জাফিরা হক, আপনজন: ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা মুসলিম প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ২৪ জন সারা দেশে জয়ী হয়েছেন। বিগত নির্বাচনের তুলনায় কমে আসছে লোকসভায় মুসলিম প্রতিনিধিত্ব। এই ২৪জন মুসলিম সাংসদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কংগ্রেসের। এ বছর কংগ্রেস থেকে ৯জন লোকসভায় নির্বাচিত হয়েছেন। তার পরেই রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের পাঁচজন মুসলিম সাংসদ। তারপরেই স্থান সমাজবাদী পার্টির। সমাজবাদী পার্টি থেকে চারজন মুসলিম লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।২০১৯ সালে মাত্র ২৬ জন মুসলিম প্রার্থী সাংসদ হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন, যার মধ্যে কংগ্রেস ও তৃণমূলের চারজন করে, বিএসপি ও এসপি থেকে তিনজন করে এবং এনসিপি ও সিপিআই (এম) থেকে একজন করে প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ বছর সাহারানপুরের কংগ্রেস প্রার্থী ইমরান মাসুদ ৬৪,৫৪২ ভোটে এবং কৈরানা থেকে সমাজবাদী পার্টির ২৯ বছর বয়সী প্রার্থী ইকরা চৌধুরী ৬৯,১১৬ ভোটে বিজেপি প্রদীপ কুমারকে পরাজিত করেছেন। গাজিপুরে সমাজবাদী পার্টির প্রবীণ প্রার্থী আফজল আনসারি বিজেপির পারস নাথ রাইয়ের চেয়ে এক লক্ষ ভোট বেশি পেয়েছেন এবং এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির মাধবী লতা কমপেল্লার চেয়ে ৩,৩৮,০৮৭ ভোটের ব্যবধানে তার হায়দরাবাদ আসনটি ধরে রেখেছেন। লাদাখে নির্দল প্রার্থী মহম্মদ হানিফা ২৭,৮৬২ ভোটে জয়ী হয়েছেন এবং জম্মু ও কাশ্মীরের বারামুল্লা আসনে আরেক নির্দল প্রার্থী আব্দুল রশিদ শেখ ওরফে ইঞ্জিনিয়ার রশিদ ২০৪১৪২ ভোটে জয়ী হয়েছেন।উত্তরপ্রদেশের রামপুর আসনে সমাজবাদী পার্টির মহিবুল্লাহ ৮৭৪৩৪ ভোট এবং জিয়া উর রহমান ১২১৪৯৪ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিকে হারিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ-রাজৌরি আসনে ন্যাশনাল কনফারেন্সের মিয়া আলতাফ আহমেদ ২,৮১,৭৯৪ ভোটে জয়ী হয়েছেন। শ্রীনগরে ন্যাশনাল কনফারেন্স প্রার্থী আগা সৈয়দ রুহুল্লাহ মেহেদি ১১৮৪১৬ ভোটে জয়ী হয়েছেন।পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর আসনে প্রথমবারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী ইউসুফ পাঠান কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা এবং পাঁচবারের সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে ৮৫,০২২ ভোটে পরাজিত করেছেন। যে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে সন্দেশখালি পড়ে, সেই কেন্দ্রে তৃণমূলের হাজি নুরুল ইসলাম বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রকে ৩ লক্ষ ৩৩হাজার ৫৪৭ভোটে পরাজিত করেছেন। উলুবেড়িয়াতেও তৃণমূলের সাজদা আহমেদ বিজেপির অরুণুদয় পালচৌধুরীকে ২ লক্ষ ১৬ হাজার ৬৭৩ ভোটে জয়ী হয়েছেন। জঙ্গিপুরে তৃণমূলের খলিলুর রহমান কংগ্রেসের মুর্তোজা হোসেন বকুলকে ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৬৩৭ বেশি ভোটে পরাজিত করেছেন। মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে তৃণমূলের আবু তাহের খান সিপিএমের মহম্মদ সেলিমকে এক লক্ষ ৬৪ হাজার ২১৫ ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন। মালদহ পশ্চিমে কংগ্রেসের ইশা খান চৌধুরী বিজেপির শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীকে ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৩৬৮ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন।লাক্ষাদ্বীপে কংগ্রেসের মহম্মদ হামদুল্লাহ সঈদ ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (শরদচন্দ্র পাওয়ার) পিপি মহম্মদ ফয়জলকে মাত্র ২৬৪৭ ভোটে পরাজিত করেছেন।
তামিলনাড়ুর রামনাথপুরমে জয় পেয়েছেন ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগের (আইইউএমএল) নাভাসকানি কে। কেরলের পোন্নানিতে আইইউএমএলের ডঃ এম পি আব্দুস সামাদানি সিপিএমের কে এস হামজাকে পরাজিত করেন। ভাদাকারায় কংগ্রেসের শফি পরম্বিল সিপিএমের শৈলজা শিক্ষককে এক লক্ষেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন। আইইউএমএল মালাপ্পুরম আসনেও জিততে সক্ষম হয়েছে যেখানে ই টি মোহাম্মদ বশির সিপিআই (এম) এর ভি ভাসিফকে ৩ লক্ষেরও বেশি ভোটে পরাজিত করেছিলেন।বিহারে কংগ্রেসের তারিক আনোয়ার কাটিহার থেকে জয়ী হয়েছেন। জনতা দল (ইউনাইটেড) এর দুলাল চন্দ্র গোস্বামীকে ৪৯৮৬৩ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন। কিষাণগঞ্জে কংগ্রেসের মহম্মদ জাভেদ জেডিইউ-এর মুজাহিদ আলমকে ৫৯৬৯২ ভোটে পরাজিত করেছেন।অসমের ধুবড়ি কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের রাকিবুল হাসান এআইইউডিএফ প্রার্থী বদরুদ্দিন আজমলকে ১০ লক্ষ ১২ হাজার ৪৭৬ ভোটে পরাজিত করেছেন। অন্যদিকে, করিমগঞ্জে কংগ্রেস প্রার্থী হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরি অল্প ভোটে পরাজিত হয়েছেন। এই কেন্দ্রে জোর প্রতিদ্বিন্দ্বিতার পর বিজেপির কৃপানাথ মান্নার কাছে ১৮৩৬০ ভোটে পরাজিত হন হাফিজ। এ বছর বিএসপি ৩৫ জন মুসলিম প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে, যা সব দলের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশে ৪টি, বিহার ও দিল্লিতে ৩টি করে, উত্তরাখণ্ডে ২টি করে এবং রাজস্থান, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, তেলেঙ্গানা ও গুজরাটে ১টি করে রয়েছেন।এর পরেই রয়েছে কংগ্রেস। তারা ১৯ জন মুসলিম প্রার্থী দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ৬ জন, অন্ধ্রপ্রদেশ, আসাম, বিহার ও উত্তরপ্রদেশে ২ জন করে এবং কর্নাটক, কেরালা, ওড়িশা, তেলেঙ্গানা ও লাক্ষাদ্বীপে ১ জন করে মুসলিম প্রার্থী রয়েছেন। তৃণমূল কংগ্রেস ছয়জন প্রার্থী দিয়েছে পশ্চিমবাংলায়। আসামেও একজন মুসলিম প্রার্থী দিয়েছে তারা। সমাজবাদী পার্টির মুসলিম প্রার্থীদের মধ্যে তিনজন উত্তরপ্রদেশ থেকে এবং চতুর্থজন অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে প্রার্থী হয়েছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct