এম মেহেদী সানি, স্বরূপনগর, আপনজন: চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা তোলা, ব্যাংক থেকে লোন করিয়ে দেওয়ার নামে টাকা তোলা, জমি-জমার বেআইনি রেকর্ড তৈরি করে দেওয়া, একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত তোলাবাজদের বিরুদ্ধে মজলুমের পক্ষে অন্যায়ের প্রতিবাদই কাল হলো। গত বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ঈদের সন্ধ্যায় উত্তর ২৪ পরগনার স্বরুপনগর থানার অন্তর্গত গোয়ালদহে নিজের গ্রামে এলাকার দুর্বৃত্তদের দ্বারা বর্বরোচিত আক্রমণের শিকার হলেন কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের গণিতের অধ্যাপক ড. মোঃ রবিউল ইসলাম । ঈদে কলকাতা থেকে নিজ গ্রাম গোয়ালদহ ফিরেছিলেন তিনি। সেদিনই সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিট নাগাদ গোয়ালদহ বাবলা তলার একটি চায়ের দোকানে স্থানীয়দের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় সহ নানা বিষয়ে আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন রবিউল । অভিযোগ সেই সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই এলাকার পাঁচ সাতজন সশস্ত্র দুস্কৃতি অতর্কিত হামলা চালায় রবিউল ইসলামের উপর । তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন, স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে শাড়াফুল সরকারি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করেন। ওই ঘটনায় ৫ জনের বিরুদ্ধে স্বরুপনগর থানায় লিখিত অভিযোগ জানান রবিউল ইসলাম। অভিযোগের ভিত্তিতে একাধিক ধারায় মামলা রজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করে স্বরূপনগর থানার পুলিশ। অধ্যাপক রবিউল ইসলামের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় একটি তোলাবাজ গ্রুপ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। আর যেটার নেতৃত্ব দিচ্ছে মাঞ্জুর আলম বিল্লাহ্ নামের এক যুবক । ওদের তোলাবাজির বিরুদ্ধে আমি বরাবরই রুখে দাঁড়িয়েছি । যেটা ওরা সহজে হজম করতে না পেরে আমার উপর এভাবে হামলা চালিয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী এখনও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। তবে ঘটনার দুদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত কেন আসামীদের গ্রেফতার করা গেল না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। স্বরূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক প্রতাপ মোদক অবশ্য জানান তদন্ত চলছে, দোষীরা গ্রেপ্তার হবে। রবিউল ইসলাম সাহেবের সুস্থতা কামনার পাশাপাশি দুষ্কৃতিদের গ্রেফতারের দাবি এবং উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে সামাজিক গণমাধ্যমে সরব হয়েছেন বাংলার বিদ্বজ্জনেরা এবং একাধিক সামাজিক সংগঠন। সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামরুজ্জামান ফেসবুকে লেখেন, ‘অধ্যাপক রবিউল ইসলাম দুষ্কৃতীদের দ্বারা আক্রান্ত। দুষ্কৃতীকারীদের শাস্তি চাই।’
বাংলার এক প্রতিবাদী মুখ মোহাম্মদ জিম নাওয়াজ ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘আমার মতে, এই বাংলায় আমার দেখা বিদগ্ধ বাঙালি পণ্ডিতদের মধ্যে অবশ্যই রবিউল ইসলাম সাহেব একজন । তিনি অত্যন্ত নম্র ভদ্র শান্তশিষ্ট সুবক্তা । যে বা যারা তাঁর উপর আক্রমণ চালিয়েছে তাদের গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তির আবেদন জানাচ্ছি।’ জানা গিয়েছে, হতদরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান হয়েও বর্তমানে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের অধ্যাপক ড. মোঃ রবিউল ইসলাম। স্থানীয়দের কথায়, শিকড়কে ভুলে যাননি রবিউল, তাই প্রায়ই আমাদের মাঝে ফিরে আসেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অধ্যাপনার পাশাপাশি গ্রামের অসহায় হতদরিদ্র মানুষের বিপদে-আপদে ছুটে আসেন তিনি। দুর্বলদের পাশে দাঁড়িয়ে এলাকার দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান রবিউল । বর্তমান সমাজে পিছিয়েপড়া মানুষের শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন । সবকিছুর পাশাপাশি রবিউলের ধর্মভীরুতা এলাকার শিক্ষিতদের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ড. মোঃ রবিউল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, কয়েক বছরের মধ্যেই দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে তার কয়েকশো ছাত্র-ছাত্রী। গণিতচর্চার দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইএসআই, আইএমএসসি, সিএমআই, আইআইএসই, আইআইটিগুলো থেকে ফ্রান্সের ইকোলো পলিটেকনিকে আজ তার ছাত্র- ছাত্রীদের সফল উত্তরণ ঘটেছে । তবে রবিউলের গ্রামের এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া সমাজের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছেন রবিউল, যেখানে টাকার জন্য পড়তে না পারা মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের সম্পূর্ণ বিনা খরচে পড়াবেন তিনি। এসব কিছুর মাঝে ড. রবিউল ইসলামের ওপর অতর্কিত হামলার ঘটনায় বাংলার শান্তি, শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে দুর্বৃত্তদের রমরমা নিয়ে। তবে সকলেরই দাবি অধ্যাপক রবিউল এর হামলার ঘটনায় যুক্ত থাকা সমস্ত দোষীদের অবিলম্বে শাস্তি হোক। তারই অপেক্ষায় রয়েছেন বিদ্বজ্জনরা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct