এম মেহেদী সানি, কলকাতা, আপনজন: অদূর ভবিষ্যতে কেন্দ্রে ইন্ডিয়া জোট প্রশাসনের দেখা যাবে বলে দাবি করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার বলেছেন, বিরোধী জোট আজ সরকার গঠনের দাবি নাও করতে পারে, তবে এর অর্থ এই নয় যে আগামীকাল তারা তা করবে না।তৃণমূল সাংসদ এবং প্রবীণ নেতাদের বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, যে তাঁর দল “অপেক্ষা করবে ও নজর রাখবে” পন্থা অবলস্বন করবে। তবে, “দুর্বল ও অস্থিতিশীল” বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানো হলে তিনি খুশি হবেন।তিনি বলেন, এটা কেউ ভাববেন না যে আজ ইন্ডিয়া জোট সরকার গঠনের দাবি জানায়নি মানে কালও করবে না। আমি অপেক্ষা করছি এবং পুরো বিষয়টির উপরে নজর রেখেছি। দেশে পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে।তিনি বলেন, নয়া সরকার অবশ্য আদতে ইন্ডিয়া জোটের হবে। কিন্তু যে কয়েকদিন থাকে । একটু সামলাতে দিন। একটু দেখতে দিন নিজেদের। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, দেখা যাক, ততদিন ওরা কী ভাবে (বিজেপি) সরকার চালায়।লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার একদিন পর ইন্ডিয়া জোট নয়াদিল্লিতে একটি বৈঠক করে এবং তারা জানায়, বিজেপি সরকার দ্বারা শাসিত সরকারকে জনগণ মেনে না নিলে “উপযুক্ত সময়ে যথাযথ পদক্ষেপ” নেওয়া হবে।তৃণমূল কংগ্রেস জানুয়ারিতে পশ্চিমবঙ্গে ইন্ডিয়া থেকে বেরিয়ে এসেছিল, তবে তারা জানিয়েছিল যে তিনি জাতীয় স্তরে বিরোধী ব্লকের অংশ হিসাবে থাকবে।তবে ৫ জুনের বৈঠকে হাজির ছিল তৃণমূল।সূত্রের খবর, এদিন সাংসদদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের নেতা-সাংসদদের বলেন, এনডিএ সরকার তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারবে না। বৈঠকে উপস্থিত তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, বৈঠকে মমতা দিদি আমাদের বলেছেন যে তিনি আত্মবিশ্বাসী যে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় এনডিএ সরকার বেশিদিন টিকবে না। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করে বলেন, কেন্দ্রে অস্থির ও দুর্বল বিজেপি সরকার বেশিদিন স্থায়ী হবে না। এনডিএ সরকার হবে অস্থিতিশীল। বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তারা শরিক দলের ওপর নির্ভরশীল। দেখা যাক, তারা তাদের শরিক দলের সঙ্গে কতদিন মিলেমিশে থাকতে পারে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, যেহেতু জনাদেশটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে, তাঁর এবার পদত্যাগ করা উচিত ছিল এবং অন্য কাউকে দায়িত্ব নেওয়ার অনুমতি দেওয়া উচিত ছিল।তিনি বলেন, দেশের পরিবর্তন দরকার; দেশ পরিবর্তন চায়। এই ম্যান্ডেট ছিল পরিবর্তনের জন্য। আমরা অপেক্ষা করছি এবং পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি। তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, বিজেপি নিজেরা বিল পাশ করাতে পারবে না। আগের মেয়াদে বিজেপি কোনও যথাযথ আলোচনা ছাড়াই নিজেরাই বিল পাশ করত। কিন্তু এবার তারা তা করতে পারবে না। তারা সংবিধান পরিবর্তন করতে পারবে না। এনডিএ শরিক জেডিইউ এবং টিডিপি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে মমতা বলেন, তারাও আমাদের বন্ধু। কে বলেছে ওরা আমাদের সঙ্গে নেই? নতুন সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে তৃণমূল যোগ দেবে না বলেও ঘোষণা করেন তিনি।তিনি বলেন, আমরা কোনো আমন্ত্রণ পাইনি, যোগ দিচ্ছিও না। কাল আমি দেশবাসীকে বার্তা দেব বিজেপিকে ভোট না দেওয়ার জন্য।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, লোকসভা ও রাজ্যসভার সাংসদরা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) প্রত্যাহারের দাবি জানাবেন।মমতা বলেন, তৃতীয় বার মোদী সরকারের হাতে পর্যাপ্ত সংখ্যা না থাকায় সংসদে তাদের চেপে ধরার কোনও সুযোগ ছাড়বে না তৃণমূল। জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি), অভিন্ন দেওয়ানি বিধির (ইউসিসি) মতো ক্ষেত্রে সরকারের তুমুল বিরোধিতা করা হবে। তিনি বলেন, এই লোকসভা আগের দুটি লোকসভার মতো হবে না, যেখানে তারা বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার কারণে বিল পাস করেছিল। আমরা বসে থাকার জন্য সংসদে যাচ্ছি না । আমরা সিএএ, এনআরসি বাতিলের দাবিতে সোচ্চার হব। আমরা কোনও এনআরসি বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চাই না। আমরা রাজ্যের বকেয়া টাকা দেওয়ার দাবি তুলব। তা মেটাতেই হবে। ভুয়ো এক্সিট পোল ব্যবহার করে কীভাবে শেয়ার বাজারকে প্রভাবিত করা হচ্ছে, তা নিয়েও তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।তৃণমূল সাংসদদের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে তৃণমূলের সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভার দলনেতা এবং কাকলি ঘোষ দস্তিদার লোকসভায় দলের উপনেতা হবেন। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় চিফ সচেতক হবেন।রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা হবেন ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং উপনেতা হবেন সাগরিকা ঘোষ। চিপ হুইপ হবে নাদিমুল হক।বহরমপুরে জয়ী ইউসুফ পাঠানকে ‘জায়ান্ট কিলার’ বলে উল্লেখ করেন।পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস ২৯টি, বিজেপি ১২টি এবং কংগ্রেস একটি আসনে জয়ী হয়েছে।মমতা বলেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিজেপি যদি মৌন বোঝাপড়া নিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়া অবাধ ও সুষ্ঠু হতে দিত, তাহলে আমাদের আসন সংখ্যা ৩৫-এ পৌঁছে যেত। কিন্তু বিজেপি সব উপায় অবলম্বন করেছে, যাতে অনেক আসনে মানুষের রায়ের প্রতিফলন না ঘটে।তৃণমূল সুপ্রিমো জানান, বিধানসভা আসনের নিরিখে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ১৬১টি বিধানসভায় এগিয়ে ছিল তৃণমূল। বিজেপি এগিয়ে ছিল ১২১টি আসনে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল ১৯২টি বিধানসভা আসনে তৃণমূল এগিয়ে রয়েছে, আর বিজেপি ৯৯টি আসনে বলে এদিন জানান মমতা।এবারে বিজেপি ২৪০টি লোকসভা আসন জিতলেও এনডিএ পেয়েছে ২৯৩টি আসন, যা ৫৪৩ সদস্যের বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ২৭২টি আসনের চেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে বেশি, যা মোদীর টানা তৃতীয়বারের জন্য শপথ নেওয়ার পথ প্রশস্ত করেছে, যা ১৯৬২ সালের পর কোনও ক্ষমতাসীন জোটের জন্য প্রথম। বিরোধী ইন্ডিয়া ব্লকও এবার ২৩৪টি আসন পেয়ে চমকপ্রদ লাভ করার পরে উজ্জীবিত।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct