শেষ বিকেলের গল্প
শংকর সাহা
সেদিন অফিস থেকে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যে হয়ে এলো। অফিস শেষে মিটিং তারপর বাড়িতে ফেরা। এই সময় ট্রেন নেই তাই অগত্যা বাসই ছিল ভরসা। বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি এমন সময় হঠাত আমার নজরে আসে আমার পাশে এক ভদ্রমহিলা দাঁড়িয়ে আছেন। বয়স প্রায় ষাট ছুঁইছুঁই। বয়সের ভারে শরীর প্রায় ন্যুবব্জ।--“বাবা,দেখো তো এই প্রেসক্রিপশনে কয়টি মেডিসিন লিখেছেন ডাক্তার বাবু।আমি চোখে ঠিক দেখতে পাইনা।“প্রেসক্রিপশনটি তার হাত থেকে নিয়ে দেখলাম প্রায় আটটি ওষুধ লিখেছেন ।তাহার কম্পমান হাত দিয়ে প্রেসক্রিপশনটি নিয়ে ব্যাগে রাখলেন। তাহার দিকেআমি আবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। শীর্ণ চেহারায় এই শীতে একাকী বাইরে! বলতে বলতে বাস এসে গেল। আমি বাসে উঠেই তাঁহার জন্যে একটি সিট দেখতে থাকি।হঠাত তিনি বলে বসলেন, “ বাবা তুমি কোথায় যাবে? আমায় একটু বাড়িতে পৌঁছে দেবে। এই অন্ধকারে আমি যে কিছু ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছিনা।“তাঁহার কথায় মায়া হলো। তাই নিজের গন্তব্যের আগেই বাস থেকে নেমে গেল সুবিমল। ওনাকে রাস্তা পার করে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিল। যেতে যেতে সুবিমল জানতে পারে ওনার স্বামী ব্লাডক্যান্সার পেশেন্ট । এখন লাস্ট স্টেজ । এক ছেলে এখন সে আর মাকে দেখেনা। তাই বৃদ্ধার শেষ বয়সের সম্বল অসুস্থ স্বামী। বৃদ্ধার কথাগুলো শোনার পর সুবিমল স্তম্ভিত হয়ে যায়। “ বাড়ির কাছে যেতেই বৃদ্ধা সুবিমলের হাতটি শক্ত করে ধরে বলে, “ জান তো বাবা, বৃদ্ধ বয়সে নিজের সন্তান পাশে না থাকলে বড়ো অসহায় লাগে। “ঘড়িতে তখন নয়টা বেজে পাঁচ। বাড়িতে ফিরে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে পড়ে সুবিমল।বারে বারে মনে পড়ে বৃদ্ধার কথা। পরেরদিন অফিসে যাবার সময় একটুআগেই বেরিয়ে পড়ে সে। ফলের দোকান থেকে কিছু ফল কিনে সোজা রওনা দেয় সেইগলির পথে যেখানে বৃদ্ধাটির বাড়ি।কিছু দূর যেতেই সুবিমলের কানে আসে আজ ভোরেই বৃদ্ধাটি স্বামী মারা গেছেন। পাড়ার লোকেরা শ্মশানে দাহ করতে নিয়েগেছেন। মাঝ রাস্তায় িংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে সে। পেছন ফিরে অফিসে ফিরে আসে সে। আজ কোনো কাজে সুবিমলের মন নেই। বাইরে জানালার পাশদিয়ে অন্যমনস্কভাবে আকাশটার দিকে চেয়ে আছে। কুয়াশা ঘন আস্তরণ আজ সূর্যটাকে যেন ঢেকে রেখেছে। বৃদ্ধা বলা কথাগুলো তার যে ভীষণ মনে পড়ছে..
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct