জাইদুল হক, আপনজন: মুর্শিদাবাদ জেলার তিনটি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম হল জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্র। জঙ্গিপুর কেন্দ্রে মাহাত্ম্য অনেক। ১৯৭১ সালে জঙ্গিপুর কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের লুতফুল হক আরএসপির বরুণ রায়কে হারিয়ে সাংসদ হন। কিন্তু ১৯৭৭ সালে তিনি সিপিএমের শশাঙ্কশেখর সান্যালের কাছে মাত্র ২১৮৬ ভোটে পরাজিত হন। সেই থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত একটানা সিপিএম জিতে আসে। ১৯৯৬ সালে মুহাম্মদ ইদ্রিশ আলি বামেদের সেই একচ্ছত্র ভেঙে জয়ী হন। কিন্তু তারপর ফের সিপিএমের দখলে আসে জঙ্গিপুর। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি ২০০৪ সালে। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গিপুর কেন্দ্রে প্রার্থী হন প্রণব মুখোপাধ্যায়। ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি জঙ্গিপুরের সাংসদ ছিলেন। ২০১২ সালে সাংসদ পদে ইস্তফা দিয়ে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নেন এবং রাষ্ট্রপতি হন। তাই জঙ্গিপুরের প্রসঙ্গ এলেই প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতির কথা এসে পড়ে। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ইস্তফা দেওয়ার পর তার শূন্য আসনে জয়ী হন তারই পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে তিনি ২০১৯ সালে জঙ্গিপুরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও তৃণমূল প্রার্থী খলিলুর রহমানের কাছে হেরে যান। শুধু তাই নয়, অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের স্থান হয় তৃতীয়। দ্বিতীয় স্থান দখল করেন বিজেপি প্রার্থী মাফুজা বিবি।
ফলে, বোঝাই যায় মুসলিম ভোটের একটা বড় অংশ পেয়েছিলেন। বলা যায়, মুসলিম ভোট ভাগ হয়ে গিয়েছিল। তাই মুসলিম প্রার্থী হিসেবেই মাফুজা বিবি ভাল ভোট পান। এবার অবশ্য বিজেপি মাফুজা বিবিকে প্রার্থী করেনি বিজেপি। এবার বিজেপি প্রার্থী করেছে ধনঞ্জয় ঘোষকে। আর কংগ্রেস প্রার্থী করেছে মোর্তজা হোসেনকে। সেক্ষেত্রে বিজেপির কৌশল হতে পারে ৬৩.২ শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত জঙ্গিপুরে মুসলিম ভোট ভাগাভাগি। তাহলে ধর্মীয় মেরুকরণের ফলে যদি হিন্দু ভোটের সিংহ ভাগ ধনঞ্জয় পান এই অাশায় রয়েছে বিজেপি। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের বিশ্লেষণ বলছে, বিজেপির সেই আশা নিরাশায় পরিণত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এবার প্রশ্ন, বাম কংগ্রেস জোট কতটা ধাক্কা দিতে পারে তৃণমূল প্রার্থী খলিলুর রহমানকে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, মোস্তাক হোসেনের পতাকা বিড়ির পর খলিলুরের বিডি ব্যবসার স্থান। জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে জঙ্গিপুর, রঘুনাথগঞ্জ ও সুতি বিধানসবা কেন্দ্রের প্রায় সিংহভাগ এলাকা জড়িত বিড়ি শিল্পের সঙ্গে। এই এলাকা জুড়ে যে বিড়ি শ্রমিকরা রয়েছেন, তাদের তারাই অন্যতম ভোট ব্যাঙ্ক খলিলুরের। খলিলুর রহমান বিভিন্ন আপদে বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদেরকে আর্থিক সাহায্য করেন বলে অনেকে মানছেন। আর বিড়ি শ্রমিকদের বিড়ি শিল্পপতিদের প্রতি েয বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে তা স্পষ্ট। কারণ, বিড়ি শিল্পপতি ইমানি বিশ্বাস, জাকির হোসেন, বায়রন বিশ্বাস জিতেছেন বিড়ি শ্রমিকদের জোরেই। তবে, বিড়ি শ্রমিকদের অভিযোগ কি ভোটের আগে খলিলুর রহমান, ইমানি বিশ্বাস, জাকির হোসেন, বায়রন বিশ্বাসরা বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিলেও ভোটের পরে চুপ হয়ে যান। আবার অভিযোগও আছে, ভোটে জিতে জঙ্গিপুর সংলগ্ন এলাকা বাদে অন্য এলাকায় তার দেখা মেলে না। কিন্তু যেভাবে বায়রন বিশ্বাস কংগ্রেসের হয়ে জিতে তৃণমূলে গেছেন, তার ফলে সাগরদিঘি এলাকায় বায়রনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাম কংগ্রেস জোট প্রার্থী মোর্তজা হোসেনকে সহায়তা করে তুলতে পারে।
আবার এনআরসি নিয়ে মমতার অভয় বাণী তুলে ধরায় খলিলুরে জমিন অনেকটাই শক্ত। তবে, এবার জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি অনেকটাই ম্রিয়মান। তাই লড়াইটা মূলত খলিলুর রহমান বনাম মোর্তজা হোসেনের। তবে, জঙ্গিপুর কেন্দ্রে প্রার্থীর জেতাটা যে নির্ভর করছে বেশ কয়েক লক্ষ বিড়ি শ্রমিকদের উপর তাতে সন্দেহ নেই।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct