সাড়ে ৫ দশক শাসনের পর পশ্চিমাদের বশংবদ পাহলভী রাজতন্ত্রের পতন এবং ঐতিহাসিক ইসলামী বিপ্লব ছিল ইরানের রাজনীতির ইতিহাসে নিঃসন্দেহে সবথেকে বড় মাইলফলক। তারপর দ্বিতীয় বাঁকবদল বলা যায় ২০১৫ সালে পশ্চিমাদের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতায় স্বাক্ষর। ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে আমেরিকাকে উচিত শিক্ষা দেওয়া এবং রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণ- একই সঙ্গে দু দুটো পটপরিবর্তন ইরানকে এক ধাক্কায় বহু যোজন এগিয়ে দিয়েছিল। এরপর তৃতীয় স্মরণীয় ঘটনা হল ১৯ মে ২০২৪। তবে ১৯৭৯ আর ২০১৫ জয়ের স্মারক হয়ে থাকলেও গত রবিবার ছিল বিয়োগান্তক দিন, ইরানের ভাগ্যাকাশে এক অন্ধকারময় দিন হিসেবে চিহ্নিত হল ২০২৪ সালের ১৯ মে। লিখেছেন মুদাসসির নিয়াজ...
সাড়ে ৫ দশক শাসনের পর পশ্চিমাদের বশংবদ পাহলভী রাজতন্ত্রের পতন এবং ঐতিহাসিক ইসলামী বিপ্লব ছিল ইরানের রাজনীতির ইতিহাসে নিঃসন্দেহে সবথেকে বড় মাইলফলক। তারপর দ্বিতীয় বাঁকবদল বলা যায় ২০১৫ সালে পশ্চিমাদের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতায় স্বাক্ষর। ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে আমেরিকাকে উচিত শিক্ষা দেওয়া এবং রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণ -- একই সঙ্গে দু দুটো পটপরিবর্তন ইরানকে এক ধাক্কায় বহু যোজন এগিয়ে দিয়েছিল। এরপর তৃতীয় স্মরণীয় ঘটনা হল ১৯ মে ২০২৪। তবে ১৯৭৯ আর ২০১৫ জয়ের স্মারক হয়ে থাকলেও গত রবিবার ছিল বিয়োগান্তক দিন, ইরানের ভাগ্যাকাশে এক অন্ধকারময় দিন হিসেবে চিহ্নিত হল ২০২৪ সালের ১৯ মে।এইদিন রহস্যজনকভাবে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল হয় ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. ইব্রাহিম রাইসি ও বিদেশমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান সহ একঝাঁক (৮ জন) শীর্ষ কর্মকর্তার। এই মর্মান্তিক ইন্তেকালে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে কোন বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে কিনা বা এর প্রভাব কেমন হতে পারে, তার জেরে কি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সমীকরণ উদ্ভূত হতে পারে – এসবই এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কূটনীতির প্রধান আলোচ্য বিষয়। এটাই এখন লক্ষ ডলারের প্রশ্ন। স্বভাবতই আন্তর্জাতিক মিডিয়ার পাখির চোখও এখন সেটাই। মনে করা হচ্ছে, ইরানের প্রভাবশালী এই দুই নেতার রহস্য-মৃত্যুতে আমূল বদলে যেতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের সমীকরণ। রাইসির অবর্তমানে ইসরায়েলই সবচেয়ে লাভবান হবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। কারণ, ইসরাইল ও পশ্চিমারা মনে করে, মধ্যপ্রাচ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে নাকি সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছিল তেহরান। বিশেষ করে লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন, বাহরাইন ও ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অর্থ ও অস্ত্রের অন্যতম জোগানদাতা নাকি ছিল ইরান। আর এসব গোষ্ঠী নাকি মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা ও ইসরায়েলি স্বার্থের জন্য ক্রমাগত হুমকি তৈরি করে আসছিল।
গত ১৪ এপ্রিল রাইসি সরকার মধ্যপ্রাচ্যের জারজ রাষ্ট্র ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছিল। পাল্টা ইসরায়েলও ইরানের ইস্ফাহান শহরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এই ঘটনার আগে কেউ কখনও কল্পনাই করতে পারেনি যে, মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ ইসরায়েলে হামলা করতে পারে। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র ইসরাইল হল হাতি, আর ইরান বাদে এই অঞ্চলের মুসলিম দেশগুলো সবাই নেঙটি ইঁদুর। শুধু ইরান হল ধেড়ে ইঁদুর। ‘পার্বত্য মুষিক’ রূপী ইরান সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছিল। যার প্রধান সৈনিক ছিলেন সদ্য প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ড. ইব্রাহিম রাইসি। এর আগে ইসরাইলের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পর্যন্ত দেখাতে পারেনি কোনও মুসলিম দেশ। রাইসির নেতৃত্বে ইরান সেই আবহমান ভয়ের মিথ ভেঙে দিয়ে চোখ তুলে শুধু তাকায়নি বা শুধু চোখ রাঙায়নি, বরং চোখে চোখ রেখে ইসরাইলে হামলা করার মতো স্পর্ধা দেখিয়েছে। বলাবাহুল্য, ইসরাইলের হাম্বড়িয়াকে ফুচকা বানিয়ে দিয়েছিল ইরান। যা ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পর নজিরবিহীন। মিডিয়া ইরানের এই দুঃসাহসকে যুদ্ধবাজ বলে ফলাও করে প্রচার করেছে। কিন্তু এর নেপথ্য কারণ নিয়ে কেউ মুখ খোলেনি বা টুঁ-শব্দ করেনি।সেটা ছিল ১ এপ্রিল ২০২৪ সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের কন্স্যুলেটে ইসরাইল প্রথম হামলা চালায়। যাতে ইরানের দু’জন কমান্ডার সহ কমপক্ষে সাতজন জওয়ান নিহত হন। দামেস্কে ইরানি কন্স্যুলেট ভবন মাটির সঙ্গে মিশে যায়। এরই প্রতিশোধ নিতে দু-সপ্তাহ পর ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ছোড়ে ইরান। অবশ্য ইসরাইলও ইরানের পাল্টা হামলা করে জবাব দেয়। এখানে স্মরণীয় যে, ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি বাগদাদে ইরানি কমান্ডার জেনারেল কাশেম সোলাইমানি গুপ্তহত্যার শিকার হন। সাড়ে তিন বছরেও সেই হত্যার প্রতিশোধ ইরান এখনও নেয়নি। তারা সবর ও সংযমের নীতি নিয়েছিল।অন্যদিকে, গত কয়েক দশক ধরে ইরানের পরমাণু কার্যক্রম নিয়ে বেশ অসন্তুষ্ট ইসরায়েল ও পশ্চিমারা। এ ব্যাপারে ইরান-বিরোধিতার তালিকায় তারা পাশে পেয়েছে আরব বিশ্বের বিভীষণ বা নারদ বলে কথিত সৌদি আরবকে। কিন্তু তাদের তোয়াক্কা না করে, অশুভ ত্রিশক্তির ভ্রূকুটির পরোয়া না করে এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনেই পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছিলেন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। এমনকি বেশ কয়েকবার ইসরায়েলকে বিশ্বের মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার হুমকিও দেন তিনি। এ কারণে জায়নবাদী ইসরাইলের চক্ষুশূল ছিলেন রাইসি।রাইসির মৃত্যু শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়; বরং সমগ্র মধ্য এশিয়া ও ইউরোপীয় তথা পশ্চিমা ভূ-রাজনীতিতেও সুদূর প্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে। এমনিতেই ইসরাইল এবং ইরানের মধ্যে বৈরিতা মান্ধাতা আমলের। আমেরিকার সঙ্গেও ইরানের সম্পর্ক বরাবরই সাপে নেউলে।এই প্রেক্ষিতে ইরানি প্রেসিডেন্ট ও বিদেশমন্ত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর আমেরিকার ভূমিকা কেমন হবে – তা এখনও স্পষ্ট নয়। ওয়াশিংটন থেকে এখনও তেমন কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। এমনিতেই তেহরান শক্তিশালী পরমাণু কর্মসূচির দিকে এগোচ্ছে বলে গত কয়েক বছরকে মার্কিন-ইরান সম্পর্কে সঙ্কটজনক পরিবর্তনের সময় হিসেবে দেখা হয়। ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানির মধ্যে ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি সই হয় অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায়। রাষ্ট্রসংঘের অধীনস্ত আন্তর্জাতিক পরমাণু নিরীক্ষণ সংস্থা আইএইএ-র তত্ত্বাবধানে সেই চুক্তিতে আমেরিকা ও ইরান ছাড়াও সই করেছিল নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশ রাশিয়া, চীন, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জার্মানি। কিন্তু ২০১৮ সালের ৮ মে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ব জনমতকে পদদলিত করে সেই চুক্তি ছেড়ে বেরিয়ে যান। একই সঙ্গে তেহরানের ওপর একঝাঁক কঠোর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেন।
২০২১ সালে রাইসি ইরানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে বাইডেন সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে থাকেন। এতে নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল হলেও পুরোপুরি সফল হননি রাইসি। বাইডেন তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে ফেরার কথা বললেও তিনি সেই অঙ্গীকার রাখতে পারেননি। আবার গতবছর ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরাইল একতরফা সামরিক হামলা শুরু করলে বাইডেন খ্রিস্টান হলেও একইসঙ্গে নিজেকে যায়নবাদী বলে সদর্পে ঘোষণা করেন এবং ইসরাইলকে দফায় দফায় অর্থ ও অস্ত্র সাহায্য দিয়ে চলেছেন। যেটা প্রেসিডেন্ট রাইসি ভালভাবে নেননি। কারণ, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান বর্বরোচিত ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যাকে কেন্দ্র করে কার্যত ছায়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল ইরান ও ইসরাইল। পর্যায়ক্রমে মনে হচ্ছিল যুদ্ধটা যেন ইসরাইলের সঙ্গে ইরানের। একথা অনস্বীকার্য যে, জেরুজালেমস্থিত পবিত্র মসজিদুল আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাসকে ইসরাইল একরকম গাজোয়ারি করে অধিকার করে রেখেছে এবং ইসলামী সভ্যতার তৃতীয় বৃহত্তম ঐতিহ্যবাহী ও মুসলিম বিশ্বের প্রথম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাসকে অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করে ইসরাইল ও যায়নবাদীরা। তাদের মকসদ হল, মসজিদুল আকসাকে পুরোপুরি দখল করে জেরুসালেম-সহ পশ্চিম তীরকে অধিগ্রহণ করে গ্রেটার ইসরাইল রাষ্ট্র বিনির্মাণ করা। এই নিয়ে বিগত ৭ দশক ধরে অনেক জলঘোলা হচ্ছে। আর এই ইস্যুতে ইরান প্রথম থেকেই নানাভাবে ঘুঁটি সাজিয়ে চলেছে, যাতে ইসরাইল কোনভাবেই কামিয়াব না হতে পারে। আর সুবিধাবাদী ও কায়েমী স্বার্থবাদী আরবরা সেই ঘোলা জলে নেমে মাছ ধরে সেই মাছ আমেরিকা ও ইসরাইলকে উপহার দিয়ে নিজেদের রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে মরিয়া প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।প্রেসিডেন্ট রাইসির ইন্তেকালে ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে ২৮ জুন। তাতে জয়ী হয়ে যিনিই পরবর্তী রাষ্ট্রপ্রধান হন না কেন, ফিলিস্তিন ও বায়তুল মুকাদ্দাস ইস্যুতে তাদের সবার একই নীতি ছিল, আছে ও থাকবে ইনশা আল্লাহ। এ বিষয়ে তারা ইসরাইলকে বিনা যুদ্ধে সূচাগ্র মেদিনী ছাড়বে না। যাকে বলে জিরো টলারেন্স। জীবন দিয়ে, শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করবে, তবু পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস কিছুতেই ইসরাইলকে ছিনিয়ে নিতে দেবে না ইরান। অন্যদিকে সৌদি আরবের সঙ্গে ইরানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ৬ এপ্রিল ২০২৩ চীনের দৌত্যে চুক্তি সই হয়। ফলে বহুকাল ইরানের সঙ্গে সৌদির সম্পর্ক আদায় কাঁচকলায় থাকলেও ইদানীং তা অনেকটা স্বাভাবিক হচ্ছিল। দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর পর উভয় দেশ পারস্পরিক দূতাবাস চালু করেছে। কিন্তু শুরু থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের দুই যুযুধান দেশ সৌদি ও ইরানের মধ্যে শত্রুতা ভুলে এই বন্ধুত্ব মেনে নিতে পারছে না আমেরিকা ও ইসরাইল। তার চায়, ইরান সৌদি আদায় কাঁচকলায় থাকুক। কিন্তু চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়। আমেরিকাকে কাঁচকলা দেখিয়ে ইরানের সঙ্গে মিতালি পাঠালো সৌদি। অবিশ্বাস্য এই মধু চন্দ্রিমায় বাইডেন বাবাজির চক্ষু চড়কগাছ। আর নেতানিয়াহু কপাল চাপড়ে হাহুতাশ করে বিড়বিড় করে বলতে থাকেন, এতকাল কি তাহলে দুধ কলা দিয়ে সাপ পুষেছি!
একইসঙ্গে মার্কিন বলয় থেকে বেরিয়ে চীনা বলয়ে ইরান ও সৌদির একযোগে প্রবেশ আমেরিকার ইগোতে খুব লাগছিল। বিশ্বমোড়ল হিসেবে আমেরিকা যে এতকাল ধরে একচেটিয়া দাদাগিরি চালিয়ে আসছিল, ছড়ি ঘোরাচ্ছিল এবং সব ব্যাপারে ইসরাইলকে শিখণ্ডী করে ওয়াশিংটন যে কলকাঠি নাড়ছিল, তাতে কাবাব মে হাড্ডি হয়ে দেখা দিয়েছিল সুন্নি ব্রিগেড সৌদির সঙ্গে শিয়া পাওয়ার হাউস ইরানের করমর্দন। আমেরিকা তথা পশ্চিমা বিশ্ব এবং ইসরাইল বরাবরই সৌদি ও ইরানকে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়িয়ে রেখে মুসলিম বিশ্বে ফায়দা তুলে আসছে। যাকে বলে ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি। আর এ জন্যই সৌদি ও ইরানের সন্ধির পিছনে অভিসন্ধি বা দুরভিসন্ধি আছে কিনা, অনেক তালাশ করেও বিন্দু বিসর্গ খুঁজে পায়নি বাইডেন নেতানিয়াহু জুড়ি।এই লক্ষ্য পূরণেই তাদের হাতিয়ার ছিল সুন্নি সৌদি বনাম শিয়া ইরান। এই শিয়া-সুন্নি তত্ত্ব আমদানি করেই মুসলিম দুনিয়াকে আড়াআড়ি বিভাজন করে রেখে মুসলিম বিশ্বের নটে গাছটিকে মুড়িয়ে নেপো সেজে দই মারছিল আমেরিকা ও ইসরাইল। কিন্তু চীন সেই পাঁয়তারা বানচাল করতে পশ্চিমা ও ইসরাইলের বাড়া ভাতে ছাই ফেলে সৌদি ও ইরানকে গালাগালির বদলে গলাগলি করিয়ে দেয়। এটাই হল আমেরিকা ও ইসরাইলের গাত্রদাহের প্রধান কারণ। তাদের ভয় হল, আমে দুধে মিশে গেলে তো আঁটি গড়াগড়ি খাবে, দাঁত কপাটি লেগে যাবে, তাদের তো আর কোনো কদর থাকবে না। যদিও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান একাধিকবার বলেছেন, ইসলামে শিয়া-সুন্নি বলে কিছু নেই। কোনও নবী, রাসূল, সাহাবী শিয়া কিংবা সুন্নি ছিলেন না। তাঁরা সকলেই ছিলেন এক আল্লাহ ও এক ইসলামের নিরঙ্কুশ অনুসারী। শিয়া-সুন্নি তত্ত্ব পশ্চিমারা আমদানি করেছে মুসলিম জাহানকে দু-ভাগ করে মুসলিম উম্মাহকে দুর্বল করার লক্ষ্যে। কিন্তু এরদোগানের সেই বাস্তব কথন কেউই অন্তর থেকে মানতে পারেনি, পারছে না। ইস্যুভিত্তিক সাময়িক কিছুটা সুমতি হলেও, বা বোধোদয় হলেও, জ্ঞানচক্ষুর উন্মেষ ঘটলেও ইগো বড় বালাই। এই ইগোই মুসলিম দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে দিচ্ছে না। ইরান আর তুরস্ক ছাড়া ৫৫ টা দেশের কারো ৫৭ ইঞ্চি ছাতি নেই। এখনও যদি এদের সম্বিৎ না ফেরে, আক্কেল যদি না ফেরে, অগত্যা চড়া সেলামি দিতে হবে। না হলে খুড়োর কল আর ফ্যাচাং কল থেকে বাঁচা দায়। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে তখন আর ইউ টার্ন নেওয়া সম্ভব নয় হুজুর।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct