আপনজন ডেস্ক: ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ৪ : ৩ লিভারপুল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড–লিভারপুল ম্যাচ কেন মহারণতুল্য কিংবা ইংলিশ ফুটবলের সবচেয়ে জনপ্রিয় লড়াই, এ নিয়ে নতুন করে ব্যাখ্যা দেওয়ার কিছু নেই। এরপরও সদ্য কোনো উদাহরণ যদি দিতে হয়, তাহলে বিবিসি অনলাইনে আজকের ম্যাচে ১ লাখেরও বেশি পাঠকের একই সময়ে সরাসরি ধারা বিবরণীতে যুক্ত থাকাই এর মাহাত্ম্য বোঝাতে যথেষ্ট। অন্য সংবাদমাধ্যমগুলোর হিসাব না হয় বাদই থাকল। ‘স্বপ্নের রঙ্গমঞ্চ’ ওল্ড ট্রাফোর্ডে আজ হলোও এক ধ্রুপদি লড়াই। বহু বাঁক বদলের সেই লড়াইয়ের নায়ক ‘অচেনা’ আমাদ দিয়ালো। ম্যাচের ১২১ মিনিটে, মানে অতিরিক্ত সময়ের যোগ করা সময়ে আইভরি কোস্টের এই তরুণের গোলেই লিভারপুলকে ৪–৩ ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।৭ গোলের থ্রিলার শেষ হওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে সেমিফাইনালের ড্রও অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ইউনাইটেড পেল আসরের চমক কভেন্ট্রি সিটিকে। আরেক ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি খেলবে চেলসির বিপক্ষে। শেষ চারের দুটিই ম্যাচই হবে আগামী ২০ এপ্রিল।দুই দফা পিছিয়ে পড়া ইউনাইটেড ম্যাচটা আরও আগেই জিতে যেতে পারত। কিন্তু নির্ধারিত ৯০ মিনিট পর যোগ করা সময়ে লিভারপুল গোলকিপার কুইভিন কেলেহারকে একা পেয়েও অবিশ্বাস্য মিস করেন মার্কাস রাশফোর্ড। ২–২ সমতায় থাকা ম্যাচটা তাই গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।ম্যাচের ১০৫ মিনিটে হার্ভি এলিয়টের গোলে ৩–২ ব্যবধানে এগিয়ে যায় লিভারপুল। তবে ৭ মিনিট পরেই সমতা ফিরিয়ে আগের ভুলের ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করেন রাশফোর্ড। রোমাঞ্চের ডালি বিছানো ম্যাচের নিষ্পত্তি টাইব্রেকারে হতে চলেছে বলে যখন মনে হচ্ছিল, ঠিক তখনই ওল্ড ট্রাফোর্ডকে উৎসবের উপলক্ষ এনে দেন দিয়ালো।ইউনাইটেড খেলোয়াড়দের সেমিফাইনালে ওঠার আনন্দ
অনেকটা আক্রমণের ধারার বিপরীতে বল পেয়ে ছুটতে থাকেন আলেহান্দ্রো গারনাচো। তাঁর সামনে কনোর ব্রাডলি বাধা হয়ে দাঁড়ালেও চারপাশ ছিল অরক্ষিত। সুযোগ বুঝে গারনাচো বল বাড়ান তাঁর বাঁ দিকে থাকা দিয়ালোকে। বক্সে ঢোকার পরেই বাঁ পায়ের কোনাকুনি শটে গোলকিপার কেলেহারকে ফাঁকি দেন দিয়ালো।৮৪ মিনিটে রাফায়েল ভারানের বদলি নামেন ‘অচেনা’ এই তরুণ। ২০২১ সালে ইউইনাইটেডে যোগ দিলেও বেশিরভাগ সময় রেঞ্জার্স ও সান্ডারল্যান্ডে ধারে খেলেই কাটিয়েছেন। দীর্ঘ দিন হাঁটুর চোটে ভোগা এই উইঙ্গার এ মৌসুমে আজ নিয়ে খেলতে নামার সুযোগ পেলেন মাত্র চতুর্থবার। আজই সম্ভবত পেয়ে গেলেন ক্যারিয়ারের সবচেয়ে মূল্যবান গোলটা।এমন বড় মঞ্চে জয়সূচক গোল পাওয়ার পর যে কারও বুনো উদ্যাপনে মেতে ওঠার কথা। দিয়ালো তেমনটা না করলেও আনন্দে জার্সি খুলে ফেলেন। নিয়ম অনুযায়ী, রেফারি তাঁকে হলুদ কার্ড দেখান।এর কিছুক্ষণ আগে ভার্জিল ফন ডাইককে দ্রুত ফ্রি কিক নিতে বাধা দিয়ে দেখেন আরেক হলুদ কার্ড। দুই হলুদ কার্ড মিলিয়ে লাল কার্ড হওয়ায় মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে। কিন্তু এর আগে কাজের কাজটা করে ফেলায় মাঠ ছাড়ার সময় বীরোচিত সম্মানই পেয়েছেন। সমর্থকেরা দাঁড়িয়ে করতালি দিয়েছেন, টানেল ধরে যাওয়ার সময় সাপোর্ট স্টাফদের সদস্যরা পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন। ম্যাচের ১০ মিনিটে স্কট ম্যাকটমিনের গোলে ইউনাইটেডই এগিয়ে গিয়েছিল। তবে অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার ও মোহাম্মদ সালাহর গোলে ২–১ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় লিভারপুল। ৮৭ মিনিটে আন্তোনির গোলে ইউনাইটেড সমতা ফেরালে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। এর পরের গল্পটা তো আগেই জানানো হয়েছে।এ হারে লিভারপুল শুধু এফএ কাপ থেকে ছিটকেই পড়ল না, ইয়ুর্গেন ক্লপকে বিদায়ী উপহার হিসেবে মৌসুমের সম্ভাব্য সব শিরোপা এনে দেওয়ার যে আশাবাদ খেলোয়াড়েরা ব্যক্ত করেছিলেন, সেই সম্ভাবনাও শেষ হয়ে গেল।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct