নিজস্ব প্রতিবেদক, কোচবিহার, আপনজন: কোচবিহার শহর সংলগ্ন ফাঁসিরঘাটে তোর্ষা নদীতে সড়কসেতু তৈরি এবাবের লোকসভা নির্বাচনে অন্যতম ইস্যু হয়েছে। অভিযোগ, বাম আমলে তো বটেই, তৃণমূল কংগ্রেসের আমলেও এখানে এই সমস্যা মেটানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কোচবিহার আসনের সংসদ সদস্য নীতিশ প্রামাণিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকেও একদম উদাসীন ছিলেন এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের ব্যাপারে।প্রতিবার ভোটের আগে এই সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দেওয়া হলেও আখেরে কোনোবারই এই সমস্যা মেটানো হয় না বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ জানিয়েছেন। গত লোকসভা নির্বাচনের ন্যায় ইতিমধ্যেই কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী পিয়া রায়চৌধুরি এবং এবারে প্রথম এস ইউ সি আই পার্টির প্রার্থী দিলীপ বর্মন, দলীয় প্রচারে বেরিয়ে এই সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়েছেন। তবে তা ভোটবাক্সে কতটা প্রভাব ফেলবে তা ফল বেরোনোর পরই স্পষ্ট হবে। কোচবিহার জেলার সড়ক যোগাযোগে শহর থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে থাকা ফাঁসিরঘাটের প্রচুর গুরুত্ব বয়েছে। ঘুঘুমারি এড়িয়ে এই পথ ধরে কোচবিহার শহর এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যায়। এতে যাতায়াতের খরচ ও সময় সাশ্রয় হয়। এজন্য কোচবিহার শহর, কোচবিহার-১ ব্লকের শুকটাবাড়ি, ঘুঘুমারি, মোয়ামারি, ফলিমারি, চান্দামারি, চিলকিরহাট, পাটছড়া, পুঁটিমারি-ফুলেশ্বরী, হাঁড়িভাঙ্গা, দিনহাটা মহকুমার গোসানিমারি, সিতাই, পেটলা সহ মাথাভাঙ্গা মহকুমার নিশিগঞ্জ এলাকার কয়েক লক্ষ মানুষ ফাঁসিরঘাটের ওপর নির্ভরশীল। রোজ সূর্যোদয় থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এইসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ তোষা নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে এই পথে চলাচল করে। তবে বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে যাতায়াত খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। শীতের মরশুম বাদ দিয়ে বছরের অন্যান্য সময় সাঁকোর অস্তিত্ব থাকে না। নদীতে জলস্তর কম থাকলে কিছুদিন নৌকা দিয়ে পারাপার চললেও বর্ষায় সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সে সময় কয়েক হাজার হাজার মানুষ বাধ্য হয়ে দীর্ঘ ঘুর পথ পেরিয়ে কোচবিহার শহরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য ফাঁসিরঘাটে সেতু তৈরির দাবি সাধারণ মানুষের। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে আসছে ফাঁসিরঘাট সেতু আন্দোলন কমিটি । সংগঠনের তরফে বিভিন্ন সময় নাগরিক কনভেনশন, পথসভা , মিটিং, মিছিলের পাশাপাশি একাধিকবার জেলাশাসকের মাধ্যমে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে সেতু তৈরির দাবিতে স্মারকলিপি দেয়। একডাকে অভিষেক, দিদিকে বলোতেও গণফোন ফোন করে সেতুর দাবি নথিভুক্ত করে। পাশাপাশি জেলার সাংসদ, মন্ত্রী, বিধায়ক সহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিকেও দাবি জানায়। লোকসভা ভোটের আগে এই দাবি ফের জোরালো হয়েছে। ফাঁসিরঘাট পেরিয়ে যাতায়াতকারী হাঁড়িভাঙ্গার চন্দন বর্মন, চিলকিরহাটের দুলাল রায় , চান্দামারির সাইফুল ইসলাম, শুকটাবাড়ির মোস্তফা হক , গোসানিমারির প্রদীপ কুমার , টাপুরহাটের সুজিত ধর, কোচবিহারের রঞ্জন রায় প্রমুখ জানান, এখানে সেতু তৈরি হলে যাতায়াত অত্যন্ত সহজ হবে, ফলে কম সময় ও খরচে গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে। ফাঁসিরঘাট সেতু আন্দোলন কমিটির সম্পাদক মনিরুজ্জামান ব্যাপারী বলেন, ‘এখানে সেতু তৈরি হলে কোচবিহার জেলার সড়ক যোগাযোগে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংগঠন ও নাগরিক সমাজ এই দাবির পাশে দাঁড়িয়েছে।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct