চন্দনা বন্দ্যোপাধ্যায়, রায়দিঘি, আপনজন: সুন্দরবনের রায়দীঘির ঐতিহাসিক নিদর্শন জটার দেউলে এখনো তৈরি হল না পর্যটন কেন্দ্র। ক্ষোভ সাধারণ মানুষের। রায়দিঘির মথুরাপুর ২ ব্লকের কঙ্কনদিঘি পঞ্চায়েতের পূর্ব জটা গ্রামে রয়েছে প্রায় ৯০ ফুট উঁচু, ১১০ ফুট চওড়া শিবের মন্দির।যা ইতিহাস বর্ণিত জটার দেউল নামে উল্লেখিত।সুন্দরবনের রায়দিঘির প্রাচীন স্থাপত্য জটার দেউলকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেছিল রাজ্যে সরকার।তবে কাজ কিছুই এগোয়নি। শীতের মরসুমে প্রতি বারের মতো এবারও প্রাচীন এই মন্দিরে ভিড় করেছিলো পর্যটকেরা। কিন্তু অভিযোগ, তেমন পরিষেবা মিলছে না পর্যটকদের। রায়দিঘির মথুরাপুর ২ নং ব্লকের কঙ্কনদিঘি পঞ্চায়েতের পূর্ব জটা গ্রামে রয়েছে প্রায় ৯০ ফুট উঁচু, ১১০ ফুট চওড়া এই শিবের মন্দিরটি। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বিস্তীর্ণ এলাকা এক সময়ে গভীর জঙ্গলে ঢাকা ছিল। ব্রিটিশ রাজত্বকালে জঙ্গল কাটার সময়ে মন্দিরটি আবিষ্কৃত হয়। পুরাতত্ত্ব বিভাগ গবেষণা করে জানতে পেরেছে, প্রায় হাজার বছর আগে রাজা জয়ন্ত চন্দ্র ওই মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। মন্দিরে ছিল একটি শিবলিঙ্গও। মন্দির আবিষ্কারের পরে পাথরের শিবালঙ্গ টি মন্দিরবাজারের একটি পরিবারের সদস্যেরা তুলে নিয়ে যান।তবে পরে ওই মন্দিরে আবার শিবলিঙ্গ বসানো হয়েছে।জটার দেউলকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের উৎসাহ রয়েছে। প্রতি বছর শীতের মরসুমে দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ মন্দির দর্শন করতে আসেন। মেলাও বসে যায়।তাছাড়া সারা বছর বহু মানুষ আসেন এই জটার দেউল দেখতে। কিন্তু হাজার হাজার দর্শনার্থীকে পরিষেবা দেওয়ার মতো কোনও ব্যবস্থা এখানে এখনো গড়ে ওঠে নি বলে অভিযোগ। অনেকেই এলাকায় এক-দু’রাত থেকে যেতে চান। কিন্তু সেই ব্যবস্থা নেই। শৌচালয়, পানীয় জলেরও সমস্যা রয়েছে বলে অভিযোগ।স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জটার দেউলকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কথা ছিল, মন্দিরের পাশেই তৈরি করা হবে থাকার আবাসন। মন্দির চত্বরকে সাজানোর কথাও ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই কাজ কিছুই এগোয়নি। শুধু পুরাতত্ত্ব বিভাগের তরফে মন্দিরটি রং করে মন্দির চত্বর ঘিরে দেওয়া হয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, সারা বছরই কমবেশি পর্যটক আসেন।পর্যটন কেন্দ্র হলে দোকানপাট, হোটেল, লজ গড়ে উঠত। অনেক বেকার যুবক যুবতীরা কাজ পেতেন,কর্মসংস্থান হতো।এলাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটতো। কিন্তু কিছুই হয়নি। তা ছাড়া, মূল রাস্তা থেকে মন্দিরে যাতায়াতের প্রায় দেড়শো মিটার রাস্তা খুবই সঙ্কীর্ণ। ভিড় হলে মন্দিরের কাছে পৌঁছতেই পারেন না অনেকে। রায়দিঘি থেকে মন্দিরে আসার পথেও প্রায় ৩ কিমি রাস্তা খারাপ। রাস্তা সারানোর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।রায়দিঘির বাসিন্দা প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন,পর্যটন কেন্দ্র হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাড়াতাড়ি কাজ শুরু হলে এলাকার মানুষের উপকার হয়। রায়দিঘির বিধায়ক অলক জলদাতা বলেন, ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মন্দিরের আশেপাশের এলাকা জুড়ে কোনও খননকার্য করা যাবে না। তবে ওই প্রাচীন মন্দিরকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct