নিজস্ব প্রতিবেদক, কলকাতা, আপনজন: তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বুধবার দুটি জনসভা করলেন। একটি মেটিয়াবুরুজে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে। আর অন্যটি যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষের সমর্থনে। এদিন মেটিয়াবুরুজের সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করেন। মমতা বলেন, দেশের নেতা মহাত্মা গান্ধি, নেতাজি সুভাষ, মৌলানা আবুল কালাম আজাদের মতো হওয়া উচিত। দেশের নেতা তারই হওয়া উচিত যিনি সবচেযে বড় মানবিক, যিনি সর্ব ধর্মকে নিয়ে চলেন, সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের কথা বলেন তার দেশের নেতা হওয়া উচিত। কিন্তু মোদি নেতা হয়ে গিয়েছেন পিছলে গিয়ে।মমতা দাবি করেন, টাকার জোরে মোদি প্রধানমন্ত্রী হয়ে গিয়েছেন। আর হয়ে যাওয়ার পরে অহঙ্কারে ডুবছে. অহঙ্কারে মরছে। আর অহঙ্কারের স্রোতে মুখে কথার ভাষা হারিয়ে গিয়েছে। এই রকম মিথ্যবাদী প্রধানমন্ত্রী আমি জীবনে কখনও দেখিনি। প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যা বলার উদাহরণ তুলে ধরে মমতা বলেন, মোদি আজ কাকদ্বীপে বলে এসেছেন, উনি নাকি টাকা দিয়েছেন নদীর পাড়া বাঁধানোর জন্য। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি উনি এক টাকাও দেননি। তাই তাকে মিথ্যেবাদী বলব না তো কি বলব, সেই প্রশ্ন তোলেন মমতা। মমতা এ প্রসঙ্গে বলেন, নদীর বাঁধের কাজে রাজ্য সরকার ৫,৫০০ কোটি টাকা পাঁচ বছরে খরচ করেছে। কিন্তু কেন্দ্র এক পয়সাও খরচ করেনি।
মমতা আরও জানান, একশো দিনের কাজের টাকা দেয়নি, বাড়ি তৈরি টাকা দেয়নি, রাস্তা তৈরির টাকা দেয়নি। মমতা দাবি করেন, মাল্টি সুপার হাসপাতালগুলি রাজ্য সরকারে নিজে তৈরি করেছে। তৃণমূল সরকার আসার আগে রাজ্যে ১২টি মেডিক্যাল কলেজ ছিল। আর এখন প্রাইভেট মিলিয়ে তা ৪২টি হয়েছে। এছাড়া রাজ্যে ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। এখন তা ৪০-৪৫টায় পৌঁছেছে।মমতা এ নিয়ে অভিযোগ করেন, এত কিছুর পরও মোদিরা বলে যাচ্ছেন রাজ্যে উন্নয়ন হয়নি। তাই প্রধানমন্ত্রী যখন এমন মিথ্যা কথা বলেন, তখন তার দ্বারা দেশ চালানো কেন বাড়ি চালানো সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।মমতা বলেন, আজ দেশের সব বিক্রি করে দিয়েছে। রেল থেকে শুরু করে সেইল সব বিক্রি করে দিয়েছে। সব বিক্রি করে দিয়েছে। এখন আর তারা গান্ধিজিকে মানে না, নেতাজিকে মানে না।মোদিকে বসন্তের কোকিল বলে কটাক্ষ করেন মমতা। তিনি বলেন, একবার করে আসেন। আর কু কু করে ডাক দিয়ে উড়ে চলে যান।মোদি বাংলায় বেশি আসন পাবেন দাবি করায় মমতা তার সমালোচনা করে বলেন, এটা বিজেপির হারের লক্ষণ। মোদি বলেছেন, উত্তরপ্রদেশ, বিহারের থেকেও বাংলায় বেশি ভোটে জিতবে বিজেপি। তার অর্থ উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে কি হারবে বিজেপি। বাংলায় বেশি আসন পেয়েও কেন্দ্রে সরকার গড়তে পারবে না বলে ভবিষ্যৎ বাণী করেন মমতা। তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, মোদি কি কেন্দ্রে সরকার গড়তে পারবেন।মমতা বলেন, রোজ বিজ্ঞাপন দিয়ে মিথ্যা ছড়িয়েছেন মোদি। তৃণমূলকে চোর বানিয়েছেন। আপনার থেকে আর বড় চোর ডাকাত আর কেউ নেই, মাথায় রাখবেন।
মমতা মোদিকে বলেন, তৃণমূলকে চোর বললে তার সপক্ষে প্রমাণ দিন। উল্টে মোদির কাছে মমতা জানতে চান, পিএম কেয়ারের টাকা কোথায় গেল, নোটবন্দির কালো টাকা কোথায় গেল? মোদি নিজেকে দেবতা বলে দাবি করায় তাকে কটাক্ষ করে বলেন, উনি দেবতার উপর বড় দেবতা। জগন্নাথ দেব নাকি ওনাকে গুরু মানেন। তা আমি বলেছি, নিজেকে মনে করেন সব থেকে বড় দেবতা হলে মমতা নকুল দানা দিয়ে, ফুল ভোগ দিয়ে মন্দির বানিয়ে দিতে চান মোদির জন্য। খান দান ঘুরে বেড়ান। কিন্তু রাজনীতি করার নামে মিথ্যা কথা বলবেন না। মমতা এদিন সিপিএমের সঙ্গে বিজেপির আঁতাতের অভিযোগ তোলেন। এ বিষয়ে মমতা বলেন, বিজেপি সিপিএমের পতাকা লাগিয়েছে। সিপিএমে কংগ্রেসকে খেলাচ্ছে। মমতা অঙ্গীকার করেন, যতদিন বিজেপি কংগ্রেস সিপিএমে গাঁটবন্ধন থাকবে আমি বেঁচে থাকতে ততদিন তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতা করব না।মমতা বলেন, বামফ্রন্টের সবাই খারাপ ছিল না। সবচেয়ে অত্যাচারী ছিল সিপিএম। তাদেরকে যখন ৩৪ বছরের শাসন ক্ষমতা থেকে হঠিয়ে দিতে পারি তাহলে মোদিকেও হঠিয়ে দিতে পারব বলে দাবি করেন মমতা।মমতা মেটিয়াবুরুজের মঞ্চে অভিষেককে তুলে ধরে তার জন্য ভোট প্রার্থনা করেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অভিষেককেও যে কটাক্ষ করতে ছাড়েন না তার উপমা দিয়ে বলেন, তার হাঁটুর বয়সি ছেলে। এদেরকে বলা হচ্ছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবে।এদিন মমতার সভায় উপস্থিত ছিলেন ফিরহাদ হাকিম, বিধায়ক আবদুল খালেক মোল্লা সহ এলাকার কাউন্সিলর প্রমুখ।মেটিয়াবুরুজ ছাড়াও বারুইপুরের ফুলতলায় সাগর সংঘের মাঠে সাযনী ঘোষের সমর্থনে জনসভায় মমতা প্রবলভাবে মোদির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct