নিজস্ব প্রতিবেদক, মালদা, আপনজন: দুটো কিডনি বিকল, দিন গুনছেন সেনাউল। এ যেন গরিবের ঘরে ঢুকেছে “রাজকীয়” অসুখ। যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরোচ্ছে সেখানে ডাক্তারবাবু বলেছেন কিডনি পরিবর্তন করতে হয়। যা রাজমিস্ত্রি সেনাউলের কাছে অকল্পনীয়।মালদা রতুয়া ২ নম্বর ব্লকের কুতুবগঞ্জ বটতলা এলাকায় বাড়ি মোহাম্মদ জেনাউল হকের। দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে সুখেই সংসার কাটছিল তার। নিজে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। দিনের শেষ ভালো ইনকাম হতো। কিন্তু সুখের সংসারে ভয়াবহ আঘাত হানলো এক ভয়াবহ অসুখ। বছরখানেক আগে মাথা ব্যাথা পেট ব্যথা শুরু হয় তার। স্থানীয় ডাক্তারদের কাছে ওষুধ খেয়ে ঠিক হয়ে যেত। কিন্তু ঘনঘন সমস্যা হয় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি কিছু টেস্ট করান। সেই টেস্টে দেখা যায় তার দুটো কিডনি বিকল হয়ে গেছে। এরপর কলকাতা ব্যাঙ্গালোর লখনৌ সহ বহু জায়গায় গেছেন। সব জায়গায় ডাক্তারবাবুর একই কথা বলেছেন কিডনি পরিবর্তন করতে হবে। খরচ প্রায় ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা। পাশাপাশি সুস্থ ডোনারেরও প্রয়োজন। কিন্তু টাকা বা ডোনার কোনটাই যে জোগাড় করতে পারবেন না তা ভালোমতোই বুঝতে পারছেন সেনাউল ও তার পরিবার। তাই ডাক্তারের পরামর্শ চলছে ডায়ালাইসিস। সপ্তাহে দুইবার ডায়ালাইসিস করতে হয়। যার জন্য খরচ হয় প্রায় ৫০০০ টাকা। পাশাপাশি ওষুধ পত্রের খরচ তো আছে। এই টাকা জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন সেনাউল ও তার স্ত্রী। বাধ্য হয়ে স্ত্রী ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমেছেন। একরাশ নিরাশা নিয়ে সানাউল হক জানান, দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে সুখে সংসার কাটছিল। কিন্তু এরকম একটা রোগ আমার শরীরে বাসা বেধেছে আমি আগে থেকে বুঝতে পারিনি। এখন কিছুই করার নেই। টেস্টে ধরা পড়েছে দুটো কিডনি মিলিয়ে আমার মাত্র ৫ পার্সেন্ট কাজ করছে। যে কোন মুহূর্তে কিছু একটা হয়ে যেতে পারে। কিডনি পরিবর্তনে অপারেশনের খরচ ১০ লক্ষ টাকা। এত টাকা জোগাড় করার সামর্থ্য আমার নেই। সপ্তাহে দুইবার ডায়ালাইসিস করছি। সংসারে ইনকামের মতো কিছুই নেই। লোক সাহায্য করলে ডায়ালাইসিস করতে যেতে পারি, না হলে ব্যথা যন্ত্রণা নিয়ে থাকতে হয়। পা ফুলে গেছে, ঠিকমতো খেতে পারি না। সরকারি কোন সাহায্য পেলে তবু কিছুটা রেহাই পাওয়া যেত। একই সুর শোনা গেল সেনাউলের মায়ের মুখ থেকে। মনখোশ বিবি জানান আমার ছেলে বছরখানেক থেকে শয্যাশায়ী। বৌমা এর ওর কাছ থেকে টাকা এনে চিকিৎসা করায়। খুব অসহায় ভাবে দিন কাটছে আমাদের। চিকিৎসা খরচ আমরা জোটাতে পারছি না। সরকার থেকে কোন অনুদান পাওয়া গেলে ভালো হয়। সাহায্যের আশায় বুক বেঁধে রয়েছে ওই গরিব পরিবার।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct