আপনজন ডেস্ক: উত্তর প্রদেশের হাথরাস শহরে মঙ্গলবার ধর্মীয় সমাবেশে পদদলিত হয়ে শতাধিক ধর্মপ্রাণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
হাথরসের মুঘলগড়ী গ্রামে স্থানীয় গুরু ভোলে বাবা ওরফে নারায়ণ সাকর হরির সম্মানে আয়োজিত ‘সৎসঙ্গ’ চলাকালীন এই ঘটনা ঘটে এবং জনতা অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে যেতে শুরু করলে পদপিষ্ট হয়ে পড়ে। ভোলে বাবা নারায়ণ হরি, যিনি ওই জমায়েতে ভাষণ দিচ্ছিলেন, তিনি পলাতক বলে জানা গিয়েছে।
হাথরাসের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আশিস কুমার ৮৭ জনেরও বেশি মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। বেসরকারি ভাবে মৃতের সংখ্যা ১৩০ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানা যাচ্ছে।
মর্মান্তিক পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শকুন্তলা দেবী ভোলে বাবার সৎসঙ্গের পরের বিশৃঙ্খল দৃশ্যের বর্ণনা দিয়েছেন। তার বিবরণ অনুসারে, ইভেন্টটি শেষ হওয়ার সাথে সাথে বিপুল সংখ্যক লোক অনুষ্ঠানস্থল থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে। অসমতল রাস্তার উপরিভাগের ফলে হঠাৎ পদপিষ্ট হয়ে যায়, যার ফলে হুড়োহুড়িতে লোকেরা একে অপরের উপর পড়ে যায়। এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার ফলে একাধিক হতাহত ও আহত হন।
কর্তৃপক্ষ পার্শ্ববর্তী জেলা এটাহ এবং আলিগড় থেকে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করেছে। হাথরাস, এটাহ, আলিগড়, মথুরা এবং আগ্রার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
স্থানীয় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তীব্র গরমে অনুষ্ঠানস্থলে দমবন্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলে সমবেত পুণ্যার্থীরা দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। এ সময় পদদলিত হয়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এ ঘটনায় আহত হয়ে স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক ব্যক্তি বলেন, ‘সেখানে বহু মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। বের হওয়ার কোনো উপায়ই ছিল না। এর মধ্যেই সবাই একযোগে বের হওয়ার চেষ্টা করলে একজন আরেকজনের ওপর পড়তে থাকে। আমি যখন সেখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করি, দেখি একটি মোটরসাইকেল দাঁড়ানো। পরে কোনোমতে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের হতে সমর্থ্য হই।’
পদদলিত হয়ে মৃত্যুর এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এটাহ এসএসপি রাজেশ কুমার সিং বলেন, মরদেহগুলো এটা হাসপাতাল পাঠানো হচ্ছে স্থানীয় সরকারি চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে এএফপি এ তথ্য জানায়। হাথরসের ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, পশ্চিমবঙ্গের মু্খ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। হাথরসের ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এক্সে লিখেছেন, ‘হাথরসে মহিলা এবং শিশু-সহ বহু মানুষের মৃত্যুর খবর দুঃখজনক। যাঁরা নিজের পরিজনকে হারিয়েছেন, তাঁদের সমবেদনা জানাই। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্সে লিখেছেন, উত্তরপ্রদেশের হাথরসে পদপিষ্ট হয়ে ২৭ জন (২৩ জন মহিলা এবং তিন শিশু)-এর মৃত্যুর খবর শুনলাম। তাঁদের পরিবারকে সমবেদনা জানাই।’
লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি শোকপ্রকাশ করে জানিয়েছেন, এই ঘটনা খুবই দুঃখজনক। মৃতদের পরিজনকে সমবেদনা জানান তিনি। সেই সঙ্গে সরকার এবং প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করেন আহতদের যেন সব রকমের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় ও মৃতদের পরিবারকে সাহায্য করা হোক।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে কেরালায় একটি মন্দিরে হিন্দুদের নতুন বছর উদ্যাপনের সময় নিষিদ্ধ আতশবাজি ফুটানোর সময় ব্যাপক বিস্ফোরণ ঘটে। এতে অন্তত ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
মধ্য প্রদেশে ২০১৩ সালে একটি মন্দিরের কাছে সেতুতে পদদলিত হয়ে ১১৫ জন পুণ্যার্থীর মৃত্যু হয়ছিল। সে সময় সেখানে ৪ লাখের মতো মানুষ জড়ো হয়েছিল। গুজব ছড়িয়ে পরেছিল সেতুটি ধসে পড়বে, আর তখনই এই পদদলনের ঘটনা ঘটে।
২০০৮ সালেও রাজস্থানের যোধপুরে পদদলিত হয়ে ২২৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct