সুব্রত রায়, কলকাতা ও সারিউল ইসলাম, ভগবানগোলা, আপনজন: অবশেষে ৪২ ঘণ্টা পর বের করা হল আরো এক মৃতদেহ। ফলে গার্ডেনরিচে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ১০। এদিকে গার্ডেনরিচে যে নির্মীয়মান বহুতল বাড়িটি ভেঙে পড়েছে সেই জমির মালিক সারফারাজকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কারণ অভিযোগ হল, সেখানে পুকুর ছিল আর সেটি বুঁজিয়ে তাড়াহুড়ো করে তৈরি হয়েছিল বহুতল। রবিবার রাতে নির্মীয়মান বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনার প্রায় ৪২ ঘন্টা পার হয়ে গিয়েছে। সোমবার রাত পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছিল ২৬ জনকে। ১৭ জন আহত। ৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল বলে জানিয়েছিল। নিখোঁজ ছিলেন অনেকেই। সেই মতোই মঙ্গলবার সকাল থেকেই ফের জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী উদ্ধার কাজ শুরু করেছিল। দুপুর থেকে শোনা যাচ্ছিল একজনকে লোকেট করা গিয়েছে। কিন্তু বাকি আরো দু থেকে তিনজন ভেতরে আটকে রয়েছে। গতকাল থেকেই খোঁজ ছিল না শেরু নামে এক ব্যক্তির। যিনি এখনো নিখোঁজ। উল্লেখ্য, কলকাতা পুরসভার তরফ থেকে গার্ডেনরিচ থানায় ৩ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বাড়ি ভাঙার ঘটনায় কলকাতা পুরসভার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের তরফ থেকে গার্ডেন রিচ থানায় তিন জনের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এই তিন জন হলেন ১. মহম্মদ ওয়াসিম, ২. মহম্মদ নাসিম, ৩. রাজা। এদের মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন একজন, তার নাম মহম্মদ ওয়াসিম। বাকি দুজনকে এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।৪০১এ ধারা দেওয়া হয়েছে । অবৈধ নির্মাণের জন্য কলকাতা পৌরসভা অ্যাক্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ধৃত প্রোমোটার পুলিশের জেরায় আরও জানিয়েছেন, এই বিল্ডিং-এর কাজ চলছিল। ওপরে দেওয়াল গাঁথুনির কাজ চলছিল। মহম্মদ ওয়াসিমকে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আলিপুর আদালত।এদিকে মঙ্গলবার সন্ধে-রাতে এই নিয়ে লালবাজারে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। উপস্থিত ছিলেন সমস্ত ডিভিশনাল ডিসি সহ পুলিশের সব শীর্ষকর্তারা। বেআইনি নির্মাণ রুখতে একাধিক নির্দেশ দিয়েছেন কমিশনার।অন্যদিকে, নতুন করে বহুতলে ধস থেকে মৃতদেহ উদ্ধার হয়, তাদের নাম আব্দুল্লাহ হোসেন ও নাসিমুদ্দিন শেখ। নাসিমুদ্দিনের বাড়ি মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা থানার ছক্কানগর এলাকায়। প্রায় তিন মাস আগে নাসিমুদ্দিনের শ্যালিকার সঙ্গে বিয়ে করেন হুগলির আবদুল্লাহ হোসেন। বিয়ের পর থেকে রানিতলা থানার জীবনপুরে শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন আবদুল্লাহ। গত সপ্তাহ তিনেক আগে দুই ভাইরা ভাই একসঙ্গে কলকাতার উদ্দেশ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে রওনা দেয়। গর্ডেরনরিচের সেই বহুতলের তিন তলায় ঘুমিয়ে ছিলেন তারা। রবিবার গভীর রাতে সেই বহুতল ভেঙে পড়ে। মৃত নাসিমুদ্দিনের গর্ভবতী স্ত্রী সহ তিনটি সন্তান রয়েছে। অন্যদিকে আব্দুল্লাহর পরিবারে রয়েছে সদ্য তিন মাস আগে বিয়ে করা স্ত্রী। মৃত্যুর খবর আসার পর থেকে কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবারের সদস্যরা। স্বামীর মৃত্যুর পর কিভাবে সংসার চালাবে তা নিয়ে চিন্তিত দুটি পরিবার। প্রশাসনের কাছে আর্থিক সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন তারা। অন্যদিকে একই সঙ্গে দুই মেয়েকে স্বামী-হারা হতে দেখে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে মৃত নাসিমুদ্দিন ও আবদুল্লাহর শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct