আপনজন ডেস্ক: অবিশ্বাস্য! এটুকুতেও বোধহয় স্পেন-ব্রাজিল ম্যাচের রোমাঞ্চটুকু ধরা যাচ্ছে না। এমন ম্যাচের স্বাদ যে শুধু প্রাণভরে দেখেই উপভোগ করতে হয়। আজ রাতে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুয়ে যে নাটকীয়তার দেখা মিলল, তার রেশ রয়ে যাবে আরও অনেক দিন। এমন ম্যাচে কেউ হারলেই বোধহয় নষ্ট হত এর মাহাত্ম্যটুকু। নাহ, শেষ পর্যন্ত ব্রাজিল-স্পেনের কেউই জেতেনি। ৩-৩ গোলে ড্র হওয়া এ ম্যাচে কেউ না জেতাটাই বরং এ ম্যাচের সৌন্দর্য।একটি ফুটবল ম্যাচ থেকে যা যা প্রত্যাশা করা হয় সব রসদই ছিল এ ম্যাচে। শুরুতে স্পেনের একচ্ছত্র দাপট, এরপর ব্রাজিলের রূপকথার গল্পের মতো ঘুরে দাঁড়ানো। আর লামিনে ইয়ামালের ছড়ি ঘুরানোর জবাবে ফেলিপে এনদ্রিকের দুর্দান্ত গোল। পুরোপুরি নিঁখুত ম্যাচ হয়তো নয়। কিন্তু দলীয় কিংবা ব্যক্তিগত নৈপুণ্য; কোনো দিক থেকে উত্তাপের কমতি ছিল না এ ম্যাচে। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর শুরুটা অবশ্য ছিল অন্য রকম। প্রথমার্ধের শুরু থেকেই স্পেনের প্রেসিংয়ে টালমাটাল ব্রাজিল। প্রথম দিকের বেশ কিছু সময় বল শুধু ব্রাজিলের অর্ধেই ছিল। একপর্যায়ে স্পেনের আক্রমণের ঝড় সামলাতে না পেরে বক্সের ভেতর লামিনে ইয়ামালকে ফাউল করে বসেন জোয়াও গোমেজ। ১২ মিনিটে স্পট কিক থেকে গোল করে স্বাগতিকদের এগিয়ে দেন রদ্রি। পিছিয়ে পড়েও সেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারছিল না ব্রাজিল। ম্যাচের ১৭ মিনিটে ভিনিসিয়ুস-রদ্রিগোর সমন্বয়ে প্রথম বলার মতো আক্রমণে যায় ব্রাজিল। যদিও সেই আক্রমণ থেকে গোল পায়নি লাতিন দেশটি।
ম্যাচের শুরু থেকেই স্পেনের আধিপত্যের ছড়ি ছিল ১৬ বছর বয়সী ইয়ামালের হাতে। এখনো কৈশোর না পেরোনো ইয়ামাল যখনই পায়ে বল পেয়েছেন ব্রাজিলের রক্ষণকে নাচিয়ে ছেড়েছেন। এদিন ইয়ামালের পায়ে গোলক বস্তুটি যেন সৌন্দর্যের পসরা নিয়ে হাজির হয়েছিল। বলের ওপর তাঁর প্রতিটি স্পর্শ যেন শিল্পীর তুলির আঁচড়। এমনকি দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে মাঠ ছাড়ার সময় দর্শকেরা দাঁড়িয়ে অভিবাদনও জানান ইয়ামালকে। ইয়ামালের মুগ্ধতা ছড়ানোর রাতে ৩৬ মিনিটে স্পেনকে দুর্দান্ত এক গোলে ২-০ লিড এনে দেন দানি অলমো। এই গোলের সহায়তাকারী কিন্তু সেই ইয়ামালই ছিলেন। তার পাস থেকে বল পেয়ে বক্সের ভেতর একাধিক ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে লক্ষ্যভেদ করেছেন অলমো। এই গোলের পথে স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড যেভাবে লুকাস বেরালদোকে নাটমেগ করেছেন, তা এই সেন্টার ব্যাকের আরও অনেক দিন মনে থাকবে।দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও খুব একটা সুবিধা করতে পারছিল না ব্রাজিল। বল পায়েই রাখতেই হিমশিম খাচ্ছিল তারা। ইংল্যান্ড ম্যাচের সেই ধারও অনেকটা অনুপস্থিত ছিল। তবে হাবুডুবু খেতে থাকা ব্রাজিলকে ম্যাচে ফেরার সুযোগ করে দেয় স্পেনই। আরও বিশেষভাবে বললে গোলরক্ষক উনাই সিমোনের হাস্যকর একটি ভুল। বক্সের সামনে রদ্রিগোর পায়ে বলটা যে তুলে দিয়েছিলেন সিমনই। এমন সুযোগ হাতছাড়া করেননি রিয়াল মাদ্রিদ তারকা। ব্যবধান ২-১ করে ব্রাজিল। এই ব্যবধানেই বিরতিতে যায় দুই দল।বিরতির পর রাফিনিয়াকে তুলে বিস্ময়-বালক এনদ্রিককে মাঠে নামান দরিভাল। কিছু দিন পর যে মাঠটি তাঁর আপন ঠিকানা হতে যাচ্ছে, সেই বার্নাব্যুকে মাতিয়ে তুলতে এনদ্রিকের সময় লাগল মাত্র ৪ মিনিট। ৫০ মিনিটে বক্সের ভেতর দৃষ্টিনন্দন এক ভলিতে গোল করে ব্রাজিলকে ২-২ সমতায় ফেরান ১৭ বছর বয়সী এই ফুটবলার। এর আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রাজিলের জয়ে একমাত্র গোলটিও করেছিলেন এনদ্রিক।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct