আপনজন ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীকে স্বস্তি দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছে।শীর্ষ আদালত অবশ্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (সিবিআই) তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে এবং বলেছে প্রয়োজনে তারা রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্যদেরও তদন্ত করতে পারে।প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা ও মনোজ মিশ্রকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ সিবিআইকে তদন্ত চলাকালীন কোনও সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তারের মতো দ্রুত পদক্ষেপ না নিতে বলেছে। শীর্ষ আদালত অবশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছে, রাজ্যের যেসব শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের নিয়োগ হাইকোর্ট বাতিল করেছে, যদি তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে তাদের নিয়োগ অবৈধ ছিল তবে তাদের এতদিন পাওয়া বেতন ফেরত দিতে হবে। শীর্ষ কোর্ট আরও বলেছে, আমরা মনে করি, ন্যায়বিচারের স্বার্থেই বিষয়টির দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে। আমরা সেই অনুযায়ী নির্দেশ দিচ্ছি যে ১৬ জুলাই, ২০২৪ তারিখে শুনানি ও চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য কার্যক্রমটি তালিকাভুক্ত করা হোক। বেঞ্চ বলেছে, ইতিমধ্যে, আমরা ৯ নভেম্বর, ২০২৩ তারিখের আদেশে এই আদালত কর্তৃক প্রদত্ত অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা অব্যাহত রাখতে ইচ্ছুক। তবে তার কিছু শর্ত রয়েছে। যদি কোনও ব্যক্তি অবৈধভাবে নিযুক্ত হয়েছেন বলে প্রমাণিত হয় তাহলে আদালতের চূড়ান্ত রায়ে প্রদত্ত বেতনের পুরো পরিমাণ ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নেবে। সেই সঙ্গে বেঞ্চ বলেছে, বিষয়টি গভীরভাবে বিশ্লেষণের দাবি রাখে। সেটি হল দুর্নীতি করে নিয়োগেরে সঙ্গে প্রকৃত নিয়োগের বিষয়টি পৃথক করার বিষয়টি দেখতে হবে। যদি তা সম্ভব হয়, তাহলে পুরো প্রক্রিয়া বাদ দিলে ভুল হবে। আদালতকে এটাও মনে রাখতে হবে, নবম-দশম শ্রেণির জন্য বিপুল সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। বেঞ্চ তার আদেশে বলেছে, এই ধরনের পৃথকীকরণ সম্ভব বলে ধরে নিলে এই আদালতকে পৃথকীকরণ নির্ধারণের পদ্ধতি নির্ধারণ করতে হবে।এর আগে তারা পশ্চিমবঙ্গে কথিত নিয়োগ কেলেঙ্কারিকে ‘পদ্ধতিগত জালিয়াতি’ বলে অভিহিত করেছিল এবং বলেছিল যে রাজ্য কর্তৃপক্ষ ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী নিয়োগের ডিজিটালাইজড রেকর্ড বজায় রাখতে বাধ্য।রাজ্য সরকারের আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, সরকারি চাকরি খুবই দুষ্প্রাপ্য। জনগণের আস্থা চলে গেলে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। তাদের নিয়োগ যদি দুর্নীতি গ্রস্ত হলে মানুষ আস্থা হারাবে। কীভাবে এটা মেনে নেওয়া যাবে, সেই প্রশ্ন তোলেন। বেঞ্চ জানায়, রাজ্য সরকারের ডেটা সংরক্ষণ করার কোনও তথ্য মেলেনি। হয় আপনার কাছে ডেটা আছে অথবা যদি না থাকে তাহলে ডিজিটাইজড আকারে নথিগুলি বজায় রাখা আপনার দায়িত্ব ছিল। এখন, এটা স্পষ্ট যে কোনও তথ্য নেই।রাজ্য সরকারের আইনজীবীদের উদ্দেশে বেঞ্চ বলে, আপনাদের নজরদারি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে হবে। শীর্ষ আদালত বলেছে, এই বিষয়ে দ্রুত শুনানির প্রয়োজন ছিল এবং আবেদনগুলি ১৬ই জুলাই শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত করেছে। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ চলমান সিবিআই তদন্তকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং স্পষ্ট করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত সরকারী আধিকারিক ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে কোনও দমনমূলক ব্যবস্থা ছাড়াই চলবে।
রাজ্য সরকার কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিত্বকারী প্রবীণ আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী এবং এন কে কল হাইকোর্টের নিয়োগ বাতিলের বিরুদ্ধে সওয়াল করেছিলেন।শুনানি চলাকালীন প্রবীণ আইনজীবী দুষ্মন্ত দাভে কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেন এবং হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ চেয়েছিলেন।বেঞ্চ বলে, মিস্টার দাভে, আমরা গঙ্গোপাধ্যায়ের আচরণ মানছি না। আমরা সকাল থেকে এখানে এসে মামলার খুঁটিনাটি কথা শুনছি। দয়া করে কিছু শালীনতা দেখান।শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি একবার বিরক্ত হয়ে বলেন, সুশৃঙ্খল শুনানির অনুমতি দেওয়া হলে তিনি নোটিশ জারি করবেন এবং জুলাই মাসে মামলাটি শুনানির জন্য রাখবেন। আমরা এখানে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের আচরণ খতিয়ে দেখতে আসিনি। প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনজীবীদের মামলার বৈধতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নয় এবং হাইকোর্টের বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনে এখন আমল দেওয়অ হবে না। সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রসঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেন, সুপ্রিম কোর্টে ন্যায় বিচারের পর আমি বাস্তবিকই খুব খুশি এবং মানসিকভাবে তৃপ্ত। সমগ্র শিক্ষক সমাজকে জানাই আমার অভিনন্দন এবং মাননীয় সুপ্রিম কোর্টকে জানাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা।উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্ট পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct