আপনজন ডেস্ক: ‘আমি কখনোই বিশ্বের সবচেয়ে গতিসম্পন্ন বোলার হতে চাইনি। এই স্বপ্ন দেখিনি কখনো। সেটা হতে চাই–ও না। আমি বিশ্বের সেরা বোলার হতে চাই’—টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মায়াঙ্ক যাদব এটুকু বলে একটি পার্থক্যও বোঝালেন। গতি–ই যে সব নয়, সেরা হতে হলে আরও কিছু দক্ষতাও লাগে, ‘যত কম সম্ভব রান দিয়ে ধারাবাহিক হতে চাই। গতি আমার বিশেষ সংযুক্তি। কিন্তু আরও কিছু বিষয় আছে, যেমন লাইন–লেংথ, বলটা কোথায় ফেলতে হবে—পেস এসবের পেছনে শক্তি বড় জোর।’মায়াঙ্ক—নামটা সম্ভবত অপরিচিত নয়। আইপিএলে গত শনিবার পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে তাঁর অভিষেক। বল করেছেন ঘণ্টায় ১৫৫ কিলোমিটারের ওপরে। ২৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরাও ২১ বছর বয়সী এই ফাস্ট বোলার। তবে চোখে লেগে আছে মায়াঙ্কের গতিটা। লক্ষ্মৌ সুপারজায়ান্টসের হয়ে অভিষেকে তাঁর প্রথম ওভারে প্রথম তিনটি ডেলিভারিই ছিল ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটার গতির বেশি, তৃতীয়টি ১৫০! নিজের পরের ওভারে গতিটা আরও বেড়েছে। প্রথম বলেই ঘণ্টায় তুলেছেন ১৫৫.৮ কিলোমিটার—এবারের আইপিএলে যা সর্বোচ্চ। তখন প্রভু যাদবের হৃদয়টা নিশ্চয়ই গর্বে ভরে গেছে! মনে মনে তিনি কি ফিরে গিয়েছিলেন, সেই সময়ে যখন মায়াঙ্কের বয়স ১৪ বছর, আর প্রভু ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার কার্টল অ্যামব্রোসের পাঁড় সমর্থক। তখন ১৪ বছর বয়সী সন্তানের ভেতর একটি ‘বীজ’ রোপণ করেছিলেন প্রভু।মায়াঙ্ক দিল্লিতে এক কারখানায় কাজ করতেন। পুলিশের গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন বানানোর কারখানায় কাজ করতেন প্রভু। দিনের কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে ভেঙ্কাটেশ্বরা কলেজে অনুশীলন করছিল সনেট ক্রিকেট ক্লাব। সেখানে বোলিং করছিলেন মায়াঙ্ক। ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে তাঁকে একটি পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রভু—যেটাকে পাঞ্জাবের বিপক্ষে মায়াঙ্কের গতিময় বোলিংয়ের বীজ বলতে পারেন। অ্যামব্রোসের গল্প বলেছিলেন প্রভু। ছেলের আইপিএলে অভিষেকের পর প্রভু দাহকালের সেই গল্পই বলেছেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে, ‘তাকে অ্যামব্রোসের একটি গল্প বলেছিলাম...তুই জানিস, সবাই ওকে (অ্যামব্রোস) কেন ভয় পেত? কারণ, ও তাদের (ব্যাটসম্যান) মাথায় মারত। তুই–ও যদি ব্যাটসম্যানদের মনে ভয় ঢোকাতে চাস, তাহলে তোকেও একই কাজ করতে হবে।’‘সার পে মারনেওয়ালা বোলার!’কথাটা হিন্দিতে। প্রভুর পরামর্শ পাওয়ার পর মায়াঙ্ক ধীরে ধীরে হয়ে উঠলেন দিল্লি ক্রিকেটের ভয়ংকরতম ফাস্ট বোলার। তাঁকে নিয়ে দিল্লির ক্রিকেটে ওই কথাটা প্রচলিত হয়ে ওঠে—সার পে মারনেওয়ালা বোলার; বাংলায়—যে বোলার মাথায় মারে!
পাঞ্জাবের বিপক্ষে শনিবার মায়াঙ্ক যখন একই কাজ করছিলেন, উত্তেজনা ধরে রাখতে পারেননি ব্রেট লি। অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি ‘এক্স’–এ পোস্ট করেন, ‘ভারত নিজেদের সবচেয়ে গতিময় বোলারকে পেয়ে গেছে। নিখাদ গতি। অসাধারণ।’মায়াঙ্কের চোখ সেরা হওয়ায় ঠিক আছে। গতি যে পছন্দ করেন না, তা কিন্তু নয়। শুধু গতিকেই প্রাধান্য দিতে তিনি নারাজ। তাই বলে গতির নেশায় পড়ে না কে? মায়াঙ্কের গতি ভালো লাগে। সেটা শুধু ক্রিকেটে নয়, জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও। পাঞ্জাবের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘গতিময় কোনো কিছু জীবনযাপনেও ভালো লাগে। রকেট, জেট ও সুপারবাইক ভালো লাগে। গতি রোমাঞ্চ জাগায়।’সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে মায়াঙ্ক ঘণ্টায় ১৫৩ কিমি গতি তোলার পর নির্বাচকদের নজরে ছিলেন। সেটি গত ফেব্রুয়ারি–মার্চে অনুষ্ঠিত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ভারতের পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের জন্য। এর আগে জানুয়ারির মধ্যে মায়াঙ্কের পাঁজরের চোট থেকে পুরোপুরি ফিট হয়ে ওঠার প্রত্যাশা করা হচ্ছিল, কিন্তু সেটি হয়নি। সেই হতাশা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কাছে জানিয়েছেন এভাবে, ‘৬০ শতাংশ ফিট হতে পারলেও আমি এক পায়ে ভর করে খেলতাম।’দিল্লিতে বিরাট কোহলি যেখানে বড় হয়েছেন, সেখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে মোতিনগর। এখানেই বেড়ে উঠেছেন মায়াঙ্ক, এখানেই তাঁর ঘর। বাবার সঙ্গে পেস বোলিং নিয়ে খুনসুটি করতে করতে জোরে বোলিংয়ের প্রেমে পড়েছেন। বাবার পছন্দ অ্যামব্রোস, ছেলের পছন্দ ডেল স্টেইন। দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তি না খেললে ঘরে সাধারণত টিভিতে ক্রিকেট দেখতেন না মায়াঙ্ক। তাঁর বাবা স্মরণ করেছেন সেসব দিনের স্মৃতি, ‘অ্যামব্রোস এবং ওয়ালশকে পছন্দ করতাম। অ্যামব্রোসকে বেশি পছন্দ করতাম গতি ও বাউন্সের জন্য। ওদের গল্প বলতাম তাকে (মায়াঙ্ক)।’প্রভু এরপর বলে যান, ‘তোমার অ্যামব্রোস কি ডেল স্টেইনের মানের? সে (মায়াঙ্ক) প্রায়ই এই প্রশ্নটা করত এবং তারপর ছোটখাটো একটা দ্বৈরথ হতো—কে সেরা এটা নিয়ে। অ্যামব্রোস না ডেল স্টেইন?’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct