আপনজন ডেস্ক: বিতর্ক সঙ্গে নিয়েই পহেলা জুলাই (সোমবার) থেকে ভারতে বলবৎ হলো ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’-সহ তিনটি নতুন অপরাধমূলক আইন। বিরোধীদের তীব্র আপত্তি থাকা সত্ত্বেও এই তিন আইন কার্যকর করছে তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসা নরেন্দ্র মোদীর সরকার। কিন্তু এই আইনগুলো ঘিরে এত বিতর্কের কারণ কী? কী পরিবর্তনই বা এসেছে নতুন আইনগুলোতে?
ভারতের বিরোধী শিবিরগুলো নির্বাচনের আগে থেকে বলে আসছিল, এবার পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এলে ‘সংবিধান বদল’ করতেও পিছপা হবে না মোদী সরকার।
সেটি না হলেও শরিক নির্ভর বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই এমন আইন কার্যকর করেছে যার বিল প্রায় একতরফাভাবে সংসদে পাশ করানো হয়েছিল বলে সরব হয়েছিলেন বিরোধীরা।
গত বছর ধ্বনি ভোটে পাশ হয়েছিল এই আইন সংক্রান্ত বিল। সেই সময় বিরোধীদের পাশাপাশি আইনজ্ঞরাও বলেছিলেন, যে আইন দেশের বিচার ব্যবস্থাকে বদলে দেবে, তা নিয়ে সংসদে পূর্ণাঙ্গ তর্ক হওয়া উচিত, যেটি হয়নি।
সংসদের উভয় কক্ষে পাশ হওয়ার সময় এই বিল নিয়ে তর্ক হয়েছিল মাত্র পাঁচ ঘণ্টা। এবং সেই সময় ১৪০ জনেরও বেশি বিরোধী সংসদ সদস্যকে সংসদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
কার্যকর হওয়া নতুন এই তিনটি অপরাধমূলক আইন হলো- ‘ইন্ডিয়ান পেনাল কোড’ (ভারতীয় দণ্ডবিধি)-এর পরিবর্তে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’, ‘ক্রিমিনাল প্রসিডিওর অ্যাক্ট’ (ফৌজদারি বিধি)-এর পরিবর্তে ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’ এবং ‘ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট’ (ভারতীয় সাক্ষ্য আইন)-এর বদলে ‘ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম’
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছিলেন, আইনে এতদিন সাজার কথা বলা ছিল কিন্তু নতুন আইনে ‘সাধারণ মানুষের ন্যায়ের কথা বলা হয়েছে’।
মোদী সরকারের দাবি- নতুন আইনে নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষা, নারী ও শিশু সুরক্ষা, ন্যায় বিচার পাওয়া, সংস্কারের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। জোর দেওয়া হয়েছে অভিযুক্তদের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রেও।
যদিও আইনজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীদের মত কিন্তু একেবারে আলাদা। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী কলিন গোঞ্জালভেস বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “শুনে হতবাক হয়েছিলাম যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বলেছিলেন ঔপনিবেশিক দমনমূলক আইনকে বদলে ফেলতে এই নতুন আইন বলবৎ করা হচ্ছে! কারণ এই আইন ব্রিটিশ আইনের চেয়ে দশগুণ খারাপ।”
“কল্পনা করা যায় যে স্বাধীন ভারতে এমন আইন বলবৎ করা হচ্ছে যা ব্রিটিশ আমলের চেয়েও বেশি দমনমূলক। এবং এই সমস্ত কিছুই করা হচ্ছে না কি ঔপনিবেশিক আইন থেকে মুক্তি পাওয়ার আড়ালে।”
মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মী এবং এপিডিআর-এর সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূর বলেন, “এই আইন কিন্তু মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে ভীষণভাবে ক্ষুণ্ন করবে। পুলিশের হাতে ব্যাপক ক্ষমতা তুলে দেওয়ার ফলে ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে।”
সৌ: বিবিসি
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct