নিজস্ব প্রতিবেদক, মেদিনীপুর, আপনজন: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার বলেছেন, রাজ্যে স্কুলে ২৫ হাজার শিক্ষকের চাকরি যাওয়া নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের সাম্প্রতিক রায়ের পরে ‘গণতন্ত্র কাঁদছে’। সোমবার এক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে কলকাতা হাইকোর্ট ২০১৬ সালে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্কুল সার্ভিস কমিশনের (ডব্লিউবিএসএসসি) দেওয়া টিচিং ও নন-টিচিং পদে ২৫,৭৫৩টি নিয়োগ বাতিল করেছে। এই মামলার তদন্ত করছে সিবিআই ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। মেদিনীপুরে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী জুন মালিয়ার সমর্থনে এক নির্বাচনী জনসভায় দাঁতনে ভাষণ দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিচারব্যবস্থার প্রতি আমার শ্রদ্ধা রয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্র আজ কাঁদছে। সংশ্লিষ্টদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে অনেক চাকরি বাতিল করা হয়েছে। এখন স্কুলগুলো কীভাবে চলবে? মনে হচ্ছে কিছু লোক তাদের (বরখাস্ত স্কুলের কর্মীদের) নির্বাচনী দায়িত্বের অংশ হিসাবে চান না যাতে কেবল কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির সাথে যুক্ত ব্যক্তিরাই এই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকে। তিনি বলেন, একজন দক্ষ আইনজীবী হিসেবে আমি কিছু আইনি বিষয় সম্পর্কে অবগত। আমি পুনরাবৃত্তি করছি যে কিছু ভুল ছিল যা আমরা সংশোধন করব। কিন্তু কাজ হারানো প্রায় ২৬ হাজার মানুষের পরিবারের সদস্যরা এখন অনাহারে থাকবেন।এদিন কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, তামিলনাড়ুতে চল্লিশটি লোকসভা কেন্দ্র, আমাদের এখানে ৪২ টি। সেখানে একদিনে ভোট হলে আমাদের এখানে দুমাস ধরে কেন? নির্বাচন কমিশন হিসাব দিতে পারবে অন্য রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী কত আর আমাদের রাজ্যে এত কেন্দ্রীয় বাহিনী কেন? আসল লক্ষ্য বাংলাকে দখল করা। কি এমন করেছেন যে ভোট চাইছেন বিজেপি নেতারা? মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী পাল্টানোয় ওখানাকার সাংসদ দিলীপ ঘোষ প্রসঙ্গে বলেন, মানুষের কৈফিয়ৎ নেওয়ার প্রয়োজন আছে মেদিনীপুুরে নতুন প্রার্থী আনা হল কেন। বিজেপির ক্ষমতা থাকলে পুরনো প্রার্থীকে দিয়ে দেখুন মানুষ গ্রহণ করছেন কিনা আর। যদিও অতীত কথা তুলে ধরে মমতা বলেন, এই লোকসভাতে গতবার হেরেছিলাম। এবার ভোট দেবেন তো। ওরা মিথ্যে কথা বলছে রেশন দেওয়া প্রসঙ্গে। কোভিড এর সময় ছ মাস দিয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত সবটাই আমরা দিচ্ছি। এলাকার আদিবাসীদের জন্য একাধিক উন্নয়ন করেছি।
মেদিনীপুরের আরএসএসের ঘাঁটি নিয়ে বলেন, শুনেছি কেশিয়াড়িতে আরএসএস এর বড় স্কুল রয়েছে। অনেক সম্পত্তি করেছে ওরা। আগে ভাবতাম আরএসএস মানে ত্যাগী। ভালো লোক ছিল। আজ ভোগ করতে করতে এমন ভোগী হয়েছে ত্যাগ ছেড়ে ভোগকে আশ্রয় করছে ওরা। যার জন্য বিজেপি এত নোংরামি করছে, নোংরা খেলা খেলছে। তাই সাধারণ মানুষকে বলবো যদি চান লক্ষী ভান্ডার বন্ধ হবেনা চলুক, তাহলে বিজেপি ভান্ডারকে উপড়ে দিন। এখন আরএসএস বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাবে। বিজেপি মিছিলে গেলেই টাকা দিচ্ছে। কিন্তু কদিন আর দেবে? চাকরি যাওয়া মমতা বলেন, আমরা চাকরি দিচ্ছি ওরা চাকরি কাড়ছে। মেদিনীপুরের গদ্দার বোমা ফাটাবে বলে ২৬ হাজার ছেলে মেয়ের চাকরি খেয়ে নিল। যেন মগের মুলক। আমাদের দপ্তর সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। কোন কাজে ভুল হলে সংশোধন করতে বললে করে নেওয়া যায়। সবাই সঠিক কাজ করতে পারে না। মানুষের অধিকার আছে ভুল করার। তাই বলে বোমা ফাটাবে বলে ছাব্বিশ হাজার চাকরি কেড়ে নিতে পারি না। এত বড় সাহস!ওদের অনেক বোমা পিস্তল আছে। উনি বিজেপিতে গেলেন কেন? তিনি বলেন, টাকার রক্ষা করতে হবে, না হলে ই ডি, সি বি আই লেগে যাবে। তাই নিজেকে বাঁচানোর জন্য গিয়েছেন। সব থেকে বেশি গাদ্দারী যে করেছে সে ওই মেদিনীপুরের মীরজাফর। লোডশেডিং করে ভোট দখল করা, গুন্ডামি করে টাকা দিয়ে ভোট দখল করা বুঝে নেব। আসলে ওরা বুঝতে পেরেছে সবাই চাকরি পেলে বিজেপি উঠে যাবে। তাই চাকরি বন্ধ করছে। অন্যদিকে, বিচার বিভাগ বিরোধী মন্তব্যের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিপিএম সাংসদ তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য কলকাতা হাইকোর্টে আর্জি জানিয়েছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct