আপনজন ডেস্ক: ভারতের নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন হয়েছে। এবারও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাবেন অমিত শাহ। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এবারও থাকছে রাজনাথ সিংয়ের হাতে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এস জয়শঙ্করের ওপরই আবারও আস্থা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গুরুত্বপূর্ণ এই তিন মন্ত্রকের মতো দেশটির অর্থমন্ত্রীর পদেও পরিবর্তন আসেনি। নতুন সরকারেও অর্থ মন্ত্রক সামলাবেন নির্মলা সীতারমন।রবিবার সন্ধ্যার পর নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি। এবার লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়া বিজেপিকে গঠন করতে হয়েছে জোট সরকার। এনডিএ জোটের শরিক দলগুলোকে মন্ত্রিসভায় পদ দিতে হয়েছে তাঁকে।তবে, এবারের মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ভারতের স্বাধীনতা-উত্তর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে শপথ নেওয়া মন্ত্রী পরিষদে মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজন প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এই প্রথম কোনেও মুসলিম সাংসদ মোদি মন্ত্রিসভায় শপথ নেননি।রবিবার বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি ভারতের ১৫তম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করে ইতিহাস তৈরি করেন। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। জওহরলাল নেহরুর পর তিনিই প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি টানা তিন মেয়াদে কেন্দ্রীয় সরকারের নেতৃত্ব দেন।এবার সেই নেতৃত্বে ঠাঁই পেল না কোনও মুসলিম সদস্য।মোদি মন্ত্রিসভার শেষ মুসলিম সাংসদ ছিলেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি। নকভি ২০২২ সালে রাজ্যসভায় পুনরায় নির্বাচন না করার কারণে আসনটি খালি পড়ে রয়েছে। ২০১৪ সালে নাজমা হেপাতুল্লাহ মোদি সরকারের প্রথম মেয়াদে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন। ২০১৯ মুখতার আব্বাস নকভি শপথ নেন এবং তিনি সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রীও হন।
১৯৯৯ সালে, অটল বিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভায় দুই মুসলিম মন্ত্রী ছিলেন। তারা হলেন শাহনওয়াজ হুসেন এবং ওমর আবদুল্লাহ। ১৯৯৮ সালে, নকভিকে বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী মোদি ছাড়াও, এবার ৭১ জন শপথ নেওয়া মন্ত্রীর মধ্যে ৩০ জন ক্যাবিনেট মন্ত্রী, পাঁচজন স্বাধীন দায়িত্ব পালন করবেন এবং ৩৬ জন প্রতিমন্ত্রী হবেন, যাদের কেউই মুসলিম সম্প্রদায়ের নয়। তবে এবার ভারতীয় পার্লামেন্টে প্রচুর মুসলিম প্রতিনিধি দেখা যাবে, বেশিরভাগই বিজেপি বিরোধী দলের হয়ে সংসদে বসবেন। ইন্ডিয়া জোট থেকে ২১ জন সহ ২৪ জন মুসলিম প্রার্থী সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। ইন্ডিয়া জোটের বাইরে মুসলিম সাংসদরা হলেন মজলিশে ইত্তেহাদ-ই-মুসলিমিনের সভাপতি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি, এবং দুই নির্দল সাংসদ লাদাখ থেকে ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ ও মুহাম্মদ হানিফা জম্মু ও কাশ্মীর থেকে।একইভাবে, কোনো নির্বাচিত শিখ বা খ্রিস্টান সাংসদ নেই। তবে, অনির্বাচিত শিখ এবং খ্রিস্টান এমপি, রনিত সিং বাট্টো এবং জর্জ কুরিয়েন মোদি মন্ত্রিসভায় প্রবেশাধিকার পেয়েছেন। পাঞ্জাব কংগ্রেসের প্রধান অমরিন্দর রাজা সিং ওয়ারিংয়ের কাছে বাট্টো হেরে গেলেও, করিন বিজেপির সঙ্গে আছেন । দুজনেই শপথ নিয়েছেন এবং মন্ত্রিত্বের প্রস্তাবও পেয়েছেন। উল্লেখ্য, বিট্টু হলেন পাঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিনত সিংয়ের নাতি, যিনি খালিস্তানি সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন। রনিত সিং বিট্টু আগে কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কিন্তু এ বছর বিজেপিতে যোগ দেন জোট শরিক হিসেবে বিহারের লোক জনশক্তি দলের (রাম বিলাস) প্রেসিডেন্ট চিরাগ পাসওয়ান পেয়েছেন খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রকের দায়িত্ব। অভিনেতা থেকে রাজনীতিতে আসা চিরাগ পাসওয়ান (৪১) এবারই প্রথম ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন।
আরেক জোট শরিক বিহারের হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চা-সেক্যুলার (এইচএম-এস) দলের প্রতিষ্ঠাতা জিতেন রাম মাঞ্জিকে ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প মন্ত্রকের মন্ত্রী করা হয়েছে। নরেন্দ্র মোদির এবার সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন জনতা দল (ইউনাইটেড) জেডি–ইউ নেতা রাজীব রঞ্জন সিংকে (লালন সিং) পঞ্চায়েত রাজ মন্ত্রক এবং মৎস্য, পশু পালন ও ডেইরি মন্ত্রকের মন্ত্রী করা হয়েছে। বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা স্বাস্থ্য মন্ত্রক সামলাবেন। নতুন সরকারেও সড়ক পরিবহন মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলাবেন নীতীন গড়করি। এবার এখানে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন অজয় তামতা ও হর্ষ মালহোত্রা। কৃষি ও কৃষককল্যাণ মন্ত্রকের দায়িত্ব পেয়েছেন শিবরাজ সিং চৌহান। পর্যটন ও সংস্কৃতি দুই মন্ত্রকের মন্ত্রী হয়েছেন গাজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত, অশ্বিনী বৈষ্ণ পেয়েছেন রেলওয়ে, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক এবং ইলেকট্রনিকস ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের দায়িত্ব, বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী হয়েছেন কিনজারাপু রামমোহন নাইডু, মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের মন্ত্রী হয়েছেন অন্নপূর্ণা দেবী। নগরোন্নয়ন মন্ত্রক ও বিদ্যুৎ মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মনোহর লাল খাট্টারকে, ভারী শিল্প এবং ইস্পাত মন্ত্রকের মন্ত্রী এইচ ডি কুমারাস্বামী, পীযূষ গয়াল বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী, ধর্মেন্দ্র প্রধান শিক্ষামন্ত্রী, সর্বানন্দ সোনোয়াল বন্দর, জাহাজ ও নৌপথ মন্ত্রক, সোশ্যাল জাস্টিস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বীরেন্দ্র কুমারকে, প্রহ্লাদ যোশী খাদ্য এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি মন্ত্রণলালয়ের দায়িত্বে, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীবিষয়ক মন্ত্রকের মন্ত্রী জুয়াল ওরাম, গিরিরাজ সিং বস্ত্র মন্ত্রী, জ্যোতিরাদিত্য এম সিন্ধিয়া টেলিকম মন্ত্রক, ভুপেন্দর যাদব পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক, কিরেন রিজিজুকে সংসদবিষয়ক মন্ত্রক এবং সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া হরদীপ সিং পুরি পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসমন্ত্রী, মানসুখ মান্দাভিয়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রকের মন্ত্রী, জি কিষান রেড্ডি কয়লা মন্ত্রক ও খনি মন্ত্রকের মন্ত্রী এবং সি আর পাতিল জল সম্পদ মন্ত্রকের মন্ত্রী হয়েছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct