আপনজন ডেস্ক: টানা তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন নরেন্দ্র মোদি। রবিবার সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনের আঙিনায় এই শপথ গ্রহণ হয়। নরেন্দ্র মোদিকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
এই অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের প্রায় আট হাজার বিশিষ্টজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। অতিথিদের মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন।
মোদি ছাড়াও রাষ্ট্রপতি ভবনে ক্যাবিনেট মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন রাজনাথ সিং, অমিত শাহ, নিতিন গড়করি, নির্মলা সীতারামন এবং এস জয়শঙ্কর। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু মোদি এবং ৩০ জন ক্যাবিনেট মন্ত্রীকে গোপনীয়তার শপথ বাক্য পাঠ করান।
সাদা কুর্তা ও চুড়িদার ও নীল চেক জ্যাকেট পরে ঈশ্বরের নামে শপথ নেন ৭৩ বছর বয়সি মোদি। জওহরলাল নেহরুর পর মোদী হলেন দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি টানা তৃতীয়বারের জন্য নির্বাচিত হলেন।
সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে, যার ফলে তারা সেই শরিকদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে যাদের সাংসদরাও ক্যাবিনেট মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন - জেডি (এস) নেতা এইচ ডি কুমারস্বামী, এইচএএম (সেকুলার) প্রধান জিতন রাম মাঝি, জেডি (ইউ) নেতা রাজীব রঞ্জন সিং ‘লালান’, টিডিপির কে রামমোহন নাইডু এবং এলজেপি-আরভি নেতা চিরাগ পাসোয়ান। এই পাঁচ জোটের প্রত্যেকেই একটি করে ক্যাবিনেট বার্থ পেয়েছিল। কুমারস্বামী এবং মাঝি যথাক্রমে কর্নাটক এবং বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
বিজেপির সভাপতি জে পি নাড্ডা পাঁচ বছর পর মন্ত্রিসভায় ফিরেছেন। অন্যদিকে মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান এবং হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর মোদী মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ।
বিজেপি নেতা পীযূষ গোয়েল, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, ধর্মেন্দ্র প্রধান এবং ভূপেন্দ্র যাদব, যাঁরা আগে রাজ্যসভায় ছিলেন, কিন্তু এখন লোকসভায় নির্বাচিত হয়েছেন, তারাও মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছেন।
আসামের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল, অশ্বিনী বৈষ্ণব, বীরেন্দ্র কুমার, প্রহ্লাদ যোশী, গিরিরাজ সিং, জুয়াল ওরাম, গুজরাট বিজেপি সভাপতি সি আর পাতিল, মনসুখ মাণ্ডব্য, জি কিষাণ রেড্ডি, হরদীপ সিং পুরি, বিজেপি থেকে কিরেন রিজিজু, অন্নপূর্ণা দেবী এবং গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত ক্যাবিনেট মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আগে মোদি মনোনীত মন্ত্রীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেন, জনগণের বিশাল প্রত্যাশা রয়েছে এবং প্রত্যেককেই তা পূরণ করতে হবে। তাই মোদির পরামর্শ, নম্র হোন, কারণ সাধারণ মানুষ তাদেরই ভালবাসেন এবং সততা ও স্বচ্ছতার প্রশ্নে কখনও আপস করেন না।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়, প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, টিডিপি সভাপতি চন্দ্রবাবু নাইডু এবং জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমার। এদিনের এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে। যদিও অংশ নেননি তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও প্রতিনিধি।
এছাড়া শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বলিউড অভিনেতা শাহরুখ খান, রজনীকান্ত, শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি ও গৌতম আদানি।
মোদির তৃতীয় মেয়াদ, যা সর্বদা নিশ্চিতভাবে বলা হয়েছিল বিভিন্ন বুথ ফেরত সমীক্ষায়। উত্তরপ্রদেশ এবং রাজস্থানের মতো তার শক্ত ঘাঁটিগুলিতে বিজেপিকে ইন্ডিয়া জোট কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে ফেলে দেওয়ায় তারা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।
বিজেপি ২৪০টি আসন লাভ করে সবার শীর্ষে থাকলেও তাদের শরিক দলগুলির উপর নির্ভর করেই সরকার গড়তে হচ্ছে। কংগ্রেস বিজেপির এই আসন হ্রাসকে “নৈতিক পরাজয়” হিসাবে উপস্থাপন করছে। ইন্ডিয়া জোটে কংগ্রেস একাই ৯৯টি আসন পেয়ে বিরোধী দলের ভূমিকায় রয়েছে। যদিও কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন বিহারের দুই নির্দল সাংসদও।
২০২৪ নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ২৯৩টি আসন জিতেছে। মোদি এটাকে সবচেয়ে বড় সাফল্য দাবি করে বলেছেন, বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও একক বৃহত্তম দল।
এদিনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল ‘প্রচণ্ড’, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রভিন্দ কুমার জুগনাথ, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে এবং সিশেলসের ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ আফিফ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct