আপনজন ডেস্ক: স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গাজা উপত্যকা থেকে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে জোর করে তুলে নিয়ে গেছে ইসরায়েলি বাহিনী। বন্দি করে রেখেছে তাদের ভয়ংকর কারাগারে। যেখানে ফিলিস্তিনিদের ওপর ভয়াবহ শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি মানসিক নিপীড়নও চালানো হয়। বন্দিদের হাতকড়া পরিয়ে, চোখ বেঁধে ধাতব খাঁচায় আটকে রাখা হয়। দেওয়া হয় না কোনো খাবার-পানি। সেখানেই আবার লোহার বার, বৈদ্যুতিক শকসহ বন্দিদের ওপর কুকুর লেলিয়ে অত্যাচার চালায় বর্বর ইসরায়েলি বাহিনী। সম্প্রতি ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দিদের কণ্ঠে এমনি ভয়াবহ নির্যাতনের কথা জানা গেছে। মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনিরা সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-কে জানিয়েছেন, কীভাবে তাদের কুকুর ও বিদ্যুৎ দিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল। প্রহসনমূলক মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কীভাবে অপমানজনক ও অবমাননাকর পরিস্থিতিতে রাখা হয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক মুক্তিপ্রাপ্ত একজন ফিলিস্তিনি তার তিক্ত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী গাজার একটি স্কুল থেকে তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। তারপর তাকে হাতকড়া পরিয়ে চোখ বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর টানা ৪২ দিন তাকে ধাতব খাঁচায় আটকে রাখা হয়। সেখানেই তাকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছিল। এতেই থেমে থাকেনি ইসরায়েলের হিংস্র সেনারা। কুকুর দিয়ে আঁচড় ও কামড়ও দেওয়া হয়েছিল তাকে। অন্যান্য অনেক পুরুষও বলেছেন তাদের সঙ্গে একই আচরণ করা হয়েছিল। এমনকি তাদের কোনো প্রকারের খাবার অথবা পানি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। মোয়াজ মুহাম্মদ খামিস মিকদাদ যাকে ডিসেম্বরে গাজা শহরে বন্দি করা হয়েছিল এবং ৩০ দিনেরও বেশি সময় ধরে আটক রাখা হয়েছিল। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী কাউকেই রেহাই দেয়নি। ১৪ বছর বয়সি ছোট ছেলে থেকে শুরু করে ৮০ বছর বয়সি সব পুরুষকে নির্যাতন করা হয়েছে।
মুক্তিপ্রাপ্ত অন্য এক ব্যক্তি মিডল ইস্ট আই-কে বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার চোখ বেঁধে তাকে উলঙ্গ করা হয়েছিল। তাকে বারবার মারধর করা হয়েছিল এবং তার শরীরে বারবার সিগারেটের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল। তিনি হিমায়িত অবস্থায় কয়েকদিন ধরে বন্দি থাকার কথাও বর্ণনা করেছিলেন। যেখানে তাকে ঘুমাতে দেওয়া হয়নি। এমনকি পানির অনুরোধ করার পরে তার হাতে সেনাদের প্রস্রাবভর্তি বোতল তুলে দেওয়া হয়। বন্দিদের কাছে হামাসের সুড়ঙ্গ সম্পর্কে জানতে চাইলে ‘আমি জানি না’ উত্তর এলেই এমন নির্যাতন চালায় ইসরায়েলি সেনারা। এমনই বেশ কয়েকজন সাবেক বন্দির সঙ্গেও কথা বলেছেন। যারা একই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন।শুক্রবার নির্যাতনের বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টার অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডস বলেছেন, তিনি ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর ইসরায়েলের নির্যাতন ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তদন্ত করছেন। মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, গাজা উপত্যকার হাসপাতালে অভিযান চালানোর পর চিকিৎসকদের মারধর ও অপমান করেছে ইসরায়েলি সেনারা। চিকিৎসকরা বিবিসিকে বলেছেন, গত মাসে হাসপাতালে অভিযানের পর সেনারা তাদের চোখ বেঁধে আটকে রেখে বারবার মারধর করেছে।নাসের হাসপাতালের ডাক্তার আহমেদ আবু সভা তাকে এক সপ্তাহ আটকে রাখার বর্ণনা দিয়েছেন। বলেছেন, তার ওপর একটি কুকুর লেলিয়ে দেওয়া হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct