আপনজন ডেস্ক: শৈশব কেটেছে পাকিস্তানের শরণার্থীশিবিরে। কোথায় বাড়ি, কোথায় ঘর, কীই–বা ঠিকানা—১১ বছর বয়স পর্যন্ত নিজের এ পরিচয়টাও জানতেন না। যখন জেনেছেন, শুনেছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত নিজ দেশ আফগানিস্তানের কথা। তবুও ফিরতে চেয়েছেন, পরিবারের পুরোনো কাপড়ের ব্যবসার হাল ধরতে চেয়েছেন। কিন্তু পারেননি। কীভাবে পারবেন?
তখন তো ‘কাছা ঘাড়ি’ শরণার্থীশিবির থেকে বের হওয়াই ছিল তাঁদের জন্য কঠিন। মৌলিক চাহিদা মিটিয়ে বেঁচে থাকার জন্যই প্রতিদিন লড়াই করতে হতো তাঁর পরিবারকে। লড়াই করে জীবন এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে বলেই হয়তো বডিবিল্ডার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। গল্পটা আফগান অলরাউন্ডার গুলবদিন নাইবের। নিজের আসল বাড়ির আঙিনা থেকে বহুদূরে, পরবাসেই ক্রিকেটের হাতেখড়ি হয় তাঁর। কে জানত, সেই ছেলেটার হাত ধরেই একদিন অস্ট্রেলিয়া–বধের গল্প লিখবে আফগানরা, গড়বে ইতিহাস! সেটাও আবার বিশ্বকাপের মঞ্চে, পূর্ণ শক্তির অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। আজ ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন আফগান অলরাউন্ডার, যা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগার। তিনি আউট করেছেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিস, টিম ডেভিড ও প্যাট কামিন্সকে।
অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য ছিল ১৪৯ রান, এমন পরিস্থিতিতে ৩২ রানে ৩ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। সেখান থেকে ৩৯ রানের জুটি গড়েন ম্যাক্সওয়েল ও স্টয়নিস। মূলত এরপরই গুলবদিন ম্যাচের ভাগ্য বদলে দেন। তাঁর বাউন্সারে ইনিংসের ১১তম ওভারে আউট হন ছন্দে থাকা স্টয়নিস। টিম ডেভিডও উইকেটে থিতু হতে পারেননি। নিজের পরের ওভারে তাঁকেও আউট করেছেন গুলবদিন। তবু ম্যাক্সওয়েল ছিলেন!
সেই ম্যাক্সওয়েল, যার কারণে সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়াকে ২৯২ রানের লক্ষ্য দেওয়ার পর ৯১ রানে ৭ উইকেট তুলে নিয়েও জিততে পারেনি আফগানরা। একাই করেছিলেন অপরাজিত ২০১ রান। সেদিন গুলবদিন আফগানিস্তান দলে ছিলেন না। আজ মাঠে থেকে তেমনটা তিনি হতে দেননি। পরের ওভারেই ৫৯ রান করা ম্যাক্সওয়েলকে ফিরিয়েছেন। এরপর আউট করেছেন কামিন্সকে। টানা ৪ ওভারের স্পেলে ৪ উইকেট নেওয়া গুলবদিন শেষ দিকে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়ে ফেরান অ্যাশটন অ্যাগারকে। জানিয়ে রাখতে হচ্ছে, এই ক্যাচটি নেওয়ার আগে নিজের শেষ ওভার খানকিটা চোট নিয়েই করেছিলেন তিনি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct