আপনজন ডেস্ক: আল আমীন মিশনের অধিকাংশ শাখাই গ্রামীণ এলাকায় হওয়ায় অভিজ্ঞতায় দেখেছি স্বাস্থ্য সচেতনতা ও সঠিক পরামর্শের অভাব। সেই আত্মিক প্রেরনায় আমরা আমাদের প্রাক্তনী পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সমন্বয়ে ধাপে ধাপে বিভিন্ন শাখায় স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। গত ২০১৭-এর ৩ মার্চ আল-আমীন মিশনের মূল ক্যাম্পাস খলতপুরে আল-আমীনের স্বাস্থ্য পরিষেবার শুভ সূচনালগ্নে উপরের কথাগুলি বলেছিলেন সাধারণ সম্পাদক এম নুরুল ইসলাম। এভাবেই শুরু হয় ‘আল-আমীন মিশন হেলথ কেয়ার পরিষেবার শুভ উদ্যোগ। তারই ফলশ্রুতিতে ১ জুলাই ডক্টরস ডে-তে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গায় মিশনের হেলথ কেয়ার পরিষেবার তৃতীয় কেন্দ্রটির আব্দুর রহমান, আমানুল্লা সাহেবকে সঙ্গে নিয়ে ফিতে কেটে উদ্বোধন করেন এম নুরুল ইসলাম। উল্লেখ্য, হেলথ কেয়ারের দ্বিতীয় কেন্দ্র মিশনের বেলপুকুর শাখায় গত ৭ আগস্ট ২০২২ সালে আরম্ভ হয়।
পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা ঘটে। প্রারম্ভিক ভাষণে এম নুরুল ইসলাম বলেন, হাওড়ার খলতপুর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের বেলপুকুর ক্যাম্পাসের পরেই এটি তৃতীয় হেলথ কেয়ার ইউনিট।
বেলডাঙ্গা মাইনোরিটি ডেভলাপমেন্ট মিশনের সদস্যগণের সক্রিয়তায় এই কেন্দ্রটির গড়ে ওঠার পেছেন আব্দুর রহমান, আমানুল্লা সাহেব ছাড়াও ডা. আবুল কালাম আজাদের বিশেষ ভূমিকার কথা তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ঐতিহ্যশালী মুর্শিদাবাদ জেলার গৌরবময় ইতিহাস বিদ্যমান, কিন্তু কালের নিয়মে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবায় ক্রমশ পিছিয়ে পড়েছে এই জেলা। আশার কথা মুখ্যত আল-আমীন মিশনের হাত ধরে পশ্চাৎপদ অবস্থার পরিবর্তন ও অবসান হতে চলেছে। কারণ আল-আমীনের প্রাক্তনী মুর্শিদাবাদের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা রাজ্য ও দেশ ছাড়িয়ে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে। এলাকার সমস্ত জনগণ যাতে বিশেষজ্ঞ সব চিকিৎসকদের পরিষেবা পান সেই ব্যবস্থারই অংশ এই হেলথ কেয়ার ইউনিট।
তিনি আরও বলেন রামকৃষ্ণ মিশন স্বাস্থ্য পরিষেবার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে যেভাবে কাজ করে চলেছে, আমরাও সেভাবেই এগোতে আগ্রহী। সেকারণে জেলায় জেলায় আল-আমীন মিশনের বিভিন্ন ক্যাম্পাস সংলগ্ন করেই হেলথ কেয়ার কেন্দ্র গড়ে তুলে শিক্ষার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত হতে চাই। মিশনের পৃষ্ঠপোষক সমাজসেবী আব্দুর রহমান বলেন, এই অঞ্চলে মিশনের তরফে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান আমাদের অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল যেটি আজ পূরণ হতে চলেছে। মিশনের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য উভয় ক্ষেত্রেই তিনি সবসময়ই সার্বিকভাবে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি জানান, বেলডাঙ্গার জমিদাতাদের সবারই লক্ষ্য ছিল মেধাবী পড়ুয়াদের শিক্ষা ও স্থানীয় মানুষজনের জন্য ফ্রি চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান। মানুষের সেবার মাধ্যমেও স্রষ্টার অনুগ্রহ লাভ সম্ভব বলে মন্তব্য করেন বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আবুল কালাম আজাদ।
তিনি জানান, এই সেন্টারে যাতে বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণন নিয়মিত পরিষেবা দেন সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মিশনের প্রাক্তন ছাত্র ও বিশিষ্ট শিশু চিকিৎসক ডা. হুমায়ুন কবির তাঁর স্যর অর্থাৎ এম নুরুল ইসলামের পরিকল্পনা ও দূরদর্শিতার কথা কৃতজ্ঞচিত্তে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, কোনও শিশু যাতে চিকিৎসার অভাবে মারা না যায় সেটি মানুষ হিসেবে আমাদের সবারই ভাবা উচিত। সামগ্রিক জাতির উন্নয়নে শিশুদের সুস্থ থাকা জরুরি। অন্যরা এই ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে গেছে। একটু দেরিতে হলেও মিশনের এই সাধু উদ্যোগে সমাজ উপকৃত হবেই বলে আমার বিশ্বাস। অস্থি রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডা. ওয়াসিম বারি বিশ্বাস করেন বেলডাঙ্গার এই ছোট উদ্যোগ একদিন চিকিৎসা পরিষেবার বৃহৎ কেন্দ্র হয়ে উঠবে। তিনি নিজেও এই হেলথ কেয়ারে যথাসাধ্য পরিষেবার মাধ্যমে এলাকার মানুষের পাশে থাকবেন বলে জানান।
উপস্থিত ছিলেন সৌদি আরবের জাজান বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজির অধ্যাপক মহম্মদ সোহেল রানা, স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আসিফ কামাল, জেনারেল ফিজিসিয়ান ডা. মহ. খলিলুল্লাহ, ডা. সেখ সাবির প্রমুখ মিশনের প্রাক্তনীগণ। অভিভাবক, অভিভাবিকা, স্থানীয় এলাকাবাসী ছাড়াও অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মিশন পরিবারের মহ. আলমগীর বিশ্বাস, নাসিমা খাতুন, প্রকৌশলী জাহির আব্বাস, মহ. জাকির হোসেন মণ্ডল, মহ. গোলাম মোর্তজা, শিক্ষিকা সামজিদা খাতুন, সাংবাদিক সুজাউদ্দিন বিশ্বাস প্রমুখ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা করাতে উপস্থিত হয়েছিলেন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অনেকেই।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct