নিজস্ব প্রতিবেদক, কলকাতা, আপনজন: ঘূর্ণিঝড় রিমাল পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী অঞ্চলে রবিবার রাতে তাণ্ডব চালালে কমপক্ষে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া প্রায় ১৫,০০০ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ২০৭,০৬০ জনকে উদ্ধার শিবিরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৭৭,২৮৮জন এখনও সেখানে রয়েছে।রাজ্য জুড়ে শত শত গাছ উপড়ে পড়েছে, রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে এবং সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে এবং পুলিশ ও এনডিআরএফ এখনও সেগুলি সরিয়ে ফেলছে।এদিকে, রবিবার দুপুরে বন্ধ থাকার পর কলকাতা বিমানবন্দরে বিমান চলাচল শুরু হয়েছে।কলকাতায় দেওয়াল ধসে একজন, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় গাছ পড়ে একজন, পূর্ব বর্ধমানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। ক্যানিংয়ে গাছ পড়ে আহত একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার।মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এ বছর ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’-এর প্রভাবে আমাদের রাজ্যে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। তিনি তাৎক্ষণিক আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন এবং নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি শেষ হয়ে গেলে ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।তিনি বলেন, যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারকে তাৎক্ষণিক আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে এবং নির্বাচনী আচরণবিধি শেষ হওয়ার পরে ফসল ও ঘরবাড়ির ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ বিতরণের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজ্যের সাগর দ্বীপ ও বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মাঝামাঝি এলাকায় ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়টি।রাজ্য সরকারের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিককে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলের ২৪টি ব্লক এবং ৭৯টি মিউনিসিপ্যাল ওয়ার্ডের অন্তত ১৫ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ ১ হাজার ৪৩৮টি নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৭ হাজার ৬০ জনকে স্থানান্তর করেছে।টানা ২১ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বিমান চলাচল শুরু হয়েছে। এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার (এএআই) এক শীর্ষ আধিকারিককে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, সোমবার ইন্ডিগোর কলকাতা-পোর্ট ব্লেয়ার বিমানটি সকাল ৮.৫৯ মিনিটে নামে এবং সকাল ৯.৫০ মিনিটে কলকাতায় অবতরণ করা প্রথম বিমানটি ছিল গুয়াহাটি থেকে স্পাইসজেটের একটি বিমান।
রবিবার কলকাতা বিমানবন্দর থেকে শেষ উড়ানটি দুপুর ১২.১৬ মিনিটে ছাড়ে।আবহাওয়া দফতরের সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় রিমাল উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং আগামী তিন ঘণ্টার মধ্যে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এরপর এটি উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হবে এবং ক্রমান্বয়ে আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।আসামের সাতটি জেলায় অতি ভারী বৃষ্টিপাতের জন্য লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং ১১টি জেলায় ‘কমলা সতর্কতা’ জারি করা হয়েছে। আইএমডি সোমবার ও মঙ্গলবার আসাম এবং অন্যান্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করেছে, এবং আজ দক্ষিণ আসাম এবং মেঘালয়ে ৪০-৫০ কিলোমিটার থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে।ঘূর্ণিঝড় রিমালের মোকাবিলা ও প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে রবিবার সন্ধ্যায় বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁকে জানানো হয়, ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় খড়ের ঘরের ছাদ উড়ে গেছে, বিদ্যুতের খুঁটি উল্টে গেছে এবং বেশ কিছু এলাকায় গাছ উপড়ে গেছে। এদিকে, কলকাতা সংলগ্ন নিচু এলাকার রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।পশ্চিমবঙ্গ সরকার রবিবার দুপুরের মধ্যে উপকূলীয় ও ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল থেকে প্রায় ১.১০ লক্ষ মানুষকে সাইক্লোন শেল্টার, স্কুল ও কলেজে স্থানান্তরিত করেছে। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা, বিশেষ করে সাগর দ্বীপ, সুন্দরবন ও কাকদ্বীপ থেকে লোকজনকে সরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।সোমবার দিঘা, কাকদ্বীপ এবং জয়নগরে ভারী বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আইএমডি-র পূর্বাঞ্চলীয় আঞ্চলিক প্রধান সোমনাথ দত্ত ইঙ্গিত দিয়েছেন যে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বাড়তি হাওয়া এবং বৃষ্টিপাত হবে।ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে এবং জলোচ্ছ্বাসে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানায় কমপক্ষে ১০ জন নিহত এবং প্রায় দেড় কোটি মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে।ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলো হলো- খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুর।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct