নিজস্ব প্রতিবেদক, কলকাতা, আপনজন: শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ বক্সী হোক বা সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা গোগ্রাসে পড়েছে। বাংলা সাহিত্যের ক্লাসিক গল্প উপন্যাসের অধিকাংশই তার পড়া। তবলা ও গীটার বাজানোও তার শেখা আছে। কিন্তু এগুলি সবই মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে অর্থাৎ ক্লাস নাইন পর্যন্তই করতে পেরেছে। একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর থেকে এগুলোর প্রায় সব কিছুই ছেড়ে দিতে হয়। তবে আল-আমীনের হস্টেল থেকে ছুটিতে বাড়ি গেলে তার প্রিয় শখ তবলা ও গীটার নিয়ে এক আধবার বসে পড়ত মহ. সাহিদ।
আল-আমীনের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে জেইই অ্যাডভান্সের সদ্য প্রকাশিত রেজাল্টে সর্বোচ্চ স্থানে আছে ব্যতিক্রমী মেধাবী সাহিদ। তার সর্বভারতীয় ব়্যাঙ্ক ২৩৭২। হুগলী জেলার আরামবাগ থানার নজরুল পল্লীর সাহিদের পরিবারের পাশাপাশি আল-আমীন মিশনেও স্বভাবতই আজ খুশির পরিবেশ। জেইই মেইন থেকে জেইই অ্যাডভান্স পর্যন্ত সাহিদের রেজাল্ট বিস্ময়কর উচ্চতার। মিশনের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সবগুলোতেই সর্বোচ্চ। তার অতুলনীয় সাফল্যের তালিকা- জেইই মেইন-এ ৯৯.৮৯ পার্সেন্টাইল নম্বর, উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৯০ নম্বর পেয়ে রাজ্য স্তরে সপ্তম, নিট-এ ৭০০ নম্বর পেয়ে সর্ব ভারতীয় ব়্যাঙ্ক ২৩৩২ এবং রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্সে ব়্যাঙ্ক ১৪০। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায়ও সাহিদ রাজ্যে দশম স্থান অধিকার করে।
প্রাণী চিকিৎসক আব্বা মহ. খাইরুল আনাম, মা সালেমা খাতুন ও বর্ধমান মেডিকেল কলেজে এম.বি.বি.এস. পাঠরত আল-আমীনের প্রাক্তন ছাত্রী সাহিদের দিদি সাহিনা পারভিনের উৎসাহ, আল-আমীন মিশনের শিক্ষকদের গাইড ও মিশনের হস্টেলে পড়াশোনার আদর্শ পরিবেশ তার সাফল্যের মূল অনুঘটক বলে জানায় সাহিদ। রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স, জেইই মেইন এবং জেইই অ্যাডভান্সের মতো পরীক্ষায় অতুলনীয় ব়্যাঙ্ক করলেও সাহিদের আব্বা-মায়ের ইচ্ছে তাদের ছেলে এইমস থেকেই ডাক্তারি পড়ুক। যদিও সাহিদের ইচ্ছে আইআইটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ও ভবিষ্যতে উচ্চতর গবেষণাকর্মে মনোনিবেশ করা। সাহিদ জানায়, আল-আমীনে ভর্তি হওয়ার জন্যে ক্লাস ফাইভ থেকেই প্রত্যেক বছর প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম স্থান পেলেও মিশনের সেক্রেটারি স্যার তাকে ভর্তি করতেন না কিন্তু বরাবরই বলতেন তিনি আমার সাফল্যের জন্যে দোওয়া করছেন। শেষমেশ মাধ্যমিকের পর একাদশ শ্রেণিতে তিনি মিশনের নয়াবাজ শাখায় ভর্তি করে নেন। এই শাখার সুপার খন্দকার মহিউল হকের বিশেষ ব্যবস্থাপনা ও পড়াশোনার সুন্দর পরিবেশ তার সাফল্যের বিশেষ সহায়ক হয়েছে।
এছাড়াও খলিশানী শাখা থেকে মুর্শিদাবাদ জেলার ভগবানগোলা ব্লকের গোপালপুরের মুস্তাক মামুদ, ব়্যাঙ্ক ১৫৬৪৯; নয়াবাজ শাখা থেকে বীরভুম জেলার সিউড়ি থানার পাথরচাপুড়ি গ্রামের আবরার আহম্মদ খান, ব়্যাঙ্ক ১৬৯৭৬; খলতপুর শাখা থেকে লালগোলা ব্লকের কাহার পাড়ার কৃষক পরিবারের মহ. মেহেবুব আলম, ব়্যাঙ্ক ১৭৯৭১ এবং ওই জেলারই তৌফিক মামুদ, ব়্যাঙ্ক ১৮৩৪০ প্রমুখ উল্লেখযোগ্য রেজাল্ট করেছে।
জেইই অ্যাডভান্সে সফল পড়ুয়াদের মিশনের সাধারণ সম্পাদক এম নুরুল ইসলাম মুবারকবাদ জানিয়েছেন। তাঁর বিশ্বাস, মেডিকেলের পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রেও মিশনের ছাত্র-ছাত্রীদের সাফল্য রাজ্যের সুবিধা বঞ্চিত পরিবারে অনুপ্রেরণার সহায়ক হবে।
আল-আমীন মিশন স্টাডি সার্কলের ডিরেক্টর দিলদার হোসেনও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি আশাবাদী যে মিশনের ছেলেমেয়েরা আগামী দিনে আইআইটি ও ইঞ্জিনিয়ারিঙয়ে আরও অধিক পরিমাণে সফল হবে। তিনি বলেন দুনিয়া জুড়েই প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের চাহিদা প্রবল হচ্ছে। সে কারণে মিশনের তরফেও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কোচিং নিয়ে উপযুক্ত পরিকল্পনা ও উন্নততর ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা হচ্ছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct