আপনজন ডেস্ক: শক্তি–সামর্থ্যের বিচারে ভারত ও ইংল্যান্ডকে বেশির ভাগ মানুষই হয়তো রেখেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকাকেও আগেভাগেই বাদ দিয়ে দেওয়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু আফগানিস্তানকে নিয়ে এত দূর ভেবেছেন, এমন লোক হয়তো খুব বেশি নেই। বিশ্বমঞ্চে বড় কিছুর আভাস গত বছরই দিয়ে রেখেছিল আফগানিস্তান। ওয়ানডে বিশ্বকাপে হারিয়েছে ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো দলকে। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ২০১ রানের অতিমানবীয় ইনিংসটা না খেললে সেবারই সেমিফাইনালের দৌড়ে ভালোভাবে টিকে থাকত। ৭ মাস আগের আক্ষেপ ভুলে এবারের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ঠিকই শেষ চারে জায়গা করে নিল আফগানরা। অথচ সুপার এইটে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে আফগানিস্তান বড় ব্যবধানে হেরেছিল। বিশ্বকাপের সহ–আয়োজক ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে হার আরও বাজেভাবে। তবে এর আগেই তারা হেসেখেলে শেষ আটে উঠে গিয়েছিল। উগান্ডা ও পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে বড় ব্যবধানে জয় প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু সব ধরনের বিশ্বকাপ মিলিয়ে গত ৬ আসরের প্রতিটিতে সেমিফাইনালে খেলা নিউজিল্যান্ডকে মাত্র ৭৫ রানে গুটিয়ে দিয়ে ৮৪ রানের জয়টা ক্রিকেট বিশ্লেষকের নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করে।
গ্রুপ পর্বের বাধা পেরোনোর পথে কিউইবধ আর সুপার এইটের বাধা টপকানোর পথে অস্ট্রেলিয়াবধ, আরেকটি আফগান–রূপকথা লিখতে রশিদ খানের দল হয়তো তাসমান সাগরপারের দুই প্রতিবেশীকে ‘টার্গেট’ করে রেখেছিল! সব ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে ওঠা একমাত্র দল হলে কী হবে, দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো জয়ই ঠিক স্বাচ্ছন্দ্যময় ছিল না। শুরুতে অনেকে হয়তো ভেবেছিলেন, নিউইয়র্কের মতো ড্রপ ইন পিচে টানা ৩ ম্যাচ খেলতে হয়েছে বলেই ডি কক–রাবাদা–ক্লাসেনরা নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারেননি।
তবে নিউইয়র্কের বাইরে গিয়েও প্রোটিয়ারা জয়ের ধারা যেমন অব্যাহত রেখেছে, একই সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাও চালিয়ে যেতে হয়েছে। লঙ্কানদের ৭৭ রানে অলআউট করে দিলেও এইডেন মার্করামের দলের জিততে লেগেছে ১৬.২ ওভার। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে খেলতে হয়েছে ১৯তম ওভার পর্যন্ত। আম্পায়ারের একাধিক সিদ্ধান্ত পক্ষে না গেলে বাংলাদেশের কাছেই হয়তো হারতে হতো প্রোটিয়াদের। আর নেপালকে অবিশ্বাস্যভাবে ১ রানে হারানো নিয়ে তো এখনো চর্চা হতে পারে।
গ্রুপ পর্বে চারে–চারের পর সুপার এইটে তিনে–তিন। শেষ আটে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম জয় পেয়েছে টুর্নামেন্টের আরেক সহ–আয়োজক ও বিশ্বকাপ আবির্ভাবেই চমকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে। প্রোটিয়াদের পরের জয়টা টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
দারুণ সেই জয়েও অবশ্য ডি কক–ক্লাসেনদের সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত হয়নি। কারণ, নেট রান রেটে বেশ পিছিয়ে ছিল। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচটা তাই হয়ে দাঁড়িয়েছিল অলিখিত ‘কোয়ার্টার ফাইনাল’। বৃষ্টিবিঘ্নিত সেই ম্যাচের শেষ ওভারে জিতে রাসেল–পুরানদের হৃদয় ভাঙে দক্ষিণ আফ্রিকা।
এক দশক ধরে বৈশ্বিক শিরোপা জিততে না পারা ভারতও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ‘চোক’ করে চলেছে। তবে তা নকআউট পর্বে। এর আগের বাধাগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হেসেখেলে উতরে যায় তারা। তাই রোহিত শর্মার দল সেমিফাইনালে উঠতে না পারলেই বরং তা হতো এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় অঘটন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct