আপনজন ডেস্ক: রাজ্যে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের ফর প্রকাশের পর তা নিয়ে এখন বিশ্লেষণ চলছে। রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে তৃণমুল পেয়েছে ২৯টি, বিজেপি ১২টি ও কংগ্রেস একটি। সিপিএমে বা বামেদের ভাগ্যে কোনও আসন জোটেনি। এই নিয়ে পরপর দুটি লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম বা বামেরা শূন্য হয়ে থাকল পশ্চিমবঙ্গে। যদিও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ২২, বিজেপি ১৮ এবং কংগ্রেস দু’টিতে জিতেছিল। ওই নির্বাচনের প্রেক্ষিতে এ রাজ্যে তৃণমূল এগিয়ে ছিল ১৬৪টি বিধানসভা আসনে। অন্য দিকে বিজেপি এগিয়ে ছিল ১২১টিতে। অন্য দিকে, কংগ্রেসের নটি বিধানসভা আসনে লিড থাকলেও বামেরা নেমে গিয়েছিল শূন্যে। কিন্তু ২২১ বিধানসভা নির্বাচনে সেই সমীকরণ মেলেনি।এবারের লোকসভা নির্বাচনের মতো ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনেও বুথ ফেরত সমীক্ষার আবাসকে ছাড়িয়ে গিয়ে তৃণমুল একাই পায় ২১৩টি আসন। যদিও পরে উপনির্বাচনে জঙ্গিপুর ও শামসেরগঞ্জ আসন দুটিও তারা পায়। আর বিজেপি থেমে যায় ৭৭টি আসনে। কংগ্রেস ও সিপিএম বা বামেরা কোনও আসন না পেলেও তাদের জোট সঙ্গী আইএসএফ ভাঙড় বিধানসভা আসনে জয়ী হয়। তাও অনেকে ফুরফুরার পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকী ফুরফুরার পরিবারের ভূমিকার কারণে আসনটি লাভ করেন বলে বলা হয়। ফলে, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে পরিণত হয় বিজেপি। যদি, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে চিত্রটি ছিল অন্যরকম। তৃণমূল ২১১টি কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিল। কংগ্রেস ৪৪ ও বাম দলগুলি ৩২টিতে জিতেছিল। বিজেপি মাত্র তিনটি আসন জিতেই ক্ষান্ত হয়েছিল। ২০২১ সালে সেই কংগ্রেস বা সিপিএম একেবারে হারিয়ে গেলেও ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিধানসভার নিরিখে খানিকটা প্রাণ পেয়েছে বলে তথ্য পরিসখ্যান বলছে। লোকসভা ভোটের নিরিখে রাজ্যে বিধানসভা আসনুগলিতে তৃণমূলের আসন সংখ্যা প্রায় ৩০টি কমেছে। তাদের সংখ্যা ২১৫ থেকে কমে ১৯২হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। আর বিজেপির লোকসভা নির্বাচনে আসন কমলেও বিধানসভা আসনের ভিত্তিতে সংখ্যা বেড়েছে। বিজেপি ৯০টি বিধানসভা কেন্দ্রে জিতেছে। একই সঙ্গে অন্য বিরোধী দল কংগ্রেস অনেকটাই প্রাণ পেয়েছে। রাজ্যের ১১টি বিধানসভা আসনে এগিয়ে রয়েছে কংগ্রেস। আর বেশ কিছু আসনে তারা বিজেপিকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। অপরদিকে তাদের জোটসঙ্গী সিপিএম একটি বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
যদিও, যে ভাঙড় কেন্দ্রে আইএসএফের পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকী জিতে গত বিধানসভা নির্বাচনে একাই কংগ্রেস-সিপিএম-আইএসএফ জোটের মুখরক্ষা করেছিলেন তা ধরে রাখতে পারলেন না লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে। লোকসভা নির্বাচনে দেখা গেছে উত্তরবঙ্গে বিজেপির প্রভাব। মুর্শিদাবাদ সহ উত্তরবঙ্গেই কংগ্রেস বা সিপিএম তাদের অস্তিত্ব প্রমাণ করেছে। অবশ্য সেক্ষেত্রে কংগ্রেসের পুরনো ঘাঁটি বলে পরিচিত মালদা ও মুর্শিদাবাদেই মূলত তারা তাদের ক্যারিশমা দেখাতে পেরেছে। সব মিলিয়ে কংগ্রেস ১১টি বিধানসভা আসনে বিজয় পেয়েছে। তার মধ্যে কংগ্রেস ৯টি আসনে প্রথম স্থানে থেকে দ্বিতীয় করে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। আর দুটি আসনে বিজেপি রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। কংগ্রেস মালদা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে চাঁচল. হরিশ্চন্দ্রপুর, মালতীপুর ও রতুয়া বিধানসভা আসনে এগিয়ে রয়েছে। চাঁচল বিধানসভা কেন্দ্রে লোকসভার কংগ্রেস প্রার্থী মোস্তাক আলম যেখানে পেয়েছেন ৬৭২৬৫ ভোট, সেখানে তৃণমূলের প্রসূন ব্যানার্জি পেয়েছেন ৬৬৯১১ ভোট। আর বিজেপির খগেন মুর্মু পেয়েছেন ৫০৬২৩টি ভোট। হরিশ্চন্দ্রপুরে কংগ্রেস পেয়েছে ৭৪১০৯, তৃণমূল ৬৯৭৬৬ ও বিজেপি ৪৯৪৩৩ ভোট। মালতীপুরে কংগ্রেস ৭৭৭২০ ও রতুয়ায় ৯১৮৮০ ভোট পেয়ে শীর্ষে রয়েছে।মালদার মোথাবাড়িতে কংগ্রেসের ঈশা খান চৌধুরি ৭৭২৩৫ ভোট পেয়ে প্রথমে থাকলেও বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে। এছাড়া ফরাক্কায় কংগ্রেস প্রথম হলেও দ্বিতীয় স্খনে বিজেপি। আর কংগ্রেস প্রথম স্থানে আছে সুজাপুর ও শামসেরগঞ্জেও।মুর্শিদাবাদের বহরমপুর বিধানসভা কেন্দ্রে অধীর চৌধুরী ৮৩৪০১ ভোট পেয়ে শীর্ষে থাকলেও দ্বিতীয় স্তানে বিজেপি। লালগোলায় কংগ্রেস প্রার্থী মোর্তজা হোসেন ৮১৭৪৫ ভোট পেয়ে প্রথম স্থানে। আর উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ায় কংগ্রেস প্রার্থী আলি ইমরান রামজ ভিক্টর ৫৯৮২৫ ভোট পেয়ে শীর্ষে রয়েছে। সিপিএমের মুহাম্মদ সেলিম শুধু মুর্শিদাবাদের রানীনগর কেন্দ্রে ৯৬৩১০ ভোট পেয়ে তৃণমূলকে দ্বিতীয় করে দিয়েছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct