আপনজন ডেস্ক: শেষ ষোলো পর্ব পেরিয়ে ইউরো এখন রোমাঞ্চকর কোয়ার্টার ফাইনাল উপহার দেওয়ার অপেক্ষায়। কিন্তু আলোচনায় এখনো ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ফ্রাঙ্কফুর্টে গত সোমবার রাতে স্লোভেনিয়াকে টাইব্রেকারে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে পর্তুগাল। তিন-তিনটি পেনাল্টি ঠেকিয়ে সেদিন পর্তুগালকে শেষ আটে তোলেন গোলকিপার দিয়োগো কস্তা। রোনালদোকেও তিনি খলনায়ক হওয়া থেকে বাঁচিয়ে দেন। ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে পেনাল্টি পেয়েও যে পর্তুগালকে এগিয়ে দিতে পারেননি রোনালদো। তাঁর শট বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন স্লোভেনিয়ার গোলকিপার ইয়ান ওবলাক। এরপরই হাঁটু মুড়ে দুই হাতে মুখ ঢেকে মাঠে বসে পড়েন রোনালদো। শিশুর মতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকেন। দলের সবাই ছুটে যান রোনালদোর দিকে। কিন্তু সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা যেন খুঁজে পাচ্ছিলেন না তাঁরাও। পরে অবশ্য টাইব্রেকারে সফল হন রোনালদো। পর্তুগালের প্রথম গোলটি করেন তিনি। গোলকিপার কস্তার বীরত্বের পর যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন। পেনাল্টি শুটআউটের সময় রোনালদোর শারীরিক অবস্থা নিয়ে এবার চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে ‘হুপ’। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত এই ফিটনেস ট্র্যাকার প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, টাইব্রেকারে শট নেওয়ার আগমুহূর্তে রোনালদোর হৃৎস্পন্দন সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। তবে তিনি খুব বেশি বিচলিত হয়ে পড়েননি। প্রতি মিনিটে তাঁর স্পন্দন (বিপিএম) ১০০-এর আশপাশে ছিল।
টাইব্রেকারে পর্তুগালের হয়ে দ্বিতীয় শট নিতে আসেন ব্রুনো ফার্নান্দেজ। তিনি গোল করতেই রোনালদোর হৃৎস্পন্দন ১২৫ বিপিএম হয়ে যায়। এরপর বের্নার্দো সিলভা তৃতীয় শট থেকে গোল করতেই রোনালদোর বিপিএম লাফিয়ে ১৭০-এ উঠে যায়। সিলভার গোলেই পর্তুগাল কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে যায়।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল জানিয়েছে, রোনালদো পরশু রাতে তাঁর কবজিতে হুপ ৪.০ মডেলের ফিটনেস ট্র্যাকার পরে খেলেছেন। এই ট্র্যাকারই মাঠে থাকাকালীন তাঁর শারীরিক অবস্থার নির্ভুল তথ্য দিয়েছে। এদিকে রোনালদো গতকাল তাঁর ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে বিখ্যাত ভেষজবিজ্ঞানী ফিল স্টুটজের একটি শিক্ষামূলক ছবি পোস্ট করেছেন। যাতে লেখা, ‘বাস্তবতার তিনটি দিক।’ সেগুলো হলো যন্ত্রণা, অনিশ্চয়তা ও অবিরাম কাজ। তবে রোনালদো যা-ই লিখুন না কেন, তাঁকে পর্তুগালের শুরুর একাদশে আর দেখতে চান না ইংল্যান্ডের সাবেক স্ট্রাইকার ক্রিস সাটন। ডেইলি মেইলে লেখা কলামে রোনালদোকে একহাত নিয়েছেন সাটন। একই সঙ্গে এটাও দাবি করেছেন, পর্তুগাল কোচ রবার্তো মার্তিনেজের রোনালদোকে বাদ দেওয়ার সাহস নেই। রোনালদোকে ‘স্বার্থপর তারকা’ উল্লেখ করে সাটন লিখেছেন, ‘এ মুহূর্তে সে পর্তুগাল দলকে সাহায্য করার চেয়ে প্রতিবন্ধকতাই সৃষ্টি করছে বেশি। একজন কোচকে অবশ্যই বুঝতে হবে, যখন কেউ দলের উপকারে আসে না, তাকে বাদ দিতে হবে। সে যে-ই হোক না কেন। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের দুশ্চিন্তা না করে যথেষ্ট সাহসী হতে হবে। কিন্তু রবার্তো মার্তিনেজকে দেখে মনে হলো, তিনি রোনালদোকে বাদ দিতে ভয় পান।’
রোনালদোকে দল থেকে বাদ দেওয়ার সাহস নেই কোচ মার্তিনেজের—এমনটাই মনে করেন সাবেক ইংলিশ ফরোয়ার্ড ক্রিস সাটন
রোনালদোকে দল থেকে বাদ দেওয়ার সাহস নেই কোচ মার্তিনেজের—এমনটাই মনে করেন সাবেক ইংলিশ ফরোয়ার্ড ক্রিস সাটনএএফপি
২০২২ কাতার বিশ্বকাপে ভালো করতে না পারায় রোনালদোকে শেষ ২ ম্যাচে বদলি নামিয়েছিলেন পর্তুগালের তখনকার কোচ ফার্নান্দো সান্তোস। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ষোলোয় রোনালদোর জায়গায় সুযোগ পেয়ে হ্যাটট্রিক করেছিলেন গনসালো রামোস। সাটন তাঁর কলামে সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘তাঁর (মার্তিনেজের) দলে গনসালো রামোস আছে, যে ২০২২ বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করেছিল। মার্তিনেজের পূর্বসূরি ফার্নান্দো সান্তোস সেদিন রোনালদোর বদলে রামোসকে নামিয়েছিল।’
পর্তুগাল দলে আরও ভালো ফরোয়ার্ড আছে বলে মত সাটনের, ‘মার্তিনেজ তাঁর দলে দিয়োগো জোতার মতো খেলোয়াড় পেয়েছেন, স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে সে-ই তো পেনাল্টি পাইয়ে দিয়েছিল। এ ছাড়া জোয়াও ফেলিক্সও আছে। মার্তিনেজ যত বেশি দিন রোনালদোকে বাদ দিতে অস্বীকৃতি জানাবেন, তাঁকে ততই দুর্বল দেখাবে।’
হামবুর্গে আগামী শুক্রবার রাতে ইউরোর সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে পর্তুগাল।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct