আপনজন ডেস্ক: তেরো বছর আগে, ২১ জুলাইয়ের বৃষ্টিভেজা দুপুরে ব্রিগেড প্যারেড ময়দান থেকে ক্ষমতায় আসার কয়েক মাস পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দলীয় সমর্থকদের বলেছিলেন, তিনি বাংলার “উন্নয়নের” জন্য ভূতের মতো পরিশ্রম করছেন।
আর সোমবার মুখ্যমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রিসভার কয়েকজন সহকর্মী, মুষ্টিমেয় বিধায়ক এবং আমলাদের কাছে জানতে চান তিনি বাংলার শহর ও শহরগুলির রাস্তাগুলিতেও ঝাড়ু দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে কিনা।
সোমবার নবান্নে এক বৈঠকে মমতা বলেন, কিছু ব্যক্তির কাজের জন্য সরকার বদনাম করবে না। টাকা তোলার মাস্টার চাইছি না। জনসেবক চাইছি। আগামি দিন তরাই টিকিট পাবে।
সোমবারের বৈঠকে সিপিএম ও কংগ্রেস পরিচালিত দুটি পুরসভা নদিয়ার তাহেরপুর ও পুরুলিয়ার ঝালদহের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
মমতার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল বাংলার ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ২৯টি আসনে বিরোধীদের পরাজিত করলেও ফলাফলের ক্ষুদ্র বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূল ততটা স্বস্তিতে নেই।
কলকাতার দুটি আসনে তৃণমূল জিতলেও ৯৩টি ওয়ার্ডে এগিয়ে এবং কলকাতা পুরসভার ৪৮টি ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে ছিল।
বোলপুর, গোবরডাঙা, কৃষ্ণনগর, বালুরঘাট, রায়গঞ্জ, বর্ধমান, ইংরেজবাজার, ঝাড়গ্রাম, বারাসত, অশোকনগর, মধ্যমগ্রাম, বনগাঁ, কাটোয়া, কালনা, আলিপুরদুয়ার, বালুরঘাট প্রভৃতি পুরসভাতেও এগিয়ে রয়েছে বিজেপি।
শহরাঞ্চলে তৃণমূলের খারাপ ফলের পেছনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের, বিধায়ক, কাউন্সিলর, পঞ্চায়েত সদস্য এবং আমলাদের একাংশকে দায়ী করেছেন মমতা।
তাঁর কথায়, মানুষ পুরসভায় পরিষেবার জন্য যান। অধিকাংশ পঞ্চায়েত ও পুরসভা মানুষের জন্য কাজ করছে না। জবরদখলকে উৎসাহিত করা হচ্ছে, অবৈধ ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। সোমবার হাতে একগুচ্ছ কাগজ নিয়ে বলেন মমতা, যা তিনি বারবার উল্লেখ করেছেন।
আজ আমার কথা বলার পালা, তোমার কথা শোনার। মানুষ পরিষেবা না পেলে পঞ্চায়েত-পুরসভার প্রয়োজন হবে কেন? পুরসভা শুধু আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই কর বাড়ায়।
মমতা বলেন, ২০১১ সাল থেকে তাঁর সরকার নগরোন্নয়নের জন্য ৫১,৫০০ কোটি টাকা দিয়েছে। আবর্জনার ভ্যাট উপচে পড়ছে, বেআইনি পার্কিং ব্যাপক, সংযোজিত এলাকায় কোনও উপযুক্ত রাস্তা নেই। এখন থেকে বিপথগামী কর্মকর্তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে।
রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বোসের বিরুদ্ধে রাজারহাটে জবরদখলে উৎসাহ দেওয়ার অভিযোগ এনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বালি পুরসভাকে অবহেলার অভিযোগে অভিযুক্ত মহকুমা আধিকারিক অমৃতা রায় বর্মনের নাম নেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের প্রতিটি অংশে একাধিক স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সাল থেকে মমতার নেতৃত্বে বাংলায় ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল এবং কাগজে-কলমে তাদের বর্তমান শক্তি ২১৩।
বিজেপি থেকে বেশ কয়েকজন দলত্যাগী যোগ করলে দলের ঝুলিতে আরও অন্তত ১০ জন বিধায়ক রয়েছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct