আপনজন ডেস্ক: দখলদার ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে কয়েক ডজন ড্রোন, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ত্রুত গতির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে নজিরবিহীন হামলা চলিয়েছে ইরান। এতে ইসরায়েলজুড়ে ব্যাপক বিস্ফোরণ ঘটছে। জেরুজালেম ও তেল আবিবসহ পুরো ইসরায়েলজুড়ে বাজছে বিমান হামলার সাইরেন। সম্প্রতি সিরিয়ার রাজধানীতে ইরানি কনস্যুলেটে হামলার জবাবে রবিবার গভীর রাতে সরাসরি ইসরায়েলের ওপর এ হামলা শুরু করে তেহরান। জেরুজালেম ও তেল আবিবসহ পুরো ইসরায়েলজুড়ে বাজছে বিমান হামলার সাইরেন। এমন অবস্থায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের বোমা হামলার শেল্টারের কাছাকাছি থাকার নির্দেশ দিয়েছে। রবিবার এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। আল জাজিরায় বলা হয়েছে, ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরান নজিরবিহীন হামলা চালানো শুরু করেছে এবং তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলজুড়ে শহরগুলোতে বিমান হামলার সাইরেন এবং বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে।এদিকে ইরান থেকে উৎক্ষেপণ করা ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনগুলোকে গুলি করে ধ্বংস করার কাজে ইসরায়েলি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে জর্ডানের বাহিনীও কাজ করছে। তেহরান বলেছে, তারা সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় এই হামলা চালিয়েছে। দেশটি আরো বলেছে, বিষয়টি এখন ‘সমাপ্ত বলে মনে করা যেতে পারে’।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সতর্কতা জারি করে বলেছে, অধিকৃত গোলান মালভূমি, নেভাটিম, ডিমোনা এবং ইলাতের বাসিন্দাদের ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রতিরক্ষামূলক স্থানের কাছাকাছি’ অবস্থান করতে হবে। নেভাটিম এমন একটি স্থান যেখানে ইসরায়েলি বিমানঘাঁটির অবস্থান রয়েছে। দিমোনার উপকণ্ঠে ইসরায়েলের একটি পারমাণবিক চুল্লি রয়েছে। ইলাত হল ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় লোহিত সাগর তীরবর্তী বন্দরনগরী। গাজায় চলমান যুদ্ধের সময় ইয়েমেনের হুথিদের বারবার আক্রমণের শিকার হয়েছে এই শহরটি। অন্যদিকে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত সংস্থাটির নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠকের অনুরোধ করেছেন। আল জাজিরা বলছে, ইসরায়েলের জাতিসংঘ রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের ড্রোন হামলার বিষয়ে একটি জরুরি বৈঠকের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্টকে চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে এরদান বলেছেন, ‘ইরানের হামলা বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুতর হুমকি এবং আমি আশা করি— কাউন্সিল ইরানের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে সব উপায় ব্যবহার করবে।’এমন অবস্থায় রবিবার বিকেলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সভাপতি মাল্টা বলেছে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ (ইউএনএসসি) রবিবার নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় একটি জরুরি বৈঠকে বসবে।ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের ড্রোন হামলার বিষয়ে জরুরি বৈঠকের জন্য জাতিসংঘে ইসরায়েলি দূতের আনুষ্ঠানিক অনুরোধের পরপরই বৈঠকটি ডাকা হয়।উল্লেখ্য, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ককে ইরানি কনস্যুলেটে চালানো হামলার প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।রবিবার রাতে দখলদার ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে একের পর এক ড্রোন ছুড়তে থাকে ইরানের চৌকস বাহিনী ইসলামিক বিপ্লবী গার্ডের (আইআরজিসি) সেনারা। এসব ড্রোন একে একে ইসরায়েলের দিকে ছুটে যায়।ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, তাদের বিমানবাহিনী শতাধিক ড্রোন শনাক্ত করেছে। যেগুলোর ওপর নজর রাখা হচ্ছে। ড্রোনের পর ইরান ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে বলেও জানা গেছে। অন্যদিকে, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পরিস্থিতিতে এয়ার ইন্ডিয়া রবিবার ইজরায়েলের তেলআবিবে সমস্ত ফ্লাইট সাময়িকভাবে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একজন আধিকারিক জানিয়েছেন, দিল্লি এবং তেল আভিভের মধ্যে সরাসরি সব ফ্লাইট আপাতত স্থগিত করা হচ্ছে। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লি এবং ইজরায়েলি শহরের মধ্যে সাপ্তাহে চারটি ফ্লাইট চালায় । রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বেশ কিছুদিন ফ্লাইট বন্ধ থাকার টাটা গোষ্ঠীর মালিকানাধীন এই এয়ারলাইনটি প্রায় পাঁচ মাস পর গত ৩ মার্চ তেলআবিবে তাদের বিমান পরিষেবা পুনরায় শুরু করে। ইসরায়েলি শহরে হামাসের আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে এয়ার ইন্ডিয়া গত ৭ অক্টোবর, ২০২৩ থেকে দিল্লি-তেলআবিবের সমস্ত ফ্লাইট স্থগিত করেছিল। শনিবার টাটা মালিকানাধীন এয়ার ইন্ডিয়া ঘোষণা করেছে যে, তারা ইরানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলবে। একইভাবে, ভিস্তারাও ঘোষণা করেছে যে এই পরিস্থিতির কারণে এই অঞ্চলের রুটগুলি পরিবর্তন করা হতে পারে এবং তাদের ফ্লাইটের রুট এবং সময় দীর্ঘায়িত হতে পারে। দুটি এয়ারলাইনই, এল আল ইসরায়েল এয়ারলাইন্স এবং এয়ার ইন্ডিয়া ইসরায়েল ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক বিমান পরিষেবা চালায়। প্যালেস্তাইনে যুদ্ধ এবং নতুন করে ইজরায়েল-ইরান উত্তেজনার মধ্যে এই অঞ্চলে উদ্বেগ বেড়ে যাওয়ায়, মোদি সরকার দেশের নাগরিকদের ইরানে ভ্রমণের পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত রাখার পরামর্শ জারি করেছে। ভিস্তারার এক মুখপাত্র সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, “এর ফলে নির্দিষ্ট রুটে ফ্লাইটের সময় বেশি লাগতে পারে এবং সংশ্লিষ্ট ফ্লাইটের গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি হতে পারে। গোটা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে আরও পরিবর্তন করা হবে ৷উল্লেখ্য, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা বারবার বিমান পরিষেবাকে ব্যাহত করে ৷ কোথাও কোনও ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিস্থিতি তৈরি হলেই ফ্লাইট বাতিল করা হয় বা নির্দিষ্ট এয়ার স্পেস এড়াতে বাধ্য হয় বিভিন্ন এয়ারলাইন। ২০২১ সালে আফগানিস্তান সরকারের পতন এবং তালিবানের উত্থানের পর থেকেই বাণিজ্যিক এয়ারলাইনগুলি ইসলামিক এমিরেত-এর আকাশসীমা এড়িয়ে চলে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct