আপনজন ডেস্ক: প্রখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উত্তরপ্রদেশের দারুল উলুম দেওবন্দের ধারা অনুসরণ করে পশ্চিমবঙ্গের খারিজি মাদ্রাসাগুলি চলবে। সেক্ষেত্রে কোনও ধরনের সরকারি হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না। সংবিধানে সংখ্যালঘুদের অধিকার মেনেই চলা হবে। বুধবার কলকাতার মহাজাতি সদনে রাজ্যের খারিজি মাদ্রাসাগুলির সমন্বয় সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ রাবেতায়ে মাদারিসে ইসলামিয়া আরাবিয়ার ২৪তম প্রতিনিধি সম্মেলনে এই কথা বলেন এই সংগঠনের কর্ণধার তথা রাজ্যের গ্রন্থাগারমন্ত্রী মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি।
মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ জানান, রাজ্যের প্রায় ১০০০টি খারিজি মাদ্রাসা এই সংগঠনের আওতাভুক্ত যেখানে প্রায় ১৯০০ ছাত্র পড়াশুনা করে। তাদের সিলেবাস দারুল উলুম দেওবন্দ কর্তৃক অনুমোদিত। এই সব খারিজি মাদ্রাসাগুলি থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার ছাত্র হাফেজ, ক্বারী, মাওলানা কোর্স উত্তীর্ণ হয়ে থাকে।
এই সংগঠন নিয়ে মাওলানা সিদ্দিকুল্লা বলেন, ১৯৯৫ সালে রাজ্যে এই সংগঠনের যাত্রা শুরু। পশ্চিমবঙ্গ রাবেতায়ে মাদারিসে ইসলামিয়া আরাবিয়া প্রতি বছর রাজ্যের খারিজি মাদ্রাসার পরীক্ষা সংগঠিত করে। তার জন্য বিশেষ প্রশ্নপত্র সহ পরীক্ষকও নিয়োজিত করে। সেই পরীক্ষকদের আরও প্রশিক্ষিত করতে ও ছাত্রদের খাতা দেখার মূলায়ণ যথাযথ করতে বিশেষ প্রশিক্ষণের কথা ঘোষণা করেন মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি।
সিদ্দিকুল্লাহ বলেন, এই সব খারিজি মাদ্রাসগুলিতে হাফিজ, ক্বারী, মাওলাা তৈরির জন্য যেসব কোর্স চালুর রয়েছে তার সঙ্গে প্রথাগত শিক্ষার অষ্টম মানের বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক, বিজ্ঞান, ভূগোল প্রভৃতি বিষয়েরও পাঠদান হয়ে থাকে। সেই পাঠক্রমকে ন্যূনতম মাধ্যমিক স্তরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।
তিনি বলেন, এই সংগঠন সরকারি আর্থিক সহায়তা না নিয়েই চলে আসছে। তাই মাদ্রাসা পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনও সরকারি হস্তক্ষেপ মেনে নেবে না। এ ব্যাপারে তিনি অসমে মাদ্রাসা শিক্ষা বন্ধের যে প্রক্রিয়া চলছে, তার নিন্দা করে বলেন, অসমের এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে যেখানে মুসলিমদের প্রতিবাদ করার ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। তাই অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা কলকাতায় এলে তার মাদ্রাসা বিরোধী কাজের জন্য জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ দেখাবে।
সিদ্দিকুল্লাহ আরও বলেন, সমাজকে সুন্দর ও সুষ্ঠভাবে গড়ে তুলতে আলেম সমাজের বিশেষ অবদান আছে। সামাজিক অনাচার দূরীকরণে তাই মাহকামে শরীয়াহ গঠন করা হয়েছে। এটি শরীয়া সংক্রান্ত মীমাংসার মাধ্যম বা ক্ষেত্র। বিয়ে বা তালাক সংক্রান্ত বা পারিবারিক বিরোধী সংক্রান্ত বিষয় নিষ্পত্তি করা হয় এই শরীয়াহ আদালতের মাধ্যমে। এটি কোনও ক্যাঙারু আদালত নয়, বরং বিবাদ মেটানোর উত্তম ক্ষেত্র। এ বিষয়ে উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আলিপুরের এক বন্দির যুবতী স্ত্রী আবেদন করেছিলেন, তার স্বামী কারাগারে বন্দি। তাই তাকে খুল্লা তালাক দেওয়া হোক। মাহকামে শরীয়াহ আদালতে সেই বন্দিকে হাজির করিয়ে ওই মহিলা খুল্লা তালাক দিলে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়। তাই হারাম কাজ থেকে দূরে থেকে এভাবে শরীয়াহ আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার আবেদন জানান মুসলিমদের কাছে।
এদিনের সভায় রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান তথা পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান অসমে কীভাবে মুসলিমদের মাদ্রাসার উপর আক্রমণ নেমে এসেছে তা তুলে ধরেন। তিনি রাবেতাকে নারী শিক্ষায় জোর দেওয়ার কথাও বলেন। এদিন অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক মনজুর আলম, মুহাম্মদ কামরুজ্জামান প্রমুখ। দেওবন্দ থেকে আগত প্রতিনিধিরাও বক্তব্য রাখেন। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা প্রতিনিধিরাও তাদের মতামত জানান এই সভায়। সভা সঞ্চালনায় সহায়তা করেন মুফতি আবদুস সালাম।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct