আপনজন ডেস্ক: মুম্বইয়ের একটি কলেজে হিজাব, বোরকা ও নিকাব পরা নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ৯ ছাত্রীর দায়ের করা পিটিশন খারিজ করে দিল বম্বে হাইকোর্ট। হিজাব, বোরকা ও নিকাব ছাড়াও ড্রেস কোডে কলেজ চত্বরে স্টোল, ক্যাপ ও ব্যাজ পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বিচারপতি এ এস চান্দুরকর এবং বিচারপতি রাজেশ পাটিলের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, এনজি আচার্য এবং ডি কে মারাঠে কলেজ অফ আর্টস, সায়েন্স অ্যান্ড কমার্সের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে আগ্রহী নয়।
এই নজন শিক্ষার্থী চেম্বুর ট্রম্বে এডুকেশন সোসাইটি দ্বারা পরিচালিত কলেজে বিজ্ঞান ডিগ্রি কোর্সের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বর্ষে পাঠরতা। গত ১৪ জুন কলেজের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা।
আবেদনকারীরা বলেন, যে এই পদক্ষেপটি তাদের গোপনীয়তা এবং পছন্দের মৌলিক অধিকারের পাশাপাশি তাদের ধর্ম পালনের অধিকারও লঙ্ঘন করেছে। তারা এই নিষেধাজ্ঞাকে “স্বেচ্ছাচারী, অযৌক্তিক, খারাপ এবং বিকৃত” বলে অভিহিত করেছে।
কলেজের ভেতরে ও বাইরে বেশ কয়েক বছর ধরে নিকাব ও হিজাব পরে আসছেন বলেও দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
গত সপ্তাহে এক শুনানিতে কলেজের সিনিয়র অ্যাডভোকেট অনিল আন্তুরকর আদালতকে জানান, ধর্মীয় প্রতীক প্রদর্শন এড়াতেই ড্রেস কোড জারি করা হয়েছে। আন্তুরকর আরও বলেন, এই নিষেধাজ্ঞাটি মুসলমানদের লক্ষ্য করে নয় এবং এটি সমস্ত ধর্মীয় প্রতীকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী আলতাফ খান ২০২২ সালের কর্ণাটক হাইকোর্টের রায়ের কথা তুলে ধরেন যা রাজ্য জুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে হিজাব পরার নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছিল। নির্দেশে বলা হয়েছিল, পড়ুয়াদের স্কুল ও প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ইউনিফর্ম পরতে হবে।
খান উল্লেখ করেন, ২০২২ সালের রায়টি কেবলমাত্র সেই প্রতিষ্ঠানগুলিতে হিজাব নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছিল যেখানে শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম পরা বাধ্যতামূলক ছিল। এনজি আচার্য এবং ডি কে মারাঠে কলেজ অফ আর্টস, সায়েন্স অ্যান্ড কমার্স ইউনিফর্ম না থাকা সত্ত্বেও ড্রেস কোড জারি করেছিল।
খান আরও বলেন, যে মুম্বাই কলেজের সিদ্ধান্তটি হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইমেলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জানানো হয়েছিল এবং এতে কোনও আইনি কর্তৃপক্ষের সমর্থন ছিল না। অন্যদিকে কর্নাটকে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল প্রাক্তন বিজেপি নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার।
আদালত অবশ্য বলেছে, কলেজের ড্রেস কোডের প্রেসক্রিপশন কীভাবে সংবিধানের ১৯(১)(এ) (বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা) এবং ২৫ (ধর্ম পালনের স্বাধীনতা) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছে তা তারা দেখতে পাচ্ছে না।
বিচারপতিরা বলেন, আমাদের মতে, ভারতীয় সংবিধানের ১৯(১) (এ) এবং ২৫ অনুচ্ছেদের অধীনে আবেদনকারীদের দাবি করা অধিকারকে লঙ্ঘন করার জন্য নির্ধারিত পোশাকবিধি থাকতে পারে না। হিজাব, নকাব ও বোরকা পরা তাদের ধর্মের অপরিহার্য প্রথা বলে আবেদনকারীদের এই যুক্তিও মানতে নারাজ বেঞ্চ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct