ইশহাক মাদানি, আপনজন: ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে সিরাজুদ্দৌলার পরাজয়ে মুসলিম শাসনের পতন শুরু হয় ইংরেজদের হাতে।ইংরেজরা যে শাসক নয় বরং শোষক তা বুঝতে ১০০ বৎসর লেগে যায়।এক শ’ বৎসর পর ১৮৫৭ সালে হিন্দু মুসলিম কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করে প্রমান করে ইংরেজরা ভারতের হিন্দু মুসলমান উভয়ের শত্রু।ওঁরা শাসক নয় বরং শোষক। ইতিপূর্বে কখনই মুসলিম আমলে শাসকের বিরুদ্ধে এমন বিদ্রোহ দেখা যায়নি।যা প্রমান করে মুসলিমরা অন্ততঃ শোষক ছিলেন না।তবে মানুষ হিসাবে ভাল মন্দ তো ছিলই। সিপাহী বিদ্রোহে ভারতীয়দের পরাজয় ঘটলে মোঘল সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।যা ছিল এক বেদনা দায়ক অধ্যায়।পরাজয়ের ফলে লোমহর্ষক অত্যাচার নেমে আসে ভারতীয় হিন্দু মুসলমানের উপর।সুচতুর ইংরেজ মুসলমানের মধ্যে বিভাজনের আপ্রাণ চেষ্টা করে বটে তবে মুসলিম আলেম উলামা দমেন নি যার ফলশ্রুতিতে হাজার হাজার আলেমকে গাছের ডালে ডালে ফাঁসিতে লটকানো হয়। বিদ্রোহ চলতেই থাকে সাঁওতালরা বিদ্রোহ করলে তা দমন করে হাজার হাজার সাঁওতালকে জঙ্গিপুরে এক বিরাট গাছের ডালে ডালে ফাঁসিতে লটকানো হয়।সে কারনে সে স্থানটি এখনও ফাঁসিতলা নামে পরিচিত।তবুও ইংরেজ খেদাও অভিযান থামেনি চলতেই থাকে ক্ষুদিরাম ও তিতুমীর এর রক্তে লালহয় মাতৃভূমি।হিন্দু মুসলমানের যৌথ আন্দোলনে ইংরেজদের শোষণের সমাপ্তি ঘটে ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট ।কিন্তু স্বাধীনতা আনন্দদায়ক ছিল না।দ্বিজাতি তত্বের উপর ভিত্তি করে দেশ স্বাধীন হয়। পাকিস্থান তৈরী হয় ধর্মের দোহায় দিয়ে কিন্তু সেখানের দুরাবস্থা কারো অজানা নয়।এবং ইন্ডিয়া বা ভারত হয় ধর্মনিরপেক্ষ তথা সেকুলার দেশ।ভারতের মুসলিমরা মি. জিন্নার খপ্পরে পড়েননি বরং সুপন্ডিত রাজনীতিবিদ মাওলানা আবুল কালাম আজাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নিজ মাতৃভূমি নিজ মহাল্লা নিজ গ্রাম নিজ শহরেই থাকেন আছেন থাকবেন। ইনশাল্লাহ
ভারত স্বাধীন হল
১. স্বাধীন ভারতে কংগ্রেসের সম্মানিত প্রধান মন্ত্রী পন্ডিত জওহারলাল নেহেরু সম্মানিত শিক্ষা মন্ত্রী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ সহ স্বাধীনতা সংগ্রামী ব্যক্তিত্বপূর্ণ সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ বিশেষ কিছু প্রতিষ্ঠিত মুসলিম রাজনীতিবিদ এবং মুসলিম শিক্ষাবিদগণ রাজনীতির মঞ্চে থাকায় নরমে গরমে সময় কেটেছে বেশ কিছু কাল।মুসলিমদের মধ্যেকার সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ এবং প্রতিষ্ঠিত অমুসলিম জ্ঞানী গুণীজন সম্মিলিতভাবে দেশ গঠনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন কংগ্রেস আমলে।
২. এরপর বাংলায় আসে বাম জামানা। কমিউনিষ্ট মতাদর্শে ধর্মের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি না থাকায় প্রতিষ্ঠিত ধর্ম মান্যকারীগণ দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করেন।অপর দিকে কমিউনিষ্টগণ বাম নীতি অনুযায়ী প্রান্তিক মজুর শ্রেণীর কল্যান কামী হিসাবে নিজেদেরকে তুলে ধরতে সক্ষম হওয়ায় অন্যান্যদের মত প্রান্তিক মজুর শ্রেণির মুসলিমরা কমিউনিষ্ট নীতিকে মনে প্রাণে স্বাগত জানায়।বাংলায় শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় ১০%এরও কম, অপরদিকে প্রান্তিক চাষি এবং মজুর শ্রেণির সংখ্যা প্রায় ৯০% হওয়ায় ৯০% যখন বাম সরকারকে আকুন্ঠ সমর্থন জোগায় তখন (১০: ৯০) এর মধ্যে আপসে দূরত্ব কায়েম হয়।গণতন্ত্রানুযায়ী মুসলিমদের মধ্য থেকে যে সকল এম এল এ এবং এম পি প্রার্থী নির্বাচিত হন তাঁরা বাম নীতিমালা প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।আর সেটাই স্বাভাবিক।বিবিধ কারনে বাংলার মুসলিমরা অর্থনৈতিক দিক থেকে (ভাড়ে মা ভবানী) দূরাবস্থায় থাকলেও ওঁরা সাধারন কাস্টের আওতায় থাকায় সিডিল্ কাস্ট সিডিল ট্রাইবদের মত বিশেষ সুবিধা থেকে বঞ্ছিত থেকে যায়।সাচার কমিটির রিপোর্ট সামনে আসলে চোখে সরসেফুল দেখতে শুরু করে মুসলিমরা। কিন্তু ততদিনে নদী দিয়ে অনেক জল গড়ে গেছে।প্রজার অবস্থার যথাযথ হোম ওয়ার্ক না হওয়ায় পিছিয়ে পড়ারা আরও পিছিয়ে পড়ে।
৩. কালক্রমে বাঁচার তাগিদে বা ভ্রম সংশোধনে মুসলিমরা একডাল ছেড়ে আর একডাল ধরে ঝুলে যায়।
কিন্তু মুসলিমদের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ দীর্ঘদিন গ্যালারিতে অবস্থান করায় ওঁরা গ্যালারী প্রিয় হয়ে উঠে, ফিল্ডে নেমে ব্যাট ধরার সাহস হারিয়ে ফেলে।অপর দিকে কিছু লোকের আনাড়ি হাতের ব্যাটিংএ গ্যালারী থেকে হর্ষধ্বনি উধাও হয়ে যায়।বাম জামানায় ধর্মের প্রতি অনিহা থাকায় মুসলিমদের ‘ধর্ম না মেনেও ধর্মমানার’ বিষয়টি কেউই বুঝেননি এমনটা নয়।বুঝে সুঝেই ইমাম ভাতা ২৫০০ আড়াই হাজার টাকা এবং মুয়াযযেন ভাতা ১০০০ এক হাজার টাকা দেওয়ার কথা সরকারীভাবে ঘোষিত হলে ইমামের নাম এবং মুয়াযযেনের নাম নথিভূক্ত করার হিড়িক পড়ে।
১. অনেক ইমাম সাহেব প্রথমত ভেবে বসেন কেবলমাত্র জুমুয়া মসজিদের ইমামকে ভাতা দেওয়া হবে, ফলে অনেকে ওয়াক্তিয়া মসজিদকে রাতারাতি জুমুয়া মসজিদে পরিনত করে সীল স্বাক্ষর করে ফর্ম জমা দেন।
২. কোনো কোনো মৌলবী সাহেব গোপনে এমন মসজিদের ইমাম নিযুক্ত হন, যে মসজিদে কোনো দিনই তিনি ইমামতি করেননি।
আর কোনো কোনো ব্যক্তি এমন মসজিদের মুয়াযযিন নিযুক্ত হন যেখানে তার আযান কোনো দিন শোনা যায়নি।
৩. ভিন গ্রামের মৌলবী সাহেব মসজিদের ইমাম নিযুক্ত আছেন দীর্ঘদিন থেকে কিন্তু গ্রামের সরদার সাহেব নিজ আত্মীয়কে ইমাম করার জন্য ভিন গ্রামের ইমামকে বিদায় জানালে বেচারা চোখের পানি ফেলে বাড়ি ফিরে যান।আরও কত কি !
পূর্ব হতে চলে আসা নিয়মে গ্রামের লোকেরা সাধ্যমত ইমাম সাহেবকে পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা বেতন দিলেও তাঁদের প্রতি ইমাম সাহেব যত না কৃতজ্ঞ তার চেয়ে অধিক কৃতজ্ঞ আড়াই হাজারের প্রতি।উল্লেখনীয় যে এ বিষয়ে সালাফি খালাফি হানাফি সবাই একই নাপিতের মাথা মুড়া।ধর্মীয় নেতা হিসাবে যারা চিহ্নিত তাদের “ইমান” ইমাম ভাতায় পরখ করা হয়ে গেছে।গত বৎসর ইডেন গার্ডেনে ইমামদের “ইমান” পূর্ণতা লাভ করে। ((বস্তুত নামায পড়িয়ে টাকার জন্য ধর্ণাধরা ইসলামী শরিয়তানুযায়ী হারাম।)কিন্তু ইমাম মুয়াযযিনদের ছুটাছুটিতে একটা সত্য লুকায়িত আছে তা হল “ ক্ষুধা” জাত ধর্ম চিনে না।এটাও সত্য যে দুর্বল ব্যাটিংএ ইমামগণ শেষ পেরেকটি ঠুকে দিয়েছেন।আর একটি বিষয় উল্লেখ না করে নয় তা হল জালসা জৌলুসে হানাফি সালাফি খালাফিদের সিংহ গর্জনে বক্তৃতাঃ—-গ্রামে গঞ্জে তো আছেই মেট্রোপলিটন সিটিতেও রাত্রি এগারো বারোটায় মিলাদ মাহফিলে যখন গর্জন শুরু হয় তখন মনে হয় সুন্দর বন থেকে আওয়াজ আসছে। হানাফির বিরুদ্ধে সালাফি, সালাফির বিরুদ্ধে হানাফি এমনভাবে ধর্মগুরুগণ “নাটক” সাজিয়ে রেখেছেন তা ভক্তকুল দেখা ও শোনার জন্য হাজার হাজার টাকা ব্যয় করতে কুন্ঠিত হয় না। আর ভাবে আহা ! এঁরাই জাতিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। হানাফি সালাফি খালাফি ব্রেলবীদের এক অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগার দেখে মনে হয় না এঁরা এক ধর্মের অনুসারী। এ সব দেখে শুনে বাঙালী মুসলিম বুদ্ধিজীবি মহল যাঁরা ইসলাম ধর্মকে শুনে মানেন তাঁরাও হতবাক। কিছু কিছু এনজিও বাঙালী মুসলিমদের মৌলিক সমস্যা গুলি সহিষ্ণুতার সংগে সমাধানের চেষ্টা করলেও ধর্মগুরুদের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা হেতু কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না বললেই চলে।ফলে ঘুরে দাঁড়ানোর সবপথ রুদ্ধ বলেই মনে হচ্ছে।তবে বলিষ্ঠ ব্যক্তির ‘ধর্ম’ নিরাশ না হওয়া।তবে এটাও ঠিক কর্মহীন বলিষ্ঠতা পতন রোধ করতে কখনই পারেনি। ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ - চাকরী নিয়ে বিদেশে থাকেন এমন কিছু বাঙালি মুসলিম ধর্মগুরু নিত্যদিন মুসলিমদেরকে পলিটিক্সে না যাওয়ার উপদেশ দিয়ে চলেছেন।যা অপরিনামদর্শী চাল বলেই মনে হয়। কিন্তু বাঁচার পথ হল— জাতি সত্বা বজায় রেখে মুসলিম অমুসলিম ( যাঁরা আদম ও হাওয়ার সন্তান হিসাবে এক পরিবার ভূক্ত) মিলে জুলে সৎকাজে এক অপরকে পূর্ণ সমর্থন করা এবং অন্যায় কাজ প্রতিহত করা।
সেদিন কখন আসবে ?
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct