আপনজন ডেস্ক: রাজ্যে গণপিটুনি থেকে শুরু করে শুরু বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিদ্বজ্জনদের একাংশের সঙ্গে বৃহস্পতিবার মিলিত হলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপাল ও শাসক দলের মধ্যে টানাপোড়েনের বিষয়টিও উত্থাপিত হয়। এদিন বিকেলে রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ দোলা সেন, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুদের তৈরি করা সামাজিক সংগঠন ‘দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ’-এর তরফে বিদ্বজ্জনরা সাক্ষাৎ করেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপচারিতায় গণপিটুনি থেকে শুরু করে বিধয়াকদের শপথ বাক্য পাঠ নিয়ে রাজ্যপালের ভূমিকা প্রসঙ্গে আলোচনা হয়। এই আলোচনা চক্রে শামিল ছিলেন সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য জগতের ব্যক্তিত্বরাও। কবীর সুমন, নচিকেতা চক্রবর্তী, ইন্দ্রনীল সেন এবং প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীরা যেমন গান গেয়ে শোনান, তেমনি কবিতা পাঠ করেছেন জয় গোস্বামী। সাংস্কৃতিক আবহের মধ্যে আলাপচারিতা অনুষ্ঠিত হয়।
তবে আলোচনার বিষয়বস্তুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় গণপিটুনির বিষয়ে। গত কয়েক দিন ঘরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর পর গণপিটুনির ঘটনা সংবাদ শিরোনামে আসে। খাস কলকাতায় একটি সরকারি হস্টেলে মোবাইল চোর সন্দেহে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করলে এরশাদ আলম নামে এক টিভি মেকানিকের মৃত্যু হয়। কখনও মোবাইল চোর, কখনও ছেলেধরা গুজব নিয়ে জনরোষের শিকার হওয়ার ঘটনা বাড়তে থাকে। এরপর বিধাননগর থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলা থেকেও গণপিটুনির খবর মেলে। আর তাতে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। সেই আবহের মধ্যেই বিদ্বজ্জনদের অনুরোধে আলোচনায় বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন রাজ্যে গোরক্ষকদের হাতে নিরীহ মুসলিমদের একের পর এক মৃত্যুর পর পশ্চিমবাংলায়ও যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে তা রুখতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েল উদ্যোগে রাজ্য সরকার ২০১৯ সালে রাজ্য বিধানসভায় গণপিটুনি বিরোধী আইন পাশ করে। তারপর পাছ বছর কেটে গেলেও তা চাপা পড়ে থাকে। যদিও ওই বিলে গণপিটুনির ঘটনায় কড়া শাস্তির কথা বলা হয়েছিল। সেই বিল রাজ্য সরকারের তরফে সেই সময়কালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের কাছে সম্মতির জন্য পাঠানো হয় রাজভবনে। কিন্তু জগদীপ ধনকর তাতে সই না করায় রাজভবনের শীতল ঘরে তা আটকে থাকে। সে সসময় এই সই না করার পিছনে জগদীপ ধনকর অভিযোগ করেছিলেন, রাজ্য সরকার বিধানসভায় যে বিল পাশ করেছে আর যে বিলটি তার কাছে সই করার জন্য পাঠিয়ে তাতে বিস্তর ফারাক রয়েছে। তাই তিনি সই করেননি। এমনকী এ বিষয়ে জবাবদিহি চাওয়া হয়েছিল স্পিকারের কাছে। রাজ্যপালের এই অভিযোগের উত্তরে সম্প্রতি বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তার তরফে বিল নিয়ে সমস্ত প্রকার বক্তব্য রাজভবনে জানানো হয়ে গিয়েছে। ধনকরের মেয়াদ ফুরনোর পর বাংলার ভারপ্রাপ্ত রাজ্যপাল হয়ে কিছু দিনের জন্য এসেছিলেন লা গণেশন। এর পর রাজ্যপাল হয়ে আসেন সিভি আনন্দ বোস। তবে বিলটি এখনও রাজ্যপালের স্বাক্ষরের অভাবে রাজভবনেই আটকে আছে।
গণপিটুনি রুখতে সেই বিল রাজভবনে এখনও আটকে থাকায় এদিন বিদ্বজ্জনদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী আফসোস করেন, সময় মতো গণপিটুনি বিল আইনে পরিণত হলে এ রাজ্যে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া যেত গণপিটুনির ঘটনার ক্ষেত্রে। তিনি গণপিটুনির মতো ঘটনার যে ঘোর বিরোধী তা খোলসা করে বলেন। এ প্রসঙ্গে উত্তরপ্রদেশের কিছু ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, কীভাবে নিরীহ মানুষজন সেখানে গণপিটুনির শিকার হয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন। এ রাজ্যে তিনি এ ধরনের ঘটনা ঘটতে না দেওয়ার ক্ষেত্রে বদ্ধ পরিকর। উত্তরপ্রদেশের মতো ঘটনা রাজ্যে যাতে না ঘটে তার জন্য পাঁচ বছর আগে রাজ্য বিধানসভায় গণপিটুনি বিল পাশ হলেও তা আইনে পরিণত না হওয়ায় তিনি ব্যথিত বলে জানান।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct