বিশেষ প্রতিবেদক, আকড়া, আপনজন: সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ হাইকোর্ট এক রায় এ মাদ্রাসাকে অসংবিধানিক বলে ঘোষণা করেছে। আদালতে আর্জিতে অভিযোগ করা হয়েছিল, উত্তরপ্রদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড গঠিত হয়েছে শুধুমাত্র মুসলিম পড়ুয়াদেরকে লক্ষ্য করে। সেখানে অন্য ধর্মের পড়ুয়াদের ধর্মীয় সংস্কৃতি বিপন্ন। সেই রায়ের পর পশ্চিমবঙ্গে কিছু হাই মাদ্রাসা ভিন্ন পথে এগোতে চাইছে। হাই মাদ্রাসায় অন্য ধর্মের পড়ুয়ারা ব্রাত্য বা অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয় সেই ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। তুলে ধরতে চাইছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’। তাই বিভেদমূলক শক্তির অঙ্গুলি হিলনে অপ্রীতিকর ঘটনা প্রবাহকে দূরে ঠেলে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে মধুর সম্পর্ক ও সম্প্রীতিকে বজায় রাখতে এক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে কলকাতা সন্নিহিত মহেশতলার আকড়া হাই মাদ্রাসায। আকড়া হাই মাদ্রাসা দীর্ঘদিন ধরে ইসলামী সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহন করে আসছে। এখানে মুসলিম শিক্ষকের পাশাপাশি হিন্দু শিক্ষক-শিক্ষিকারও রয়েছেন। এবার সেখানে দুই সংস্কৃতির মেল বন্ধনের চিত্র ফুটে উঠেছে হিন্দু ধর্মের অন্যতম আনন্দ উৎসব দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে। দোল উপলক্ষে দুই সম্প্রদায়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে এক অভূতপূর্ব মেলবন্ধন এক নজির সৃষ্টি করল যেটাকে আকড়া মাদ্রাসার শিক্ষক মহল সম্প্রীতির নির্দশন বলে মনে করছে। দোলের দিন আকড়া হাই মাদ্রাসার শিক্ষক শামসুর, মতিয়ার ও বেগম রওশন মিতারা যেমন হিন্দৃু শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে বসন্ত উৎসবে যোগ দিয়েছেন, তেমনি সুজিত, পীযুষ, শান্তনু, অর্পিতা, নবনীতা, অর্পর্ণা ভঞ্জ ও শর্মিষ্ঠারা মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠানে সমানভাবে অংশগ্রহণ করে সম্প্রীতির বাতাবরণ তৈরি করেন। অন্যদিকে, নিজ সন্তানের জন্মদিন উপলক্ষে সন্তান সমতুল্য মাদ্রাসার সকল ছাত্র-ছাত্রীদের মাংস ভাত ও আইসক্রিম খাইয়ে যে শিক্ষিকাটি সবচেয়ে বেশি খুশি ও তৃপ্তি লাভ করেন, তিনি এই মাদ্রাসার শিক্ষিকা তনুশ্রী সাহু। তবে শিক্ষক-শিক্ষিকারা সকলে যাতে একই পরিবারভুক্ত বলে মনে করেন এই বোধ সৃষ্টি করাতে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মোফাজ্জল আহমেদ সাহেবের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে বলে অাকড়া হাই মাদ্রাসার এক শিক্ষক জানিয়েছেন। রাজ্যের হাই মাদ্রাসায় দোল উৎসব পালন করার ‘কৃতিত্বের’ অন্যতম দাবিদার হয়ে উঠল আকড়া হাই মাদ্রাসা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct