসেবে দেখো হচ্ছে।
ব্রেক্সিট
২০১৬ সালে ব্রেক্সিট গণভোটের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও কনজারভেটিভরা ব্রেক্সিটের বাস্তব সুবিধাগুলো জনগণের সামনে নিয়ে আসতে পারেনি। উপরন্তু ব্রিটেনে তখন থেকেই ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘরে–বাইরে তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। সাম্প্রতিক জরিপগুলো ইঙ্গিত করে যে ইইউতে পুনরায় যোগ দিতে ইচ্ছুক লোকের সংখ্যা এখনো ব্রেক্সিট সমর্থনকারীদের চেয়ে বেশি, যা ব্যাপকভাবে ব্রিটেনের জন্য একটি অর্থনৈতিক ভুল হিসেবে বিবেচিত হয়।
অবৈধ অভিবাসননীতি
ফরাসি উপকূল থেকে ছোট নৌকায় করে অবৈধভাবে আসা অভিবাসন ঠেকাতে কনজারভেটিভ পার্টির কোনো পদক্ষেপ কার্যকর ফল বয়ে আনতে পারেনি। অবৈধ অভিবাসীদের রুয়ান্ডা পাঠানোর পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করতে পারেনি তারা। বরং ব্রিটেনে আসা বিদেশি ছাত্র ও কর্মীদের একের পর এক কঠিন শর্তের বেড়াজালে ফেলে অবৈধ হতে অনেকটা বাধ্য করেছে টোরি সরকার।
কোভিড বিশৃঙ্খলা
কোভিড মহামারির শুরুতে সঠিক সময়ে লকডাউন ঘোষণা না করে সাধারণ মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য সাধারণ জনগণ কনজারভেটিভ পার্টিকে দায়ী করে। এ জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে একটি তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হতে হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে বিশৃঙ্খলা
২০১০ সালে কনজারভেটিভ পার্টি ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা (এনএইচএস) উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ হয়েছে। করোনা মহামারি চলাকালে ক্যানসার, হার্ট, কিডনি রোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন অসুস্থতার জন্য রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হয়ে সেসব রোগীদের অ্যাপয়েনমেন্ট বাতিল করে দিয়েছিল এনএইচএস। এতে অনেক রোগীকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকদের বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ঘন ঘন ধর্মঘটের কারণে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হওয়ার দায়ও কনজারভেটিভ পার্টির ওপরে দিয়েছে সাধারণ মানুষ।
অর্থনৈতিক মন্দা
ব্রেক্সিট গণভোটের পরপরই আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন ব্রিটেনের সাধারণ মানুষ। মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় অনেক পরিবারের জন্য শেষ ইচ্ছা পূরণ করাও ক্রমে কঠিন হয়ে পড়েছিল। সমালোচকেরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে সরকারের নীতিগুলো অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ধনীদের পক্ষে ছিল এবং বৃহত্তর জনসংখ্যার অর্থনৈতিক অসুবিধা দূর করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে বরিস জনসনের পদত্যাগের পর ৪৯ দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী হওয়া লিস ট্রাসের মিনি বাজেট এতটাই আর্থিক অশান্তি সৃষ্টি করেছিল যে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ব্রিটিশ পাউন্ড ইতিহাসের রেকর্ড পরিমাণ পড়ে গিয়েছিল। তাঁর সংক্ষিপ্ত মেয়াদ কনজারভেটিভ পার্টির প্রতি জনগণের আস্থাকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এই অসন্তোষ কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থনকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে এবং তাদের নির্বাচনী পতনে অবদান রেখেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct