সঞ্জীব মল্লিক, বাঁকুড়া, আপনজন: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৪ জুনের পরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার সমালোচনা করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বিজেপির “মোদি কি গ্যারান্টি” মানে নির্বাচন পরবর্তীতে বিরোধী নেতাদের কারাবন্দি করা। সোমবার বাঁকুড়ার রাইপুরে তৃণমুল প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তীর সমর্থনে জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তৃণমূল নেত্রী বিজেপির বিরুদ্ধে “গোটা দেশকে কারাগারে পরিণত করার” অভিযোগ করেন। তাই তৃণমূল নেতাদের স্ত্রীদের ভোটের আগে তাদের স্বামীদের গ্রেফতার করা হলে রাস্তায় নামার আহ্বান জানান।
১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত সাত দফার লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে ৪ জুন। কেন্দ্রীয় এজেন্সির বিরুদ্ধে আক্রমণ অব্যাহত রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন যে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) স্থানীয় পুলিশকে না জানিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভূপতিনগরে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী জনসভা করতে আসছেন। এতে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু উনি যেভাবে বলছেন লোকসভা ভোটের ফলের পর দুর্নীতির অভিযোগে বিরোধীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা গ্রহণযোগ্য নয়।
রবিবার জলপাইগুড়িতে এক নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি দাবি করেন, তিনি যখন বলছেন ‘দুর্নীতি দূর কর’, তখন বিরোধীরা বলছে ‘দুর্নীতিগ্রস্তদের বাঁচাও’, ৪ জুনের পর দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন মোদি।
মোদির এই বক্তব্যের সমালোচনা করে মমতা বলেন, একজন প্রধানমন্ত্রীর কি এভাবে কথা বলা উচিত? আমি যদি বলি ভোটের পর বিজেপি নেতাদের জেলে ঢোকাব? কিন্তু গণতন্ত্রে এটা গ্রহণযোগ্য নয়, তাই এটা বলব না। এটা আসলে ‘মোদী কি গ্যারান্টি’ ৪ জুনের পর সব বিরোধী নেতাদের জেলে ঢোকানো।
বিজেপি আসলে দেশ ও গণতন্ত্রকে জেলে পরিণত করেছে বলেও কটাক্ষ করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, এক পকেটে ইডি, সিবিআই, অন্য পকেটে এনআইএ এবং আয়কর রয়েছে। তারা আপনাদের মিত্র, যারা আমাদের হুমকি দিতে অভ্যস্ত। কিন্তু বিজেপি আমাদের ভয় দেখাতে পারবে না।
রাতে তৃণমূল নেতাদের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর জন্য বিজেপিকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে যদি তৃণমূল নেতাদের এজেন্সিগুলি গ্রেফতার করে, তাহলে তাদের স্ত্রীরা রাস্তায় নামবেন। আমরা এসব এজেন্সিকে ভয় পাই না।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভূপতিনগরে ২০২২ সালের একটি বিস্ফোরণ মামলায় দুই মূল সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করতে গেলে শনিবার এনআইএ-র একটি দল জনতার দ্বারা আক্রান্ত হয় বলে অভিযোগ করা হয়, যা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের সূত্রপাত করে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তদন্তকারীদের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের উপর হামলার অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেন, মধ্যরাতে ওই এলাকায় মহিলাদের হেনস্থা করার জন্য এজেন্সি পাঠানো এবং পরে দাবি করা যে এই মহিলারা এনআইএ কর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এখতিয়ারে। স্থানীয় পুলিশকে এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। ভোর তিন টায় মহিলারা আক্রান্ত হলেন। আর ভোর পাঁচটায় স্থানীয় পুলিশকে অবহিত করা হল, এটা ঠিক নয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct