নিজস্ব প্রতিবেদক, কলকাতা, আপনজন: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঈর্ষার কারণে বাংলায় ব্যাপক উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছেন না।কলকাতার দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বেহালায় দলীয় প্রার্থী মালা রায়ের সমর্থনে এক নির্বাচনী সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার বলেন, গত ১০ বছরে পশ্চিমবঙ্গে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তা দেখতে পাচ্ছেন না। ঈর্ষান্বিত মানুষ তা দেখতে পাচ্ছেন না।লোকসভা ভোটের পর বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকবে না বলেও ভবিষ্যদ্বাণী করেন মমতা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আর মাত্র কয়েকদিন ওই চেয়ারে থাকবেন। তার পরেই তিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হবেন।পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড় রিমালের ‘ন্যূনতম প্রভাব’ দেখিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পরে কলকাতায় প্রায় কোনও জল জমে নি। দিল্লি হলে টানা পাঁচদিন জলের তলায় থাকত শহর। মমতা আরও বলেন, ঈর্ষার কারণে বাংলার এই ব্যাপক উন্নয়ন দেখে যেতে পারছেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।গত ১০ বছরে পশ্চিমবঙ্গে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তা দেখতে পাচ্ছেন না। ঈর্ষান্বিত মানুষ তা দেখতে পায় না। নরেন্দ্র মোদি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কখনও দেশের অন্যান্য অংশের জন্য চিন্তা করেননি বলে দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে আমি রেল, কয়লা এবং ক্রীড়ার মতো কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক সামলেছি। তখন অনেক কাজ করেছি।
অন্যদিকে, রাজ্য সরকার সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে রিমাল ঝড়ে কয়েক লক্ষ লোক মারা যেত বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেহালায় নির্বাচনী সভায় এ নিয়ে মোদির সমালোচনা করেন মমতা। মমতা আবারও মোদিকে মিথ্যাবাদী তকমা দিয়ে বলেন, আমি রিমাল ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সারা রাত ধরে তদারকি করেছি। প্রায় ৪৬ লক্ষ লোককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয়েছে। মানুষ রিমালের প্রভাব সেভাবে জানতে পারেনি। অথচ আজ কাকদ্বীপের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দাবি করলেন, দিল্লি থেকে তিনি সব নজরদারি করেছেন। দিল্লি থেকে সাইক্লোন সামালেছেন। মোদির এই দাবিকে ডাহা মিথ্যেবাদী বলেন মমতা। এ প্রসঙ্গে মমতা আরও বলেন, দিল্লি থেকে বসে সাইক্লোন সামলেছেন দাবি করায় তাঁকে বলব, প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যা বলা সাংবিধানিক অধিকার নয়। কাজও নয়। কাকে নিয়ে করিয়েছিলেন? এনডিআরএফ দেখাচ্ছে? টাকাও দেব, আবার বড় কথা বলবেন! উনি নাকি মা কালীকে ডেকে সাইক্লোন আটকেছে।’মমতা এখানেই থেমে থাকেননি। তিনি অভিযোগ করেন, দিন-রাত মোদির ছবি দেখতে হচ্ছে। তাঁর কথায়, তেজস্বী খাটাখাটনি করে লাঞ্চ করছিল। সেই ভিডিয়ো করেছে। মাছ খাচ্ছিল। সেই নিয়ে বলেন, মাছ খায়! তিনি একটা ব্যাঙের ছাতা খান, চার লক্ষ টাকা দাম। তাইওয়ানের ব্যাঙের ছাতা। আমি এ সবে যেতাম না, যদি না এ সব বলে বাংলার মানুষকে অপদস্থ করতেন। সমাজমাধ্যমে দেখেছি একটা ছাতার দাম ৮০ হাজার। লাঞ্চে খরচ চার লক্ষ টাকা। এসব খাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু যখন বলেন, মাছ খাবে না, তা হলে কি বার্লি খাব?’রাজ্যের একর পর এক আমলাদের ট্রান্সফার করা নিয়ে মোদিকে নিশানা করেন মমতা। মমতা বলেন, তিন মাস ধরে নির্বাচন চলছে। এত গরম। বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ করলাম। ঝড়জল শুরু হল। ভ্রূক্ষেপ নেই। এক জন নির্বাচন কমিশনার প্রতিবাদে ছেড়ে দিলেন। উনি যত বার বাংলায় আসেন, এক জন করে আইএএসকে সরিয়ে দেন। ক্ষমতা যে দিন মানুষ কেড়ে নেবে, জবাব দেবে ব্যালটে। চেয়ারে না থাকলে কেউ দেখবে না। কালো ধন করছেন, পিএম কেয়ারের টাকা কই? সেই প্রশ্নও তোলেন মমতা।সন্দেশখালি নিযে মোদি সরব হওয়ায় তার চরম সমালোচনা করে মমতা বরেন, ‘মা-বোনদের অসম্মান করে বিজেপি নির্বাচনী ইস্যু করেছে। বাংলার বদনাম করার চেষ্টা করেছে সন্দেশখালিতে। বাংলার মা-বোনদের এই অসম্মান মেনে নেব না। আজ থেকে পাকিস্তান বলতে শুরু করেছেন। আবার পুলওয়ামা হবে বোধ হয়।’’এর আগে মোদি অমিত শাহ অভিযোগ করেছিলেন মমতা বাঙলায় দুর্গাপূজা করতে দেন না। এদিন তার জবাব দেন মমতা। মমতা বলেন, ভোট ছাড়া তো আসেন না। বিপদে আসেন না। বাংলাকে লাঞ্ছনা করাই ওঁর কাজ। আগে বলত, মমতাজি বাংলায় দুর্গাপুজো করতে দেন না। সরস্বতী পুজো করতে দেন না। সেই বাংলা কিন্তু ইউনেস্কোর তকমা পেয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct