সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: তৃণমূল প্রতিনিধিদের দিল্লি পুলিশের হেনস্থা নিয়ে নালিশ জানাতে সোমবার রাতে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখার করার জন্য রাজভবনে যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দিল্লিতে তৃণমূলের সাংসদরা কিছু দাবি নিয়ে কমিশনে দরবার করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে কমিশনে প্রবেশ করতে না দিয়ে অসুস্থ দোলা সেনকে টানা হেঁচড়া করে পুলিশ নিয়ে গিয়েছে। রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়ানকে চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে গিয়েছে দিল্লি পুলিশ। দিনের আলোয় গণতন্ত্রের হত্যা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেকের দাবি বিজেপি অভিযোগে যদি রাজ্যে দুবার এসপি পরিবর্তন হতে পারে তাহলে তৃণমূলের হাতে প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কেন এনআইএর ডিরেক্টর পরিবর্তন হবে না সে বিষয়ে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ দাবি করা হয়েছে বলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের জানান। অভিষেকের অভিযোগ কোন বিজেপির দপ্তরের সামনে বা কৃষি ভবনের সামনের কথা নয়, দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সামনে যেভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও সিআইএসএফকে ব্যবহার করে তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে শারীরিকভাবে নিগৃহীত করা হয়েছে তা দিনের আলোয় গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিষেক দাবি করেন। এ বিষয়ে তিনি পুরোপুরি জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
অভিষেক জানান, তাদের যাবতীয় অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে নয়, নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। নির্বাচন কমিশন উত্তরবঙ্গের ঝড়-ঝঞ্ঝায় বিধ্বস্ত ভেঙে যাওয়া বাড়িগুলি সারানোর জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে টাকা অনুমোদন করতে দিচ্ছে না। বাংলার মানুষের ভেঙে যাওয়া ঘর নতুন করে তৈরি হোক নির্বাচন কমিশন চাইছে না বলে অভিযোগ করেন অভিষেক। অভিষেক জানান, বেশ কিছু দাবি নিয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে যেতে না দিলে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল দিল্লিতে ধর্নায় বসে। তাদের হাতে তো অস্ত্র ছিল না। কিন্তু তাদেরকে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে যেভাবে শারীরিক নিগৃহীত করা হলো তাতে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জিতেন্দ্র তিওয়ারি প্রসঙ্গ টেনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর দাবি করেন কেন এন আই এ ডিরেক্টর পরিবর্তন হবে না? যারা বিজেপির তল্পিবাহক তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না প্রশ্ন অভিষেকের। এসপি ধন রাম সিং এর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ ও প্রমাণ আছে বলে রাজভবনের গেটে সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক দাবি করেন জিতেন্দ্র তেহারি নিয়ে যে সিসিটিভি ফুটেজ তার কাছে আছে তার বিরুদ্ধে যদি মান হানির মামলা হয় তাহলে তিনি সেই সিসিটিভি ফুটেজ প্রমাণ সহ হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে জমা দেবেন। যে জায়গায় অর্থাৎ গেস্ট হাউসে জিতেন্দ্র তেওয়ারির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে সেখানকার ভিজিটার বুকের যাবতীয় তথ্য কমিশনকে জমা দেওয়া হয়েছে বলে অভিষেক দাবি করেন।উল্লেখ্য, সোমবার বিকেলে চার সংস্থার অতি সক্রিয়তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চের কাছে নালিশ জানায় তৃণমূলের এক প্রতিনিধি দল। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে চার সংস্থার ‘বিজেপি ঘনিষ্ঠ’ প্রধানকে অবিলম্বে সরিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়ারও অনুরোধ জানান তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। কমিশনের ফুল বেঞ্চের সঙ্গে দেখা করার পরেই দফতরের বাইরে আচমকাই ধর্নায় বসেন তৃণমূল সাংসদরা। ২৪ ঘন্টা ধর্না দেওয়ার কথা ঘোষণাও করেন। আর ওই ধর্না শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই তৃণমূলের প্রতিনিধিদের উপরে ‘গুন্ডার’ মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে অমিত শাহের ‘পোষ্য’ দিল্লি পুলিশের জওয়ান ও আধিকারিকরা। ডেরেক ও’ব্রায়েন, সাগরিকা ঘোষদের টেনে হিঁচড়ে ও ধাক্কা মেরে তুলে দেওয়া হয় বাসে। পরে নিয়ে যাওয়া হয় মন্দির মার্গ থানায়। দলের প্রতিনিধিদেরন হেনস্থার খবরেই ক্ষুব্ধ হন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই হেনস্থার প্রতিবাদ জানাতে এদিন সন্ধেতেই রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চেয়েছেন। রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান শহরের বাইরে থাকায় তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদককে দেখা করার জন্য সময় বরাদ্দ করেনি রাজ্যপালের দফতর। রাজভবনের তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্যপাল পিংলা থেকে শহরে ফিরলেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে। রাতেই রাজভবনের তরফে জানানো হয়, রাত নয়টা নাগাদ রাজ্যপাল তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে সাক্ষাৎ করার সময় দিয়েছেন। ওই বার্তা পাওয়ার পরেই রাজভবনে ছুটে যান অভিষেক-সহ তৃণমূল প্রতিনিধিরা। প্রতিনিধিদলে ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী শশী পাঁজা, ব্রাত্য বসু, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সৌগত রায়, মালা রায়, অরূপ বিশ্বাস, কুণাল ঘোষ, অসীমা পাত্র।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct