নায়ীমূল হক, কলকাতা, আপনজন: ৫ জুন বুধবার বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে অনুসন্ধান কলকাতা আয়োজন করেছিল বাঙালি বিজ্ঞানীদের নিয়ে প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ আলাপচারিতা। ‘দাও ফিরে সে অরণ্য’ শীর্ষক এই আলাপচারিতায় অংশ নেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চার বিজ্ঞানী। বাংলাদেশ নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডক্টর বিধানচন্দ্র দাস, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত নদী বিশারদ অধ্যাপক ডক্টর মলয় মুখোপাধ্যায়, মেমফিস কলেজ অফ মেডিসিনের অধ্যাপক ডক্টর নেওয়াজেস মন্ডল এবং ভারতীয় কৃষিবিজ্ঞান সংস্থার প্রিন্সিপাল সায়েন্টিস্ট অধ্যাপক ডক্টর মতিয়ার রহমান খান। তাঁরা প্রত্যেকেই বলেন, প্রকৃতির ভারসাম্য ও জৈব বৈচিত্র্য রক্ষা কতটা জরুরি, তা আজ আমাদের সকলকে বুঝতে হবে। কেবলমাত্র শিক্ষিতরাই নন, সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। নইলে উন্নতি ও প্রগতির নামে আমরা যেভাবে স্বেচ্ছাচার করেছি, তার মূল্য চোকানোর দিন অতি নিকটে। বলা যায় আমরা খাদের প্রায় কিনারে পৌঁছে গিয়েছি। প্রকৃতির সুসামঞ্জস্যশীল গঠনের উপর আমরা হাত দিয়েছি। আমরা মরুভূমিকে বানাতে চাইছি সবুজ,শস্য, শ্যামলা। কৃত্রিমভাবে হয়তো আমরা তা করতেও পারি। তবে, তা কতটা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক! অবশ্যই ভাবার দিন এসে গিয়েছে।
আমেরিকার প্রতিটি স্কুল কলেজ শহরে এ ব্যাপারে সকলকে সচেতন করার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে বহু আগে থেকে। জলের অপচয়, খাদ্যের অপচয় ইত্যাদি রোধে বিভিন্ন রকমের পদক্ষেপ সেখানে নেওয়া হয়েছে। ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট বা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা মেনে চলার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর প্রায় সেখানকার সমস্ত পরিবার। বিজ্ঞানীরা আহ্বান জানান, প্রকৃতি তথা সৃষ্টির সকল সম্পদের পুনরুদ্ধার ও তার যথাযথ সংরক্ষণের দায়িত্ব নিতে হবে আমাদের সকলকে, ভাগাভাগি করে। প্রয়োজনে আমাদেরই স্বার্থে কড়া আইনও প্রণয়ন করতে হবে। আশার কথা দেরিতে হলেও, তা অতি দ্রুত বুঝতে শিখছি আমরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছোচ্ছেন। তাঁরা হিমবাহ ধ্বংস করতে দিতে আর রাজি নন।বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে অনুসন্ধান কলকাতা রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে আয়োজন করেছিল রচনা লেখা ও নিজে আঁকো প্রতিযোগিতা। ক্লাস ওয়ান থেকে টুয়েলভ পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল। এদিন প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। পাঠভবন সোসাইটির পক্ষ থেকে বিজয়ী প্রতিযোগীদেরকে পুরস্কৃত করার কথা ঘোষণা করা হয় এদিন। উত্তরবঙ্গের প্রান্তিক ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বেস এডুকেশনাল হাব করতে চলেছে মেধা অন্বেষা পরীক্ষা। তাদের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে অনুসন্ধান কলকাতা। এদিন মেধা অন্বেষা বা সায়েন্স ট্যালেন্ট-এর উপর একটি অনুশীলন পুস্তক প্রকাশ করেন তামিম ইসলাম। এদিন বিশ্ব পরিবেশ দিবস অনুষ্ঠানের সূচনা ও সমাপ্তি বক্তৃতা রাখেন অনুসন্ধান কলকাতার সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট সাংবাদিক বিশ্বনাথ দাশগুপ্ত। অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্ব ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষক ডক্টর কমল কৃষ্ণ দাস, অধ্যাপিকা অরুনিমা মহাপাত্র, মিতালী মুখার্জী, নাফিসা ইসমাত প্রমুখ। অনুসন্ধান কলকাতার উদ্যোগে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা বিজয়ী হয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ক্লাস ওয়ান থেকে ফোর অংকন প্রতিযোগিতায় প্রথম খাটুরা গার্লস প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রী সুজাস বিশ্বাস, দ্বিতীয় সালকিয়া গার্লস হাই স্কুলের ছাত্রী অনুষ্কা দোলুই, তৃতীয় হিন্দু স্কুলের সুভাদিত্য ঘোষ এবং লক্ষ্মী জনার্দনপুর আনন্দ লাল প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র শুভদীপ জানা। ক্লাস ফাইভ থেকে সিক্সের অঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রথম চম্পাহাটি নীলমণিকর বিদ্যালয়ের ছাত্র হীরক মন্ডল, দ্বিতীয় জুলিয়েন ডে স্কুল কল্যাণীর ছাত্র অভ্রনীল দাস, সাউথ এন্ড স্কুলের ছাত্র মাহমুদ সুলতান এবং সালকিয়া গার্লস হাই স্কুলের ছাত্রী আরাত্রিকা হাজরা। ক্লাস সেভেন থেকে ৮ এর অঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রথম চম্পাহাটি গার্লস হাই স্কুলের ছাত্রী পূর্বাশা মন্ডল, দ্বিতীয় সালকিয়া হিন্দু স্কুলের ছাত্র উদিত গুহ, তৃতীয় সরিষা রামকৃষ্ণ মিশন সারদা মন্দির গার্লস স্কুলের ছাত্রী অদিত্যা হালদার। ক্লাস নাইন- টেন রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম বারাসাত মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল হাই স্কুলের ছাত্র অরুনাভ মন্ডল, সালকিয়া গার্লস হাই স্কুলের ছাত্রী সুকন্যা দাস, এবং তৃতীয় ভোজেরহাট সারদা দেশপ্রিয় বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী নাজমিন আলম। ক্লাস ইলেভেন টুয়েলভ এর রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল হাই স্কুলের ছাত্র আকাশ দাস, দ্বিতীয় সালকিয়া হিন্দু স্কুলের ছাত্র জিৎ বিশ্বাস, এবং তৃতীয় বদনগঞ্জ স্কুলের ছাত্রী সুরঞ্জনা ঘোষ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct